December 22, 2024, 5:59 am
এম এ আলিম রিপন,সুজানগর(পাবনা)ঃ পাবনার সুজানগরে গ্রাহকদের এক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চিনাখড়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ৩০ লাখ টাকা জমা রেখে প্রতারিত হওয়া উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের আন্ধারকোঠা গ্রামের মামুন হোসেনের স্ত্রী শোভা আক্তার নামে এক নারী গ্রাহক ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চিনাখড়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, চিনাখড়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার উদ্যোক্তা আব্দুল আালিম গ্রামের সাধারণ মানুষ ও প্রবাসীর পরিবারের লোকজনকে টার্গেট করে বলতেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে লাভ বা সুদ কম হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা না রেখে তার কথামতো রাখলে লাখ প্রতিমাসে হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাবে। আর এ লোভে পড়েই লোকজন টাকা দিয়েছে তাকে। অভিযুক্ত আব্দুল আলিম গ্রাহকদের জমা দেওয়া লাখ লাখ টাকার বিপরীতে সুদ বাবদ প্রতিমাসে নির্ধারিত টাকাও অনেকদিন ধরে পরিশোধ করে আসছিলেন। জমার রশিদ না দিয়ে টাকা জমা নিয়ে লাভের অংশ পরিশোধ করে আসছিলেন তিনি। ভালো আচরণ ও সঠিক লেনদেন করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন। ফলে এলাকার লোকজন বিশ্বাস করতেন তাকে। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তিনি। শতাধিক গ্রাহক এক কোটির বেশি টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি মাসে তারা লাখে এক হাজার টাকা করে সুদ পেতেন। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে প্রতারিত গ্রাহকেরা ব্যাংকটির কার্যালয়ে ভিড় করছেন। এবং প্রতারক আব্দুল আলিমকে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায় করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তাঁরা। এ ঘটনায় আব্দুল আলিম এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। একাধিকবার কল করে আব্দুল আলিমের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পাবনা শাখার সিনিয়র সেলস ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে হয়। বিষয়টি ব্যাংক উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছি। এ ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে গিয়েও গ্রাহকদের জানিয়েছেন। উদ্যোক্তারা প্রতারণার মাধ্যমে জমা স্লিপ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের স্লিপ ব্যবহার করার কোনো নিয়ম নেই। গ্রাহকদের মধ্যেও কেউ কেউ অতিরিক্ত লাভের জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি। সম্ভবত ওই এজেন্ট ব্যক্তিগতভাবে, ব্যক্তিগত নথিপত্র ও চেক ব্যবহার করে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,২০১৬ সালে এজেন্ট শাখাটি খোলা হয়। সাফিনএন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আলিম এটি নেন। আমাদের ওই এজেন্ট শাখায় প্রায় ১২০০ জনের মতো গ্রাহক রয়েছেন। কিন্তু কিছু গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকের উদ্যোক্তা আব্দুল আলিম নিজে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন।
স্থানীয় দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান বুধবার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রাহকদের প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই আব্দুল আালিম । বেশ কয়েকদিন ধরে আব্দুল আলিম এজেন্ট ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকেরা ও ব্যাংকের পাবনার অফিসারেরা বিষয়টি আমাকে জানানোর পর কয়েক দিন ধরে এজন্টের প্রোপাইটার আব্দুল আলিমের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনিগোপনে বিদেশে চলে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। প্রতারিত লোকজন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করছে। আমি সবাইকে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিচ্ছি।
গ্রাহকদের দাবি, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওই শাখায় টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন তাঁরা। ব্যাংক থেকে জমা রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা আব্দুল আলিম এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন।
মোছাঃ মর্জিনা খাতুন নামে এক নারী গ্রাহক বলেন, ১৬ লাখ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসারের বেশির ভাগ খরচ চলত। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম, আমার হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। স্থানীয় দুলাই ইউনিয়নের আন্ধারকোঠা গ্রামের সাইদুল আসিলামের স্ত্রী সালমা খাতুন ১৫ লাখ টাকা রেখেছেন ব্যাংকটিতে। তিনি বলেন, ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখি, হিসাবে কোনো টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত। কী হবে জানি না।চিনাখড়া গ্রামের রুবেল হোসেন বলেন, তিনি ওই ব্যাংকের চিনাখড়া এজেন্ট শাখায় ৯ লাখ টাকা রেখেছিলাম । এসে শুনছি, টাকা নেই। এভাবে হলে কীভাবে আমরা টাকাপয়সা সঞ্চয় করব?
এ বিষয়ে বুধবার সুজানগর থানার ওসি জালাল উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা) প্রতিনিধি।