রাজশাহী সিটিতে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি বিএনপির

মোঃ হায়দার আলী , রাজশাহী থেকেঃ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি বিএনপির
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন ২১ জুন। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন রাজশাহী বিএনপির নেতারা। তবে রাসিকের ৩০টির মধ্যে অন্তত ২০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

দলটির একাধিক নেতা জানান, কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য তারা দীর্ঘদিন থেকে মাঠে রয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। যে কোনো সমস্যায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। এলাকায় তাদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এখন নির্বাচেন অংশ না নিলে কর্মী-সমর্থক এবং অনুসারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। নির্বাচনে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণে ৩০ এপ্রিল তারা (সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা) বৈঠকে বসবেন। সেখানেই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ঠিক করা হবে নির্বাচনি কৌশল।

কাউন্সিলর পদে অংশ নিতে ইচ্ছুক বিএনপি প্রার্থীদের যুক্তি-এই পদে নির্বাচন দলীয়ভাবে হয় না। থাকে না দলীয় প্রতীকও। কাউন্সিলর নির্বাচনটি অনেকটাই অরাজনৈতিক। এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের ওপর কর্মী-সমর্থকদের চাপ রয়েছে।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক নেতা। টিটো বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তরিকুল আলম পল্টু। তিনি চাঞ্চল্যকর পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামি। তবে বর্তমানে তিনি বিএনপি করেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এবারও কাউন্সিলর নির্বাচন করব। আগে বিএনপি করতাম। এখন করি না। আর সিদ্ধার্থ হত্যা মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’

২০০২ সাল থেকে টানা চারবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ারুল আমিন আজব। তিনি বলেন, আমি ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ছিলাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবেন কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে দলীয় ভোট হয় না। এছাড়া দলীয় প্রতীকও থাকে না। তাই নির্বাচন করতে সমস্যা নেই। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশরাফুল হোসেন বাচ্চু ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি বলেন, আমি বিএনপির কোনো পদে নেই। তবে বিএনপির একজন সমর্থক। কোনো পদে না থাকায় আমার নির্বাচন করতে বাধা নেই।

রাসিকের দুই নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি নেতা মাহবুব সাঈদ টুকু। এছাড়া এ ওয়ার্ডে জামায়াতের দুজন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন-সাবেক কাউন্সিলর নোমানুল ইসলাম নোমান ও মোখলেসুর রহমান। বিএনপি নেতা মাহবুব সাঈদ টুকু বলেন, ‘আমি এর আগে এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। এ কারণে নেতাকর্মীরা চান আমি নির্বাচন করি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে কাজ করছি। দল থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই অপেক্ষায় রয়েছি।

এ ওয়ার্ডে জামায়াত প্রার্থী নোমানুল ইসলাম নোমান বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। অংশ নেব এরকমটিই ভাবছি। সবকিছু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেব।

তিন নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ সেন্টু। তিনি বলেন, আমি এর আগে চারবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০ এপ্রিল আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীরা বৈঠবে বসব। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ছয় নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান বদি। আর সাত নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর সোহরাব হোসেন এবং যুবদল নেতা আতাউর রহমান। এছাড়া সাবেক এমপি আজিজুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম নান্নুও নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। দশ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর দিলদার হোসেন। তিনি বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। দিলদার বলেন, দীর্ঘ সময় থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ মুহূর্তে এসে বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছি। আশা করছি, দল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এছাড়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান বিএনপির সমর্থক। তিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের আগে বিএনপি করতাম। এখন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমি এবারও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করব। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘লিটন এখনও বিএনপির সমর্থক। আমরা তার সঙ্গে আছি। তার জন্য মাঠে কাজ করছি।’

রাসিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেলাল বলেন, আমি এখনও কাউন্সিলর পদে রয়েছি। আমার ওয়ার্ডে অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আবার নির্বাচিত হয়ে সেগুলো শেষ করতে চাই। এছাড়া কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হয় না। দলীয় প্রতীকেও নির্বাচনে অংশ নেন না প্রার্থীরা। তাই নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই বলে আমি মনে করি। এছাড়া এ ওয়ার্ডে লিটন এবং রনি নামে বিএনপির দুজন সমর্থক নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা। তিনি এর আগেও কাউন্সিলর ছিলেন। রাসিকের সাবেক মেয়র বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল যখন রাজশাহী মহানগর যুবদলের সভাপতি ছিলেন, তখন ওই কমিটির সদস্য ছিলেন পচা। বিষয়টি বিএনপি নেতা বুলবুল যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তবে বিএনপি বা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে পচা বলেন, আমি এবারও নির্বাচন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *