দেশ টিভিতে সংবাদ প্রচারের পর অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলি

এম এস সাগর,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

দেশ টিভিতে সংবাদ প্রচারের পর নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ধান সংগ্রহ করাসহ দুই কৃষকের অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানকে বদলির বিষয়টি বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুল কাদির খান এবং নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আহাদ।

এর আগে অভিযোগ ওঠে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ধান সিন্ডিকেট চক্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক প্রতি ৩ মেট্রিক টন নিম্নমানের ধান সংগ্রহে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে গুদামে ১৩-১৪ মিটারের পরিবর্তে বিধি বহির্ভূতভাবে ১৫-১৬ মিটার ধান প্রায় ৪শ’ মেট্রিক টন ক্রয় করেছেন। নাগেশ্বরী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমান নির্বাচিত লটারির কৃষক হয়ে গত ১৩ জুলাই নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে সারাদিন অপেক্ষার পরে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানের নির্দেশে কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান ১ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে সন্ধ্যায় ধান সংগ্রহ করেন।

ওই দুই কৃষক ধানের চেক নিতে গত ১৭ জুলাই খাদ্য গুদামে গেলে কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান বিভিন্ন টালবাহনা করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে গত ১৯ জুলাই সকালে গুদামে ধানের চেক নিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানের নির্দেশে কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান প্রতি ৩ মেট্রিক টন ধানের চেক নিতে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমান ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গত ১৯ আগস্ট সংবাদকর্মীদের গুদামে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘুষের বিষয়টি প্রমাণ করেন।

গত ২০ জুলাই খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান তার কর্মচারীদের মাধ্যমে দুই কৃষককে ধান চেক দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যান। সাজেদুর রহমান তার গোপন কক্ষে নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ধানের চেক দিয়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়াসহ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ বিষয়ে ওই দুই কৃষক কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

পরে গত ২৪ জুলাই দেশ টিভিতে সংবাদ প্রচারের পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে সত্যতা পান। রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক গত ৩০ আগস্ট অভিযুক্ত নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানকে বদলি করেন এবং ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য অফিসের খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করতে চিঠি জারি করেন। গত ৩০ আগস্ট রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য অফিসের খাদ্য পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নতুন করে যোগদান করেন।

অভিযোগ উঠেছে, নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে গত ৩০ আগস্ট বদলি হওয়ার পরও নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামকে এখনও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারেননি। মূলত অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান কৃষকের পরিবর্তে সিন্ডিকেট চক্র ব্যবসায়ীদের কাছে ধান ১৩-১৪ মিটারের পরিবর্তে বিধিভঙ্গ করে ১৫-১৬ মিটার ধান প্রায় ৪শ’ মেট্রিক টন ক্রয় করাসহ নিন্মমানের পঁচা চাল গুদামে মজুত করেছে।

নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামের নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামে ৩০ আগস্ট যোগদান করেছি। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর আমি গুদামের সবকিছুই দেখে-শুনে দায়িত্ব বুঝে নেব। নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আহাদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নাগেশ্বরী খাদ্য গুদামে নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুল কাদির খান বলেন, নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমানকে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ৩০ আগস্ট বদলি করা হয়েছে। আমি নবাগত হিসেবে কুড়িগ্রামে যোগদান করেছি। বিধি মোতাবেক খাদ্য বিভাগ পরিচালনা করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *