সুজানগরের কাদোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় সেবা বঞ্চিত ৫ হাজার মানুষ

এম এ আলিম রিপন ঃ পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাদোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে ১৩দিন ধরে। এতে করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই অঞ্চলের ৫ হাজারের অধিক মানুষ। কাদোয়া এই ক্লিনিকের উপর নির্ভরশীল সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল কাদোয়া-উপেন্দ্রনগর-কাকিয়ানসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের হাজারো নারী-পুরুষ। এখানে নারীদের গর্ভকালীন,প্রসবকালীন,শিশুস্বাস্থ্য,পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন স্বাস্থাস্থ্য সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি চিত্রা রানী ভৌমিকের সাথে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বিরোধের জের ধরে গত ১৩ দিন ধরে ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়, কমিউনিটি ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এ সময় সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা যায় ৪৫ বছর বয়সী ছালমা খাতুন নামে এক নারীকে। ক্লিনিকের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, টানা তিনদিন এসেছি। প্রতিদিনই ফিরে যেতে হয়েছে। যদি ক্লিনিক বন্ধই থাকে তাহলে এর দরকারটা কি। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন জানান, ক্লিনিকটি বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা লোকজন হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির এক সদস্য মারধর করেছে এমন অভিযোগে গত ৩১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি নেন সিএইচসিপি চিত্রা রানী ভৌমিক। কিন্তু ক্লিনিকের চাবি তার কাছেই রেখে দিয়েছেন। এক সপ্তাহের ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও শুধুমাত্র নিরাত্তার অজুহাত দেখিয়ে এখন পর্যন্ত ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি চিত্রা রানী ভৌমিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এমনকি তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস করার নির্দেশনা দিলেও তিনি সেই নির্দেশনাও অমান্য করে চলেছেন।এমনকি বন্ধ ক্লিনিকের তালার চাবিটিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিচ্ছেন না। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সানজিদা মুজিব জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরছি কাদোয়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি এ সপ্তাহের মধ্যেই চালু হবে। এবং স্থানীয় এলাকাবাসী ওই ক্লিনিক থেকে সেবা নিতে পারবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে চিত্রা রানী ভৌমিকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। মানববন্ধন চলাকালে চিত্রা রানী ভৌমিক একজন ফাঁকিবাজ,প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে তাকে অন্যত্র বদলী করাসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন,কাদোয়া-উপেন্দ্রনগর-কাকিয়ানসহ সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের সুদ কারবারী হিসেবে পরিচিত চিত্রা রানী ভৌমিক একজন প্রতারক নারী, সে কখনো নিয়মিত কমিউনিটি ক্লিনিকে অফিস করেন না। সেবা গ্রহিতারা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে গেলে তাদের সাথে খারাপ আচারণ করেন। এবং সেবা গ্রহিতারা ঔষধ নিতে গেলে টাকা দাবি করে থাকেন। সরকারি ঔষধ সেবা গ্রহিতাদের না দিয়ে তিনি সেই ঔষধ বাইরের দোকানে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া সরকারি চাকুরী দেবার কথা বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। সেই টাকা তার কাছে চাইতে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ সেই সকল ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করার হুমকি প্রদান করেন চিত্রা রানী বলেও অভিযোগ করেন বক্তারা। তবে চিত্রা রানী ভৌমিক নিজেকে নির্দোষ দাবী করে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে জানান। অপরদিকে কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে কাদোয়া কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল মতিনের নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন চিত্রা রানী ভৌমিক । তবে অভিযুক্ত আব্দুল মতিন নিজেকে নির্দোষ দাবী করে জানান, সম্প্রতি চিত্রা রানী ভৌমিক স্থানীয় আব্দুল আলিমের স্ত্রী নাজমা খাতুনের ছোট বোন আন্না খাতুনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভিজিটর পদে ১০ লাখ টাকার চুক্তির বিনিময়ে চাকুরী দেবার কথা বলে ১লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু চাকুরী দিতে পারে নাই। এখন ক্ষতিগ্রস্থ ওই পরিবারের কাছ থেকে গ্রহনকৃত টাকাও আর ফেরত দিচ্ছেনা। বিষয়টি তারা আমাকে অবগত করলে আমি এদিন ওই ক্লিনিকে গিয়ে বিষয়গুলো তার কাছে জানতে যাই। এ সময় চিত্রারানীকে মারধরের কোন ঘটনাই ঘটেনি ।

এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *