December 21, 2024, 4:24 pm
বি এম মনির হোসেনঃ-
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা পদ-পদবীধারী নেতাদের নাম দিয়ে সদ্য ঘোষণা করা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা। দলের ভিতরে ও বাইরে হাস্যরসের খোরাক হয়েছে বিএনপি।আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দেয়া এবং বিএনপির এক নেতার অনুসারীদের নিয়ে গঠন করা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে “মৌসুমী” আখ্যায়িত করে বিএনপি’র অভ্যন্তরে ও বাইরে বইছে তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভ। বিএনপি’র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে সদ্য ঘোষিত বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে নাম উঠে আসা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।এদিকে সাংগঠনিকভাবে বৈধতা হারানো উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা কিভাবে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেছেন তা নিয়ে খোদ বিএনপি’র উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে চলছে জোর সমালোচনা,বইছে ক্ষোভ।
দলের দ্বায়িত্বশীল একাধিক ত্যাগী নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, সদ্য ঘোষিত ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারীদের নিয়ে একটি পকেট কমিটি। যারা আন্দোলন সংগ্রামে নেই কোথাও।এরা “স্বপন আছে যেখানে’ ‘আমরা আছি সেখানে” এই শ্লোগানে বিশ্বাসী। কেন্দ্রীয় নেতা ও বরিশাল-১ আসনে বিএনপির মনোয়নয় প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও আকন কুদুসুর রহমানের অনুসারীদের স্থান মেলেনি ঘোষিত কমিটিতে। অনুমোদিত ইউনিয়ন বিএনপির আহাবায়ক কমিটিকে অবৈধ আখ্যাও দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুক) আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে রাজিহার, বাকাল, গৈলা ও রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ওই কমিটি অনুমোদনে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে কবির হোসেন তালুকদার ও সদস্য সচিব হিসেবে মোল্লা বশির আহম্মেদ পান্নার। বিএনপির ওই দুই নেতার স্বাক্ষরিত কমিটিতে তাদের নিজের ইউনিয়ন গৈলার আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির তালুকদারকে বিএনপির ২৪ নম্বর সদস্য। রত্নপুর ১নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের প্রবীন রাজনীতি করা তিন বারের সাবেক ইউপি সদস্য সুরেশ বিশ্বাসকে দেয়া হয়েছে ১৪ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদে। ২৬ আগষ্ট গৈলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মনির তালুকদার ও রত্নপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা সুরেশ বিশ্বাস লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন তারা দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে পারিবারিকভাবেই জড়িত।বিএনপি একটি গ্রুপ অসৎ উদ্যেশ্য নিয়ে তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতেই তাদের নাম বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভূক্তি করেছে। বিএনপির ২৩ আগস্ট ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তাদের নাম ব্যবহার করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ওই বিবৃতিতে তারা ভবিষ্যতে বিএনপি এহেন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ব্যক্ত করেছেন।ওই নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেন- তাদের দল করার মত কোন নেতা-কর্মী নেই বলেই বিএনপি এখানে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তা না হলে তারা আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম দিয়ে কমিটি ঘোষণা করতেন না। আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ৩নং যুগ্ম আহ্বায়ক, উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন- সদ্য ঘোষিত কমিটি একটি অবৈধ পকেট কমিটি। কারণ, উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে সকল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা ছিল। ৬০ দিন পরে আহ্বায়ক কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।তারপরেও ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষনা করা আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কমিটির সদস্যরা বরিশাল জেলা সদরে ঝাড়ু – মিছিল পর্যন্ত করেছে।
ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তার সবাই মৌসুমী রাজনীতি করা লোক। কোন ত্যাগীরা এখানে স্থান পায়নি। এটা সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের পকেট কমিটি।কবির হোসেন তালুকদারকে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন- আহ্বায়ক কবির তালুকদার ও সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহম্মেদ পান্না স্থানীয় কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়।কবির তালুকদার দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থতার জন্য ঢাকায় চিকিৎিসাীন এবং পান্না ঢাকায় ব্যবসায় নিযুক্ত। তারা বিপুল পরিমানে অর্থ বানিজ্যর মাধ্যমে এই পকেট কমিটি অবৈধভাবে অনুমোদন করেছেন।অভিযোগ মাহাবুব আরও বলেন- পান্না মোল্লার নিজ বংশিয় লোকজন আওয়ামী লীগের এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সাথে দেখা করেছেন। যাদের আওয়ামী লীগে পদায়নও করা হয়েছে। এরা বিএনপির কোন আন্দোলন সংগামেও জড়িত থাকে না।এমনকি নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানী করেছে। নির্বাচনের জন্য মাত্র পাঁচ দিন সময় পেয়েছিলন বিএনপির প্রার্থী। তারপরেও এই সকল নেতারা বিএনপির পক্ষে কোন কাজতো করেই নি বরং অন্য দলকে ভোট দেয়ারও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি ঘোষনা করা সকল কমিটি অবৈধ দাবি করে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন- দলের মহাসচিব মীর্জ ফকরুল ইমলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন যে, নির্বাচনের আগে আর কোন নতুন কমিটি নয়। বরং যারা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই সকল কিছু মনিটরিং করবেন। তাই দলের মহাসচিবের নির্দেশও অমান্য করেছন তারা। এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক দাবিদার কবির হোসেন তালুকদার বলেন- যদি আওয়ামী লীগের কোন লোকের নাম বিএনপির কমিটিতে এসে থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে বাদ দেয়া হবে। কমিটির বৈধতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বিএনপি একটি বড় দল এখানে দুই মাসের মধ্যে সকল কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই কমিটি গঠনে একটু দেরী হলে তাতে অসাংগঠনিক হবার কিছু নেই। সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারীদের নিয়ে অর্থ বানিজ্যর মাধ্যমে পকেট কমিটি করা প্রসঙ্গে কবির তালুকদার বলেন- বড় দলে গ্রুপিং থাকেই। যারা এসব কথাবার্তা বলে তারা অসাংগঠনিক কথা বলে।