ক্ষেতলালে ধর্ষণের মুল পরিকল্পনাকারী রিয়া ধরাছোঁয়ার বাহিরে

এস এম মিলন জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে গত বুধবার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষনের মূল ঘটনাসহ অভিযুক্তদের আড়াল করতে উভয় পক্ষের অভিভাবক ও আওয়ামীলীগ নেতা স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির জন্য দিনভর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে গত ২৪ মার্চ, শুক্রবার ভিকটিমের মা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ক্ষেতলাল থানায় ধর্ষনের অভিযোগে দুইজনের নাম উল্লেখসহ চার জনকে আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি অপরদিকে ধর্ষণের মুল পরিকল্পনাকারী সুরভি আক্তার রিয়া ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।
জানা গেছে, গত বুধবার (২২মার্চ) উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামের শাহাজুল ইসলামের ছেলে সুমন তার বসত বাড়িতে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের এমন ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত সুমনের বাবা শাহাজুল ইসলাম ও রাব্বিউল এর বাবা সাইদুর রহমান মুল ঘটনাকে আড়াল করতে বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ ফকিরের বাড়িতে স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করে। সেই বৈঠক বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে টাকা নিয়ে দরকষাকষি, বিয়ের আয়োজন নাটকসহ, থানা ও নেতা ম্যানেজের চেষ্টা চলে।
ভিকটিমকে বিয়ে না করে টাকা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করলে ওই ভিকটিম শিশুর মা ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান।পরে আপোষকারীরা ভুক্তভোগীকে রাতে ক্ষেতলাল থানায় নিয়ে গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুইজনের নাম উল্লেখসহ চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২মার্চ, বুধবার বেলা ১১টায় কলিঙ্গা গ্রামের শাহাজুল ইসলামের ছেলে সুমন বাড়িতে তার বাবা-মা না থাকার সুযোগে তার প্রেমিকা রিয়া (১৬) ভুক্তভোগী ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রীকে স্কুল থেকে জয়পুরহাট বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে প্রেমিকা রিয়া কলিঙ্গা গ্রামে সুমনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সুমন তার প্রেমিকা রিয়াকে নিয়ে আলাদা ঘরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে। অপরদিকে ভিকটিম স্কুল ছাত্রীকে ওই বাড়ি ড্রয়িংরুমে একা পেয়ে দুই বন্ধুর সহায়তায় একজন ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ওই ছাত্রীকে জোরপুর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে। ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে সুমন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং কৌশলে প্রেমিকার সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
ওই ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বিস্তারিত ঘটনা জানালে ওই ছাত্রীর মা পরদিন বৃহস্পতিবার ক্ষেতলাল থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীর মা বলেন আমার মেয়ের ঘটনাটি আপোষ করে দেয়ার জন্য ডেকেছিলেন। নেতারা যে ছেলে শ্লীলতাহানি করেছে তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই ছেলে ও ছেলের বাবা রাজি না হওয়ায় আমরা আপোষ করিনি।
এ বিষয়ে রাব্বির বাবা সাইদুর বলেন, আমার বাড়ি পুলিশ আসায় বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আশরাফ ফকিরের সঙ্গে দেখা করে ভুক্তভোগী ওই মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায় কানপাড়া গ্রামের রহিম ও জাহাঙ্গীর আশরাফ ফকির সহ কয়েক জন নেতা গোপন বৈঠক শেষে বলেন রাব্বীর সঙ্গে ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। বিয়ে না করলে আপনার ছেলের জেল হতে পারে তখন আমি ভয়ে বিয়ের সম্মতি দেই। তিনি আরো বলেন, নূর মোহাম্মদের ছেলে রাব্বি, মতির ছেলে চঞ্চল ও সাহাজুল ইসলামের ছেলে সমুনসহ তিন জনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থানা মিটাবে নেতারা। এখন শুনলাম অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্য থেকে মূল পরিকল্পনাকারী রিয়াকে বাদ দিয়ে শুধু আমার ছেলেসহ চারজনের নামে মামলা করা হয়েছে,। আমি চাই এর সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অপরাধের সহায়তাকাৱীও একজন অপরাধী তার বিচার না হইলে ন্যায় বিচার প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযুক্ত রিয়া উপজেলার ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী কে ফুসলিয়ে রিয়া তার প্রেমিক সুমনের বাড়িতে নিয়ে যায়৷ যেহেতু এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড পরিকল্পনাকারী জাহিদুল ইসলাম সুমন ও তার প্রেমিকা সুরভী আক্তার রিয়া এই মামলা থকে বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য রিয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার নিশ্চিন্তাবাজার এলাকার রাজুর মেয়ে সুরভী আক্তার রিয়া কালাইয়ে পড়াশুনা করার সময় গত ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি একই এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে রাজুর সাথে নোটারি পাবলিক মূলে বিয়ের পিরিতে বসেন৷ সেই মেয়ে জামাই রাজুর বিরুদ্ধে সুরভির বাবা অপহরন ও ধর্ষণ মামলা করেন। বর্তমানে সেই মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। পরে সুরভি আক্তার রিয়া ক্ষেতলালে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার সুবাদে অভিযুক্ত উপজেলার কলিঙ্গা গ্রামের শাহাজুল ইসলামের ছেলে সমুনের সাথে দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক চলছে। সেই সম্পর্কের কারণে প্রেমিকা রিয়া সুমনের বাড়িতে প্রায় যাতায়াত করে৷
পারিবারিক সূত্রে যানা যায়, ওই প্রেমিকা সুরভি আক্তার রিয়া জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আলাদিপুর গ্রামে শাকিলের ছেলে প্রবাসী রাসেলের সঙ্গে বিয়ের এঙ্গেজমেন্ট করা হয়েছে৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জৈনক ব্যক্তি বলেন, ভুক্তভোগীরা অসহায় হওয়ায় প্রভাবশালী অভিযুক্তরা অর্থের বিনিময়ে মীমাংসার আয়োজন করেছিল।
উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ আলী ফকির বলেন,, ছেলে পক্ষের অভিভাবকরা আমার কাছে গিয়েছিল। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি, আপনারা মেয়ের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে বসে আপস করাই ভালো। আমি এর বেশি আর কিছু বলতে পারবোনা।
ক্ষেতলাল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি)রাজিবুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ধর্ষণ চেষ্টার একটি অভিযোগ হয়েছিল। সেটি রাতে ভুক্তভোগীর বর্ণনা অনুযায়ী ধর্ষনের অভিযোগ নিয়েছি। ভিকটিমকে মেডিকেল টেস্টের জন্য পাঠানো হবে। পরর্বতীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *