শ্রাবণেও চৈত্রের খরা বৃষ্টির দেখা নেই, লাগানো ধানের জমি ফেটে চৌচির। এ চিত্র গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চল

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ ভরা বর্ষায় নেই বর্ষণ, মাঠ ফেটে চৌচির। এর বড় প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। ডিপটিউল, শ্যালো মেশিন চালিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা লাগাচ্ছেন কৃষকরা। কেউ কেউ রোপা আমন ধান লাগাতে পারেন নি। টানা কয়েক দিনের লাগানো ধানের জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। জমির ধান সুকিয়ে মরে যাচ্ছে। অব্যাহতভাবে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর করণে কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না। ঘন ঘন সেচ দেয়ার কারনে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। সেইসঙ্গে আমন চাষাবাদ নিয়ে নানামুখী শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিলম্বে রোপণে ফসলে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ও ফলন কমার আশঙ্কা। এই অস্বাভাবিক এক বর্ষাকালের কারণে এবার আমনে কাক্সিক্ষত ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষক।
সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হচ্ছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত কোথাও কোথাও ৭০ শতাংশের কম বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। তাই অস্বাভাবিক এক বর্ষাকাল পার করছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চল । এমন অবস্থায় বৃষ্টিনির্ভর আমনের চাষও অনেকটা সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়।
গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে বর্ষায় জমি প্রস্তুতের জন্য হালচাষ বাবদ স্বাভাবিক সময় ব্যয় হয় ২,০০০ টাকা। এখন বৈরী আবহাওয়ার কারণে জমি প্রস্তুত ধান লাগাতে হালচাষ বাবদ অতিরিক্ত ৮০০ /৯০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। সাধারন আমন চাষে কোনো সেচ খরচ করতে হয় না। কিন্তু বৃষ্টি না থাকায় এখন বর্ষা মৌসুমেও বোরো মৌসুমের মতোই সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করত হয়েছে এবং ধানে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। এতে সেচ বাবদ ২০০০ ২৫০০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে বাড়তি ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জমি শুকিয়ে গেছে। আমনের জমি তৈরি করতে অনেক স্থানে কৃষক সেচের সাহায্য নিচ্ছেন। ভরা বর্ষা মৌসুমে আকাশের গর্জন নেই। ঝড়ছে না অঝোড় ধারার বৃষ্টি। পানির অভাবে জমি খাঁ খাঁ করছে। লাগানো আমন ধানের জমিততে সেচ দিতে হচাছে। বৃষ্টির জন্য কৃষকদের চোখ আকাশের দিকে। কখন কালো হবে মেঘ ঝড়বে বৃষ্টি। কিন্ত অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছেই না। বাধ্য হয়ে অনেকেই ডিপটিউল শ্যালোটিউবল, সেচ যন্ত্র লাগিয়ে আমনের জমিতে পানি দিচ্ছেন। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবনের ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও গোদাগাড়ী তানোর উপজেলায় বৃষ্টির দেখা নেই।
উপজেলার ভাজনপুর এলাকার কৃষক আবদুল দুলুদেব জানান, বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে অবশেষে সেচ দিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা লাগানো আমন ধানের জমিতে সেচ দিয়েছি গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ৭ বিঘা জমিতে আমন রোপণের পর বৃষ্টি না হওয়ায় আজকে ডিপটিউবল থেকে সেচ দিচ্ছি। প্রতি বিঘা জমিতে মাটি ভেজানোর জন্য ১/২ ঘন্টা সময় লাগছে পনির লেয়ার দিন দিন নীচে নেমে যাওয়ায় বেশীর ভাগ ডিপটিউলে আগের মত পানি উঠছে না ফলে সেচ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রগুিল চালাতে কৃষকগণ হিমসিম খাচ্ছে। ডিজেল তেলের লাগাহীম মূল্যবৃদ্ধি।
কৃষক আব্দুল মাতিন বলেন সেচ কাজে অতিরিক্তন ২ লিটার ডিজেল খরচ করতে হচ্ছে। এতে একবিধা জমিতে আমনের লাগানো জমিতে সেচ দিতে তাকে কিনতে হচ্ছে ৬ লিটার ডিজেল। ১১০ টাকা লিটার হিসেবে এক বিঘা জমিতে শুধুমাত্র আমন রোপণ করতেই তার খরচ হচ্ছে ৬৬০ টাকা। বৃষ্টি হলে এই খরচ তার লাগতো না বলে জানান তিনি।

