হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের তাজপুর এলাকায় দালাল চক্র কর্তৃক তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সাভার তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসা বাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন।
মঙ্গলবার (২ মে ২০২৩ইং) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের তাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিতাস গ্যাসের প্রায় দুই কিলোমিটার পাইপ লাইনের অবৈধ পাঁচ শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাস কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, আশুলিয়ায় এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন থেকে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র। এক স্থানে ৭-৮ বার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও আবারও দেয়া হচ্ছে অবৈধ সেই সংযোগ। একদিনের অভিযান করলে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এক মাসে ৪ দিনে খরচ হয় ৪লক্ষাধিক টাকা, তাহলে এক বছরে ৫০টির মতো অভিযানে প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ টকা খরচ হয় সরকারের।
সূত্র জানায়, ঢাকা জেলার আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ, বাইপাইল, ভাদাইল, গাজীরচট, ইউনিক, শিমুলতলা, ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া, গফুর মন্ডল স্কুলের পিছনে ও জামগড়ার আশপাশের এলাকা, চিত্রশাইল, ইউসুফ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র। এই চক্রের সাথে কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কিছু পুলিশ সদস্য এবং কিছু কথিত সাংবাদিকসহ অনেকেই জড়িত রয়েছেন বলে বৈধ গ্রাহকসহ এলাকাবাসী জানায়। তিতাস গ্যাসের মূল পাইপ লাইন থেকে দুই ইি পাইপ দিয়ে হোটেল, কারখানা ও বাসা বাড়িতে এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকে বলে অনেকেই জানান। জানা গেছে, কাঠগড়ার শাহিন পালোয়ান, ফারুক আহমেদ, ইয়ারপুরের সিরাজ, জলিল, হানিফ, মোস্তফা, আলমগীরসহ ২০-২৫ জনের দালাল চক্র এসব অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকেন।
জানা গেছে, এর আগে ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান করা হয়, এসব অভিযানে বাসা বাড়ির গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এবং ভ্রাম্যমান আদালতে কিছু অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদেরকে জরিমানা করা হয়। গত (২০ জুলাই ২০২২ইং) আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে বলে সূত্র জানায়। তিতাস কর্মকর্তার অভিযান চলমান থাকলেও অবৈধ সংযোগ দেয়া বন্ধ হচ্ছে না। এসব অবৈধ সংযোগ দেওয়ার সাথে অনেকেই জড়িত রয়েছেন বলে সূত্র জানায়। অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন যে, এ যেন চোর পুলিশের খেলা শুরু হয়েছে।
সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ (সায়েম) গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি অভিযানে বিপুল পরিমান পাইপ, রাইজার ও চুলা জব্দ করা হয়। তিনি আরও বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ দালাল চক্র তিতাসের মূল সরবরাহ লাইন থেকে ২-৩ ইি পাইপ দিয়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ফিটিংস ব্যবহার করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অবৈধ সংযোগ প্রদান করে। তিনি আরও বলেন, অভিযানে অনেক বাসা বাড়িতে নেয়া অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও এক দুইদিন পর আবারও সেই এলাকায় অবৈধভাবে সংযোগ দেয় দালাল চক্র। এসব অবৈধ সংযোগের পাইপলাইন ও রাইজারগুলো জব্দ করা হচ্ছে। একাধিকবার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও বারবার কিছু বাড়ির মালিক ও দালালরা অবৈধ সংযোগ নিয়ে সরকারি গ্যাস ব্যবহার করে, এর কারণে ভ্রাম্যমান আদালতে এর আগে ৬জনকে জরিমানা করেছেন। উক্ত ব্যাপারে এ পর্যন্ত আশুলিয়া থানায় প্রায় ৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এসব মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে তিনি জানান। এসব অভিযানে তিতাস গ্যাসের সাভার জোনাল অফিসের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমানসহ ৫-৬জন কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
আশুলিয়ায় অভিযানের সময় আশুলিয়া থানার (এ এসআই) রবিউল ইসলাম বলেন, আজকের অভিযানে আশুলিয়া থানা পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ফোর্স ও কিছু নারী পুলিশ সদস্যও এসময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, তিতাস গ্যাস সরকারি সম্পদ কেউ এরকম অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনেকেই জানান, বৈধ গ্রাহকরাও অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করছে, নতুন বাসা বাড়ির মালিকরা অবৈধ সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছেন।
আশুলিয়ার তাজপুরে তিতাস গ্যাসের পাঁচ শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন কর্তৃপক্ষ

Leave a Reply