মোংলায় মুক্তিযোদ্ধার মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেঁচে থাকার আকুতি

মোংলা প্রতিনিধি।

“আমি বহুবার আপনার কাছে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেছি। আবেদন প্রেক্ষিতে আমি কিছুই পাই নাই। পেয়েছি শুধু লাঞ্চনা ও বাঞ্চনা। আপনি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেছেন। সম্মানের পরিবর্তে আমরা পেয়েছি কুকুরের মতো আচরণ। বেচে থেকে লাভ নাই। তাই আপনার কাছে চাই এক বোতল বিষ। বিষ খেয়ে সপরিবারে মারা যাবো। মরার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলার মাটিতে দাফন করিবেন না। আমাকে কুকুরের মতো সাগরে ফেলে দিবেন। মাত্র ১৫ দিন সময়। ১৫ দিনের মধ্যে বিষ না পাঠালে গলায় দাঁড়ি দিয়ে মরবো। কারণ পৃথিবীতে আমার বলতে কিছুই নাই। তাই বাংলার মাটিতে ভিক্ষা করে খেতে হবে। তাই আমি শেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি” প্রধানমন্ত্রীকে আকর্ষন করে শেষ চিকিৎসা শিরোনামে ফ্যাস্টুন শরীরে জড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইলাম মুন্সি। মাতৃভূমির জন্য প্রাণপণ লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করলেও নিজের নেই মাথা গোঁজার মতো জায়গা। মাস শেষে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হিসেবে যা পান, তাই দিয়ে চলে স্ত্রী ও সাত সন্তানের সংসার। তাদের নিয়ে থাকেন বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদীর পাড়ে গোলপাতার ছাউনিতে। তাতেও আপত্তি! নদীপাড়ের ওই জায়গা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের। যদিও লিজ নিয়ে নিয়মিত খাজনা দিলেও উচ্ছেদে তাকে ছাড়তে হয়েছে সেই জায়গাও। এখন তিনি পরিবার নিয়ে থাকছেন খোলা আকাশের নিচে, অনেকটা মানবেতর জীবন। ৭৫ বছরের অসহায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. নুরুল ইসলাম মুন্সী। অনেকটা অপমান ও হেনস্থা করে জোরপূর্বক ওই ভূমি ছাড়তে নুরুল ইসলামকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে মানববন্ধনে দাবি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল ১১টায় মোংলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, ’১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন হলেও আমার নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই ২০০০ সাল থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের জায়গা লিজ নিয়ে খাজনা দিয়ে স্ত্রী ও সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে সেখানে ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। ২০১১ সালে জায়গা বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করলে বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান তাদের জায়গায় বসবাসের অনুমতি দেন। সেই থেকে ওই জায়গা লিজ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত খাজনা দিয়ে পরিবার নিয়ে আমি সেখানেই বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু গত ৪ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট ও নিরাপত্তাকর্মীরা আমার ছেলেমেয়েদের গাছের সঙ্গে বেঁধে আমার বসতভিটা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দেন। এ সময় আমার স্ত্রী রহিমা বেগম তার হাত-পা ধরে আকুতি করলে তাকে গালিগালাজ ও নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে মারধর করে এবং আমার ছেলে রেজাউল ও মেয়ের জামাতা তৌহিদকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে উচ্ছেদের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ও এলাকাবাসী।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম মুন্সী স্ত্রী, নাতীসহ স্থানিয় মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *