আগরতলা ঘুরে এসে বাংলাদেশ-ভারতের সিনেমা হল গুলো তে গুণগত পার্থক্যে চোখে ধরাপড়ে

মোঃতরিকুল ইসলাম তরুন আগরতলা থেকে–

চার দিনের সফরে তৃতীয় বারের মতো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে আসি। আগরতলা প্রেস ক্লাবের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট মিডিয়া ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও ত্রিপুরা হেডলাইন টিভির সম্পাদক শ্রদ্ধেয় প্রনব কুমার সরকারের আমন্ত্রণে আমরা বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা প্রেস ক্লাবে আসি গত ২৩ শে এপ্রিল ২০২৩.

প্রতিনিধি দলে ছিলাম,আমি সাংবাদিক সমিতির নির্বাহী সদস্য ও আমার বন্ধু দৈনিক আমাদের কুমিল্লার ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক, সাংবাদিক সংগঠক, টক-শো সঞ্চালক, মুক্তি যোদ্ধা গবেষক শাহাজাদা এমরান, সাংবাদিক সমিতির কুমিল্লা জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ লাভলু। আমরা গত
২৩ এপ্রিল ২০২৩ রোববার সকালে কুমিল্লা থেকে রওয়ানা হয়ে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যেই ভারতের আগরতলা প্রেস ক্লাবে পৌঁছে যাই।প্রেসক্লাবের গেস্ট
রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হই আগরতলা মহারাজা বীর বিক্রম বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে।
বিমান বন্দরটি দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। খুব বেশি বড় না হলেও অত্যান্ত ছিমছাম,সুন্দর,পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক সবুজের লিলা ভুমি আনন্দ ঘন পরিবেশে ঘেরা এই বিমান বন্দর।
নিরাপত্তার নামে অহেতুক হয়রানিও চোখে পড়েনি। তবে যতটুকু নিরাপত্তা দরকার সেখানেও কমতি ছিল না। বিমান বন্দরটি ঘুরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিন থেকে একটি লাইভ শো করেন
যাতে চেষ্টা করেছেন শাহাজাদা এমরান, আগরতলা মহারাজা বীর বিক্রম বিমান বন্দরটির সাথে আমাদের দেশের আগ্রহী জনগনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
আগরতলা মহারাজা বীর বিক্রম বিমান বন্দরকে নিয়ে কুমিল্লার জমিন এ লাইভ দেখে কুমিল্লা থেকে অনেক শুভার্থীই হোয়াটস আ্যপে প্রশংসা করে ফোন দেয়।

ফলে ক্ষনিকের জন্য হলেও দূর দেশে চনমনে হয়ে উঠে আমার দেহ, মন। ঠিক এমন সময় বন্ধু শাহাজাদা এমরানের কাছে
প্রস্তাব দেই।

ভারতের একটি সিনেমা হলে ছবি দেখার। ভাবলাম, প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে হলে বসে সিনেমা দেখা হয় না। ভিন্ন দেশের একটি সিনেমা হলের ভিতরের পরিবেশ কেমন, তা অভিজ্ঞতা নেওয়া দরকার। দেখলাম,অপর সহকর্মী সৈয়দ আহমেদ লাভলু ভাইও দেখতে আগ্রহী।
তাই বিমান বন্দর থেকে সোজা চলে আসলাম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার রূপসী সিনেমা হলে। এক সাথে একই বিল্ডিংয়ে চারটি হল।
সাংবাদিক শাহাজাদা এমরা
রূপসীতে টিকেট কাটল। ছবিটি ভারতের প্রখাত অভিনেতা সালমান খানের ‘কিসিকা ভাই,কিসিকা জান ’ নামের।

যাই হোক। ভারতীয় সময় বিকাল সোয়া চারটায় শো। আমরা টিকেট কেটে হলে প্রবেশ করলাম । প্রচুর দর্শক। কিন্তু ঠেলাঠেলি নেই। যেহেতু এক সাথে চারটি হল। তাই লিফটে উঠার সময়ই কর্তব্যরত ব্যক্তি টিকেট দেখে সিরিয়াল নির্ধারণ করে দেন। আগের শো শেষ না হওয়াতে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করার সময় মিলাতে লাগলাম আমাদের দেশের হলের বাহিরে পরিবেশ আর এখানকার হলের বাহিরের পরিবেশ। আগের শো শেষ হলে ভিতরে প্রবেশ করলাম। সিটে বসেই মনে হলো কেন আমাাদের দেশের সিনেমা হল গুলো একে একে বন্ধ হচ্ছে আর এখানকার মানুষ হলে হুমরি খেয়ে পড়ছে।
সিনেমা শুরু হলো। আমার দুই সহকর্মীসহ হলের দর্শকদের চোখ পর্দার দিকে। সালমান খানকে দেখেই এক পশলা তুমুল করতালি চলল। আমার ভাবনায় মিলাতে লাগলাম দুই দেশের সিনেমা হলের তুলনামূলক পার্থক্য।
এক সময় কুমিল্লার সিনেমা হলে প্রচুর সিনেমা দেখেছি। এমন সময় গেছে, দুপুর ১২টা থেকে তিনটা মধুমিতা, তিনটা থেকে ছয়টা দীপিকা এবং ছয়টা থেকে নয়টা রূপালীতে ছবি দেখারও অভিজ্ঞতা আছে
। তবে সে সব সময় এখন অতীত। কুমিল্লার সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে নিভু নিভু জ্বলছে চকবাজারের রূপালী সিনেমা হল।আগে দালালদের ঘুষ দিয়ে টিকেট কাটতে হতো। আর এখন সিনেমা হলে দর্শক নেই।আগরতলা আসার পর লাভলু ভাই ও সম্পাদক যখন প্রস্তাব দিয়েছিল সিনেমা দেখতে,তখন আমি ভাবছিলাম, আমাদের দেশের মত এখানেও হয়তো দর্শক হবে না।কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো। একটা দালানেই চারটি সিনেমা হল।বাংলা,হিন্দি, ও ইংরেজি সিনেমা চলছে। প্রতিটি হলেই উপচে পড়া ভীর।কিন্তু কোন বিশৃঙ্খলা নেই। চমৎকার শৃঙ্খলা। প্রতিটি হলই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। হলের সিটগুলো যেন উন্নতমানের সোফা। কুমিল্লার হলগুলোতে ছবি দেখতে গিয়ে কত যে উলুসের কামড় খেয়েছি সে হিসাব মেলানো কঠিন।
অথচ ত্রিপুরার হলের ভিতরের পরিবেশ কি যে চমৎকার লাগছে তা বুঝানো যাবে না।
আমি সারা বাংলাদেশের কথা জানি না। তবে কুমিল্লার সিনেমা হল গুলোর কথা জানি এবং দেখেছি।এই সিনেমা হল গুলোতে অসংখ্য কাটপিস হতো, পিছনের সিট গুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। অত্যান্ত নিম্মমানের পর্দার কারণে সাউন্ড ডাবলিং হতো। যার কারনে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো আস্তে আস্তে হল বিমুখ হয়ে পড়ে। কুমিল্লায় এক সময় লিবার্টি, মধুমিতা, দিপীকা,দিপালী,রূপকথা, রূপালী সিনেমা হল ছিল। এই হল গুলোর মধ্যে মানুষ বিনোদন খুঁজে পেত। এখন চকবাজারের রূপালী সিনেমা হল ছাড়া সব গুলোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সবেধন নীল মনি রূপালী সিনেমা হলও।

আমি মনে করি, আমাদের দেশের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি আজ যে গভীর অন্ধকারে দৌঁড়াচ্ছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে হলের ভিতরের নোংরা পরিবেশ। যার কারণে দর্শকরা হল বিমুখ হয়েছে। এছাড়া সময়-কে ধারণ করে গল্প তৈরি করতে না পারা,ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে নোংরা রাজনীতি, মেধাবী পরিচালক ও প্রযোজকদের মূলায়ন না করা,শিল্পীদের রাজনীতিকরণসহ নানা কারণে মধ্যবিত্ত এ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার আজ হল বিমুখ। আকাশ সংস্কৃতির কথা নাইবা বললাম। আর চলচিত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে অনেকের দেশ প্রেম নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তাদের অনেকেই ব্যস্ত ভারতের ছবি আমদানি করা নিয়ে রাজনীতি করতে।
সুতরাং, আজ(২৩ এপ্রিল-২০২৩) ভারতের সিনেমা হলে ছবি দেখতে এসে আমাদের দেশের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি আর ভারতের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রির যে তুলনামূলক পার্থক্য আমার নজরে এলো, তা পরিবর্তন করতে না পারলে আমাদের দেশের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি আর কোন দিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *