January 3, 2025, 3:35 am
ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।।
পাইকগাছায় হারিয়ে যাওয়া এক গরু নিয়ে দুই শিক্ষক রশি টানাটানি শুরু করেছেন। দু’শিক্ষকই দাবী করছেন গরুটি আমার। এ নিয়ে লস্কর ইউনিয়নের খড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিপক মন্ডল ও গড়ইখালী ইউনিয়নের কুমখালী গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদর্শন মন্ডলের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরী হয়। ফলে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে শালিসী বৈঠক করা হয়। শালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরুটি খড়িয়ার শিক্ষক দিপক মন্ডলের প্রাপ্য হয়।
এদিকে গড়ইখালীর শিক্ষক শালিসীর এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গ্রাম পুলিশের হেফাজতে থাকা গরুটি জোর পূর্বক নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক সুদর্শন সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন গ্রাম পুলিশ শিবপদ মন্ডল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ভিলেজ পলেটিক্স শুরু করেছেন অনেকেই। আবার শালিসী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেকটাই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, খড়িয়া গ্রামের কমলেশ মন্ডল চলতি মৌসুমে পাশর্^বর্তী গড়ইখালীর কুমখালীতে গরু রাখার জন্য গোট করে। যেখানে খড়িয়ার শিক্ষক দিপক মন্ডল তার গবাদি পশু গরু রাখাল দলে (গোট) রাখতে দেয়। সেখান থেকে ২ সপ্তাহ আগে তার একটি বকনা গরু হারিয়ে যায়। অপরদিকে কুমখালী গ্রামের শিক্ষক সুদর্শন মন্ডলের বাড়ির একটি বকনা গরু উত্তর চকের বিল থেকে হারিয়ে যায়। গত ২৩ এপ্রিল বিল থেকে হারিয়ে যাওয়া গরুটি উদ্ধার করে শিক্ষক দিপক কুমার তার বাড়িতে নিয়ে রাখে।
গড়ইখালীর ইউপি সদস্য এসএম আয়ুব আলী জানান, এমন খবর পেয়ে ৬ মে বাইনবাড়িয়া ক্যাম্পের এএসআই সাইফুল ইসলাম, কমলেশ সহ অন্যান্যদের সাথে নিয়ে খড়িয়ায় দিপক মন্ডলের বাড়িতে যায়। পরে সেখান থেকে গরুটি নিয়ে যখন ফিরে আসার সময় মিনহাজ বাজারে পৌছালে লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন আমাদের বাজারে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সেখানে গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু উপস্থিত হন। পরে দুই চেয়ারম্যান ও পুলিশের উপস্থিতিতে শালিসী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মিনহাজ বাজার থেকে গরুটি ছেড়ে দেওয়ার পর যেখানে যাবে গরুটি তার হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরুটি ছেড়ে দেওয়ার পর কমলেশের গোটে পৌছায়। সে অনুযায়ী গরুটির দাবীদার হন খড়িয়ার শিক্ষক দিপক মন্ডল। এরপর গরুটি দিপক কুমার মন্ডল দাবী করলে গড়ইখালীর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বর গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে গরুটি পৌছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে গোট থেকে গরুটি গ্রাম পুলিশ শিবপদ মন্ডলের হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৭ মে রোববার সন্ধ্যায় কলেজ খেয়াঘাট থেকে ধনঞ্জয় ও কুমারেশ মন্ডল সহ অন্যান্য লোকজন মেম্বরের নাম ব্যবহার করে গরুটি জোরপূর্বক গ্রাম পুলিশের নিকট থেকে সুদর্শনের বাড়িতে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন গ্রাম পুলিশ শিবপদ মন্ডল। এ ঘটনায় শিবপদ মন্ডল বাদী হয়ে ধনঞ্জয় কুমারেশ, বিশ^জিৎ, কৌশিক, লিপিকা ও পিংকি মন্ডলকে বিবাদী করে ৮ মে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভিলেজ পলেটিক্স শুরু করেছেন। ফলে শালিসীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন দুই ইউপি চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সুদর্শন মন্ডল জনান, আমি কয়েক দিন বাড়িতে ছিলাম না। কে বা কারা বা কিভাবে গরুটি আমার বাড়িতে রাখা হয়েছে সেটি আমার জানা নাই। তবে গরুটি বিলে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিলে তাতে আমার কোন দ্বিমত নাই।
ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু ও কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, যে দু’জন ব্যক্তি একটি গরু নিজের বলে দাবী করছেন তারা দু’জনই শিক্ষক। আমরা দুই চেয়ারম্যান সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শালিসী বৈঠক করি এবং শালিসী বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরুটি শিক্ষক দিপক কুমারের প্রাপ্য হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় বিষয়টি এখন থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। আশা করছি থানা পুলিশ বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন।