চার ফুট উচ্চা নিয়ে স্বপ্ন ছুঁতে চান হরিণাকুন্ডুর নাহিদ হাসান

আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো প্রতিবন্ধকতা যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার উদাহরণ হচ্ছে চার ফুট উচ্চতার নাহিদ হাসান। আকারে ছোট শিশুর মতো হলেও বর্তমানে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। ইচ্ছা লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবেন জনপ্রশাসন ক্যাডারে। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামে ২০০২ সালের মার্চ মাসে গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাহিদ হাসান। তার পিতা আরিফ মালিথা একজন কৃষক ও মা পারভীনা বেগম গৃহিণী। নাহিদের বড় বোন রোকসানা খাতুন নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বসেছেন বিয়ের পীড়িতে। ছোট বোন আফসানা খাতুন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। নাহিদ হাসান হরিনাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। নাহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরম স্নেহে মা পারভীনা বেগম তার মাথা আঁচড়ে দিচ্ছেন। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন। অনেকেই ভালোবেসে তাকে ডাকেন ক্যাপ্টেন বলে। এলাকার মানুষ তাকে শান্ত ও ভদ্র ছেলে হিসেবেই জানেন। নাহিদের মা পারভীনা বেগম বলেন, এখনো অনেক মানুষ নানা ধরনের কথা বলেন। বলে ও কিছু করতে পারবে না। নাহিদ হাসানের পিতা আরিফ মালিথা বলেন, নিজের বাড়ির ২০ শতক জমি ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। বড় মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারিনি। ইচ্ছা আছে নাহিদকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা আর ওর ইচ্ছা পূরন করা। নাহিদ হাসান বলেন, আমার ইচ্ছা আছে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। এই লক্ষ্যে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। নাহিদ যোগ করেন, স্বপ্ন আছে ইংরেজী অথবা আইন বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করার। আমি ছোট মানুষের মতো ভেবে এখন আর খারাপ লাগে না। যদি আমার ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি সেটাই বড় হবে আমার কাছে। কারন মানুষের মনুষত্ব ও যোগ্যতাটাই বড় পরিচয়। প্রতিবেশী জহুরুল ইসলাম বলেন, নাহিদের বয়স অনুসারে সে বেড়ে ওঠেনি। ছোট মানুষের মতোই রয়েছে। তার লেখাপড়ার যে গতি সেটা দেখে খুবই ভালো লাগে। ও বড় হোক, ভালো কিছু করুক সেটাই আমরা চাই। নাহিদের শিক্ষক জোড়াদহ কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, নাহিদের মতো ভদ্র ছেলে খুব কম পাওয়া যায়। লেখাপড়ার প্রতি কার প্রবল ইচ্ছা। স্থানীয় জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, নাহিদের জীবন অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো। নির্বাচনের সময় যখনই এখানে এসেছি তখন ছোট মানুষ ভেবে কোলে করেই বসতাম। এর বেশ কিছুদিন পরই জানলাম সে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। তখনই আমার ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেল। এ ধরনের মানুষের মনে অনেক ক্ষোভ বা দুর্বলতা থাকে, কিন্তু নাহিদের ভেতরে তেমনটি কখনো দেখিনি। তার লেখাপড়ার পথে কোনো সমস্যা হলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *