গোপালগঞ্জে প্রভাবশালী পারিবারের অত্যাচারে অতিষ্ট বৃদ্ধা মেহেরুন নেছা

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে প্রভাবশালী পারিবারের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে বৃদ্ধা মেহেরুন নেছা ও তাঁর পরিবার। সম্পত্তি চাইতে গেলেই মারধরসহ জীবননাশের হুমকি এবং পৈত্রিক ভিটা থেকে একা বাড়িতে থাকার সুযোগে তাকে মারধর করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছে অসহায় পরিবারটি।

বৃদ্ধা মেহেরুন নেছা একা বাড়িতে থাকার সুযোগে তাকেও মারধর করে ভূমিদস্যু ইমরুল মোল্যা ও তার লোকজন। এ নিয়ে স্থানীয়রা কয়েকবার সালিশ বৈঠক করে মিমাংশা করলেও তারা মিমাংশা মানেনি। পরবর্তীতে বিচারের আশায় তার মেয়ে শিউলি খানম গোপালগঞ্জ আদালত ও মুকসুদপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, বৃদ্ধা মেহেরুন নেছার স্বামী আব্দুল আলীম মোল্যা প্রায় ২৬ বৎসর আগে মারা যান। তার তিন ছেলে মধ্যে দুই ছেলে ওবাইদুর মোল্যা ও মাসুম মোল্যা জীবিকার প্রয়োজনে ইরাক প্রবাসী, আর অপর ছেলে মাহফুজ গাজীপুরে ব্যবসা করে। তার দুই মেয়ের মধ্যে শিল্পির মহারাজপুর গ্রামে বিয়ে হয় আর অপর মেয়ে শিউলি খানমের স্বামী বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করার সুবাদে সেও ঢাকায় অবস্থান করেন। ফলে বৃদ্ধা মেহেরুন নেছাকে (৬৫) এখন একা নিজ বাড়িতে থাকতে হয়।

কিন্তু তার ছেলে ও মেয়ে নিয়মিত বাড়ী না থাকার কারনে তার স্বামী তার আব্দুল আলীম মোল্যার ক্রয়কৃত ২নং প্রভাকরদি মৌজার দলিল নং ৪৮৬৫, এসএ খতিয়ান নং-৯৫৩ জমির পরিমান ১৩ শতাংশ জমি জোরপূর্বক ভূমিদস্যু ইমরুল এবং আছাদ ও তাদের পরিবার দখল করে রেখেছে। প্রভাকরদি মৌজায় এসএ খতিয়ান নং-১৪৪ জমির পরিমান ২৬ শতাংশ কেনা জমি যা তারা সকল মিলে জোরপূর্বক দখল করে আছে। তার স্বামী ও দেবর যৌথভাবে দক্ষিণ চন্ডিবর্দী টেংরাখোলা মৌজার দলিল নং-২৪৭৭, এস এ খতিয়ান নং, ১০১ জমির এর ৫ শতাংশ জমি কেনে। নিয়মানুযায়ী তাদের ২.৫০ শতাংশ জমি পাওয়ার কথা থাকলেও তার দুই দেবরের ছেলেরা জোরপূর্বক ৩.২৫ শতাংশ দখল করে ভবন নির্মাণ করে। বাকি ১.৭৫ শতাংশ জমির উপরে একটি ভবন নির্মাণ করতে গেলে সেখানেও বাঁধা দেয় তাঁরা।

এ নিয়ে এলাকার লোকজন মিমাংশা করলেও ইমরুল, সোহেল, আছাদ ও শাকিল বাঁধা প্রদান করে। পরবর্তীতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বিষয়টি সমাধান করে দিয়ে বৃদ্ধা মেহেরুন নেছার মেয়ে শিউলীকে ভবন নির্মাণ করার জন্য সিদ্ধান্ত দেয়। তারাও বিষয়টি মেনে নিলে শিউলি ভবন নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হন তিনি। ভবন নির্মাণ করতে হলে দশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করলে দিতে না পারায় তার ভবনের কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে গত বছরের ৬ আগষ্ট তার মা ও বোনকে ইমরুলের নেতৃত্বে ৭ জন মিলে মারধর করে আহত করে।

এছাড়াও একই গ্রামের নালু শেখের ছেলে বাসু শেখের প্রভাকরদী মৌজার দাগ নং ৪৭৪ ও ৪৭৫, খতিয়ান নং ৪১ ও ৪২ এর ৬৫ শতাংশ জমি জবর দখল করে আছে। তিনি তার জমিতে যেতে পারেন না।

বৃদ্ধা মেহেরুন নেছা বলেন, আমার স্বামীর টিন সেডের একটি ঘরে থাকি। কিন্তু আমার দুই দেবর ও তাদের ছেলেরা আমার ঘরের অর্ধেক দখল করেছে। এমনিকি আমি ঘরে থাকলেও রুমে তালা মেরে দেয়। আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

হয়রানীর বৃদ্ধা মেহেরুন নেছার মেয়ে শিউলি খানম জানায়, ভূমিদস্যু সোহেল, শাকিল, ইমরুল, ও আছাদ সবাই আমার চাচাতো ভাই। আমার পিতার মৃত্যুর পরে তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। আমার পিতার প্রায় এক একর সম্পত্তি তারা জোরপূর্বক দখল করে আছে। আমার সম্পত্তি তাদের কাছে চাইতে গেলে তারা আমাদের মারধর করে ও খুন জখমের হুমকি দেয়। বাড়িতে আমার বৃদ্ধা মা একা থাকেন। তারা আমার মায়ের থাকার ঘরটায়ও তালা মেরে রেখেছে। আমার বাবার জমি স্থানীয় কৃষক ইলিয়াছকে বর্গা দেয়া। তিনি জমিতে ধান চাষ করেছেন। সেই ধানও তারা চাষ দিয়ে নষ্ট করার হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমরা সবাই বাড়ি ছাড়া কেউ বাড়িতে আসতে পারিনা। আমি ও আমার পরিবার তাদের বিচার দাবি করছি।

ক্ষতিগ্রস্থ বাসু শেখ বলেন, জমিতে যেতে চাইলে তাকেও মারধর ও মামলার হুমকি দেয়। স্থানীয়রাও তাদের ক্ষমতার দাপটে কথা বলতে পারেনা। তাদের অত্যাচার থেকে বাচঁতে আইনশৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

অভিযুক্তদের না পাওয়া গেলেও তাঁদের পিতা লায়েক আলী শেখ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের জমি আমরা দখল করিনি। পৈত্রিক সম্পত্তি হিসাবে আমরা পেয়েছি। আর শিউলির মার ঘরে তালা মারা হয়নি। ঘরটি ভাগাভাগি হয়েছে।

তবে তিনি গাছ বিক্রির ৭ লাখ না দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, জমির বিভিন্ন স্থানের গাছ বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা পেয়েছি। তাদেরকে না দিয়ে টাকাটা অন্য কারো কাছে রেখেছি। পরে তা ভাগ করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

মুকসুদপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম আমির বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ নিয়ে কয়েকবার শালিস হবার কথা থাকলে ও তা হয়। তবে বিষয়টি মিশাংসা করে সমাধান করা হবে। #

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *