আশুলিয়ায় পুলিশ সদস্যের মা’কে মারধর ও তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ

হেলাল শেখ,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন ইয়ারপুর গ্রামের প্রবাসী হযরত আলী’র স্ত্রী-বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য আল-আমিন এর মা ইয়াছমিন’কে মারধর ও তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
আশুলিয়া থানার অভিযোগে ভুক্তভোগী ইয়াছমিন জানান, ঢাকার আশুলিয়ার “ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র আপন ছোট ভাই মোঃ নাজিম উদ্দিন নাজি (৪০) পিতা- মৃত মুন্নু মোল্লা ও মিয়াজ উদ্দিন (৬০), পিতা-মৃত কিতাব আলী এবং আব্দুল জলিল (৫০), পিতা-মৃত আঃ জব্বার, সর্ব সাং-ইয়ারপুর, থানা-আশুলিয়া, জেলা ঢাকাগন আমাদের একটি জমি অবৈধভাবে দখলের পায়তারা করিতেছিলো। আমাদের বাধার কারণে বিবাদীরা আমাদের জমি দখল করতে পারে নাই। উক্ত বিরোধের জের ধরিয়া অদ্য ইং ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ ঘটিকার দিকে উল্লেখিত বিবাদীগন তাহাদের সঙ্গে আরো ১০-১২ জন সন্ত্রাসী সহযোগীসহ দা, শাবল,হাতুরী, লোহার রড ইত্যাদি অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করিয়া বাড়ির পূর্ব ভিটিতে থাকা তিন রুম বিশিষ্ট ওয়াল কাম টিনশেড বিল্ডিং ভাংচুর করিয়া অনুমান ১,৫০,০০০/ টাকার ক্ষতি সাধন করে সন্ত্রাসীরা। তখন আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিলে বিবাদী নাজিম উদ্দিন মোল্লা নাজি আমাকে চুল ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া আমাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারিয়া আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা,ফুলা জখম করে এক প্রকার নির্যাতন করে। বিবাদী আঃ জলিল আমার ঘরে থাকা আলমারী হইতে নগদ-৭০ হাজার টাকা এবং বিবাদী মিরাজ উদ্দিন আলমারী হইতে অনুমান ০২ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার যাহার মূল্য অনুমান ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছে। বিবাদীরা ঘরের বারান্দার গ্রীল ভাঙ্গীয়া নিয়া গিয়েছে, যাহার মূল্য অনুমান ২৫,০০০/ টাকা। আমাদের ডাক চিৎকার শুনিয়া আশে-পাশের লোকজন আগাইয়া আসিতে থাকিলে বিবাদীরা যাওয়ার সময় এই বলিয়া হুমকি দিয়া গিয়াছে যে, তাহারা যেকোনো সময় আমাদের জমি, ঘর, বাড়ি দখল করিয়া নিবে। তাহাদেরকে বাধা দিলে আমাকে ও আমার পুত্রকে খুন করিয়া ফেলিবে। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে অনেক কষ্টে লেখা পড়া করাইয়াছি, সে এখন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য, আমার ছেলের নাম আল-আমিন, সে মিরপুরে চাকরিরত আছে। আমার ছেলের কিছু হলে আমি বাঁচবো না, আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি, পুলিশ ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, সঠিক ভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করাসহ সঠিক বিচার দাবি জানাচ্ছি আমি এক অসহায় মা।
অন্যদিকে আশুলিয়া থানায় অভিযোগকারী সাদিয়া আক্তার শিল্পী (২১), পিতা মোঃ মোকছেদ আলী, সাং-ইয়ারপুর, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা জানান, বিবাদী ১। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রার্থী ছিলেন মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র আপন ভাই মোঃ নাজিম উদ্দিন নাজি (৪০), পিতা-মৃত মুন্নু মোল্লাসহ ১০-১২ জন বিবাদীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি যে, আশুলিয়া থানাধীন মনসন্তোষ মৌজাস্থ জমি যাহার সি এস ২১০, আর এস ৪৬০, ৪৬২, বি আর এস ৭৬৫৭, ৭৬৫৮, দাগে মোট জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ ইহার কাতে ২৪শতাংশ জমি বিগত ১৯৮৬ সাল হইতে আমরা ক্রয় সূত্রে মালিক হইয়া উক্ত জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করিয়া বসবাস করিয়া আসিতেছি। বিবাদীগন এলাকার ভূমিদস্যু ও জমি দখলদার। বিবাদীগন ১০ বছর পূর্ব হইতে আমাদের উক্ত জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করার পায়তারা করিয়া আসিতেছে। অদ্য ইং ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিবাদীগনসহ তাহার সহযোগী আরো ৮-১০জন বিবাদীগন আমার বাসার পাশে আসিয়া আমার বাবার নাম ধরিয়া গালি গালাজ করিতে থাকে, তখন আমি বিবাদীদেরকে গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে ১নং বিবাদীসহ সকল বিবাদীগন আমাকে মারপিট করার জন্য বে-আইনী জনতাবদ্ধ অনাধিকার ভাবে আমাদের উক্ত বাড়ি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়া দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লাঠি শোডা, দা, চাইনিজ কুড়াল, নিয়া বাড়িঘরের ওয়াল, জানালা, দরজা, চালের টিন বাইরাইয়া ও কুবাইয়া ব্যাপক ভাংচুর করিয়া অনুমান প্রায় ১০,০০,০০০/= টাকার ক্ষতি সাধন করে। এর আগে বিবাদীগন আমাদের বিরুদ্ধে সি আর মামলা দায়ের করেন, যাহার মামলা নং-৫৪৩/২০১০। উক্ত মামলা আমাদের পক্ষে রায় হওয়া সত্ত্বেও বিবাদীগন কোর্টের আইন অমান্য করিয়া আমাদের উক্ত জায়গা দখল করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রহিয়াছেন, সঠিক তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতারসহ কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
মোঃ মোকছেদ আলী বলেন, আমি আশুলিয়ার ইয়ারপুর হাই স্কুলে দফতরির চাকরি করি, ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নৌকা মার্কা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর মোল্লা মোশারফ হোসেন এর আপন ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ তাদের লোকজন আমাদের জমি, বাড়ি ঘর দখলের চেষ্টা করে সন্ত্রাসী কায়দায় ভাংচুর ও লুটপাট করেছে, আমি ছোট চাকরি করি, গরীব মানুষ তাই আমার কেউ নেই, আমি সঠিক বিচার চাই। এ ব্যাপারে বিবাদীদের কাছে জানতে যোগাযোগ করা হলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান শাহেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু তার সাথে কথা হয়নি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র রায় বলেন, আশুলিয়ার ইয়ারপুর গ্রামে বাড়ি ঘর ভাংচুরের ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *