নাগেশ্বরীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-কে বিধিভঙ্গ করে অব্যাহতি

এম এস সাগর,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন কে বিধি বহির্ভুত করে অব্যাহতি। অতঃপর দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রেখে একটি নির্দেশনাপত্র দেয়ার পরেও সে নির্দেশনা মানছে না ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ পাচঁ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদশূন্য। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হক সরকার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন কে গোপনে নিয়োগ দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিধিভঙ্গ করে নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় সভাপতি ও কমিটির কয়েকজন সদস্য বিধি বহির্ভুতভাবে গত ২১মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন কে অব্যাহতি প্রদান করে এবং গত ২৩মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা কে দায়িত্ব দেয়। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গত ১২এপ্রিল এ বিষয়ে সোহরাব হোসেন আবেদন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩এপ্রিল তাকে এই পদে বহাল রেখে সেখান থেকে একটি নির্দেশনাপত্র দেয়া হয়। সেই নির্দেশনাপত্র সভাপতি আব্দুল হক সরকার অমান্য করে ও দায়িত্ব নিতেও বাধা দেয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হক সরকার বলেন, শূন্যপদে নিয়োগ সংক্রান্তে কমিটির সিদ্ধান্তে গত ২২মার্চ সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রেখে একটি নির্দেশনাপত্র দেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) বলেন, আমিও সাংবাদিকতা করি। আমি এসব সব বুঝি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশে গত ২৩মার্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব সভাপতির কাছ থেকে জেনে নেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ বাণিজ্যর পায়তারা করতে না পারায় গত ২১মার্চ বিধিমালা অমান্য করে আমাকে গোপনে অব্যাহতি প্রদান করে এবং গত ২৩মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা কে দায়িত্ব দেয়। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গত ১২এপ্রিল এ বিষয়ে আবেদন করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩এপ্রিল আমাকে এই পদে বহাল রেখে সেখান থেকে একটি নির্দেশনাপত্র দেয়া হয়। সেই নির্দেশনাপত্র সভাপতি আব্দুল হক সরকার অমান্য করে ও দায়িত্ব নিতেও বাধা দেয়। এমনকি সভাপতি ও অবৈধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা চলতি বছরের বকেয়া বেতন ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল ও উৎসব ভাতা, ঈদ বোনাস বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমি ও আমার পরিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর থেকে বঞ্চিত।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা হয়েছে। দু’পক্ষকেই কাগজপত্র নিয়ে কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। তবে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রেখে একটি নির্দেশনাপত্র দিয়েছে সেটি বহাল থাকবে।

কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শামছুল আলম বলেন, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সোহরাব হোসেন বহাল থাকলে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করলে বোর্ড ব্যবস্থাসহ কমিটি ভেঙে দিবেন। আমাদের দপ্তর থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসারে সোহরাব হোসেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রেখে একটি নির্দেশনাপত্র স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কে দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাপত্র অমান্য করা হলে পরবর্তীতে কমিটির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৬এপ্রিল সভাপতির নেতৃত্বে চার জন বোর্ডে এসে অভিযোগ করেন কিন্তু অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *