হেলাল শেখঃ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থেকে পোশাক শ্রমিক রবিউল ইসলাম (৩০) কে অপহরণ করে ধামরাই নিয়ে ছাত্র শিবিরের মতো হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। পরে বস্তাবন্দী অবস্থায় দেখতে পেয়ে ধামরাই থানা পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা, পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (৪ আগস্ট ২০২৩ইং) দুপুরে আশুলিয়ার বাইপাইল-টঙ্গী সড়কের জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে রবিউল হত্যাকারী দোষীদের গ্রেফতার করে তাদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও পোশাক শ্রমিকরা। এসময় নিহতের তিন বছরের শিশু ছেলেটি ইয়ামিন তার বাবার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর সাথে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলো।
গত সোমবার (৩১ জুলাই ২০২৩ইং) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই ভাড়ারিয়া বাজার এলাকায় আরিফের পুকুরপাড় থেকে ভিকটিম রবিউল ইসলামের লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ ও স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ধামরাই থানা পুলিশ ও আশুলিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযানে ৪জনকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আলম ভুঁইয়া (৫৫), সেলিম ভুঁইয়া (৪০), আজাহার ভুঁইয়া (২৪), ফারুক ভুঁইয়া (৩৫)। র্যাব-৪ এর অভিযানে এই মামলার আরো এক আসামী সুমনকে আটক করে ধামরাই থানায় সোপর্দ করেছেন। মোট ৫জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়েছে আসামীদেরকে।
পুলিশ জানায়, নিহত রবিউল ইসলাম আশুলিয়ার গাজিরচট চারালপাড়ার আলতাফ হোসেনের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার ইউনিক বাসস্ট্যান্ডে আলম ভুঁইয়ার মালিকানাধীন ভবনের একটি পোশাক কারখানায় কন্টাকে কাজ করতেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাস্তার পাশে একটি গাড়ি থেকে হুট করে বস্তার মত কিছু পুকুরের পাশে ফেলে দেয় গাড়িতে থাকা ৭-৮জন ব্যক্তি, লোকজন দেখে দ্রুত পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর লোকজন এসে দেখেন বস্তার মধ্যে মানুষ, তখনও ভিকটিম জীবিত ছিলো, বস্তার ভেতরে নারাচারা করছিলো সে। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে পথেই তার মৃত্যু হয়। ভিকটিমের পায়ের রগ কাটা, দুই পা ভাঙা ও হাতের সিরা কাটা রয়েছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক, (এসআই) মাসুদ আল মামুন, (এসআই) নয়ন, ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পান্নু মিয়াসহ একদল চৌকস পুলিশ অফিসার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আশুলিয়ার গাজিরচট ভুঁইয়া বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫জনকে গ্রেফতার করেন। ৫জনের মধ্যে একজন এই ঘটনায় জড়িত না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, এ ব্যাপারে নিহতের বোন বাদী মামলা করেছেন। ০১/০৮/২০২৩ইং লাশ ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের চারালপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে রবিউলকে দাফন করা হয়। এ দিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা রবিউল ইসলামের হত্যাকারীদের সর্বচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ও র্যাব কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়। উক্ত বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করলে হয়তো দেখা যাবে এই হত্যা কান্ডের সাথে যারা জড়িত, তারা হয়তো জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
শনিবার উক্ত ব্যাপারে নিহতের বোন ফারজানা আক্তার ঝিলিক বলেন, ঘটনার দিন রাতেই ঘটনাস্থল ধামরাই থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে, এ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব ৫জনকে গ্রেফতার করেছেন, বাকি আসামীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি। পুলিশ ও র্যাবের কাছে দাবী জানাই দ্রুত যেন এ মামলার আরও ১২জন আসামীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়। সেই সাথে আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের কঠিনতম শাস্তি দাবী করছি।
উক্ত মানববন্ধনে নিহতের মা, তার স্ত্রী, তিন বছরের শিশু ছেলে সন্তানসহ আশুলিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রমিক নেতা মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন একটা সেক্টরের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করি যে, সেক্টরের শ্রমিকরা নির্যাতন, হয়রানি এমনকি হত্যাকান্ডের শিকার হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার থাকেনা। সবার দাবী এই হত্যাকারীরা যেন টাকার বিনিময়ে আইনের কোন ফাঁক দিয়ে বেড়িয়ে না আসে, তারা এলাকার প্রভাবশালী তাই তাদের কঠিনতম সাজা না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। উক্ত ১নং আসামীর নামে শ্রমিক নেতাদের অপহরণ, মারধর করাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। এই সিস্টেমে আশুলিয়ার চারালপাড়ার রুবেলকে মারধর করা হয়।
জানা গেছে, উক্ত হত্যাকান্ডের কারণ হিসেবে গত (২৮ জুন ২০২৩ইং) বিকেলে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলম ভুঁইয়ার ছেলে আজাহার ভুঁইয়া (২৮) ও ইশতিয়াক ভুঁইয়া (২৫), এবং সোলাইমান ইসলামের ছেলে শোহান (২৮), ড. আবুল হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন রিজভি (২৯) ও নজরুল ইসলামের ছেলে তুহিন মিয়া (২৭) কে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুবেলকে হত্যার চেষ্টা, রবিউল ইসলামকে অপহরণ করে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পর্ব-২।
রবিউল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে তার তিন বছরের শিশু সন্তানসহ এলাকাবাসীর মানববন্ধন

Leave a Reply