অব্যাহত খরার কারণে কৃষি ভান্ডার ধান উৎপাদনের বিখ্যাত এলাকা রাজশাহীর তানোরে রোপনকৃত রোপা আমন ধানের ক্ষেতে নেই পানি, জমি ফেটে চৌচির, বৃষ্টির পানির দেখা নেই প্রায় ২০ দিন ধরে। একারণে জমির অবস্থা নাজেহাল, আর কদিন এভাবে চলতে থাকলে ধান গাছের কচি পাতা পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন উপজেলার কৃষকরা। আবার সেচ পেতে হয়রানির শেষ নেই। রোপা আপন চাষাবাদ উপজেলাবাসীর মূল ভরসা। সেই ভরসায় গুড়ে বালি পড়ছে পানির অভাবে। অথচ সরকারী পর্যাপ্ত সেচ পাম্প থাকলেও বিএমডিএর তিল পরিমান ভূমিকা নেই। যে ভাবেই হোক সেচের ব্যবস্থা করতে না পারলে পথে বসবে কৃষকরা,ব্যহত হবে উৎপাদন,খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে এঅঞ্চল বলে মনে করছেন কৃষিবিদগন।
আবার রোপনকৃত জমিতে আগাছা ভরে গেছে। এতে করে চরম হতাশায় ভূগছেন কৃষকরা। জানা গেছে, বৃষ্টির পানি নির্ভর রোপা আমন চাষাবাদ। উপজেলার উঁচু নিচু সকল জমিতে হয় চাষ। কিন্তু জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবের কারণে গোদাগাড়ীতে বিগত ১৫ দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। যার কারণে কিছু জমি ও পতিত পড়ে আছে।

মনির আরো জানান, গাইনপাড়া গ্রামের পশ্চিমে ৩ বিঘা জমি ফেটে চৌচির, সেচ দিচ্ছে না অপারেটর। ওই মাঠে সব জমির অবস্থা মারাত্মক। অনেকের ধান গাছের কচি পাতা মারা গেছে। পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, ৪০ বিঘা জমি রোপনের পর তেমন ভাবে পানি পায়নি। পানি না থাকার কারনে আগাছায় ভরে গেছে। তিনি আরো জানান একই গ্রামের রবিউলের ১০ বিঘা,গাল্লা গ্রামের সাফিউলের ৩ বিঘা জমির অবস্থা খুবই খারাপ।

সুত্র মতে, উপজেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় জমি রয়েছে ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। সেচ বহির্ভূত জমি আছে ১ হাজার ৬৬১ হেক্টর, এক ফসলী জমি রয়েছে ৩৪৪ হেক্টর, দুই ফসলী জমি রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর, তিন ফসলী জমি রয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর।
বিএমডিএ সুত্র জানায়, উপজেলায় গভীর নলকূপ সরকারী ৫৩৬ টি মালিকানা ১৬ টি মোট ৫৫২ টি, অগভীর মটর বিদ্যুৎ চালিত ৪১১ টি, ডিজেল চালিত ৫০ টি এলএলপি (বিদ্যুৎ) ৩ টি, এলএলপি (ডিজেল চালিত) ৩৫০ টি, সরকারী মোট সেচ যন্ত্র ১৩৬৬ টি ও মালিকানা ৮৩০ টি। সব মিলে সেচ যন্ত্র ২১৯৫ টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *