তারিক রহমান চট্টগ্রামের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

মহিউদ্দীন চৌধুরী,ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
তারিক রহমান। চট্টগ্রামের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
সপ্তাহে দুই দিন দুই ঘন্টা পটিয়া ও বোয়ালখালী থানায় ডিউটি আফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এতে সহজেই পুলিশি সেবা পাচ্ছে মানুষ। গতিশীল হয়েছে পুলিশিং কার্যক্রম।

(শনিবার) পটিয়া থানায় সেবা নিতে আসা মো. রফিক বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিউটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু আমি নই, যিনিই অভিযোগ নিয়ে যাচ্ছেন, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। হয়রানি দূরে থাক, খুব দ্রুত সেবা মিলছে। এমন ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ এর আগে আমরা দেখিনি।’

তারিক রহমান ২০১৪ সালে ৩৩ তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারের মেধাতালিকায় ৭ম হন। এরপর এএসপি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন তিনি। পরে খুলনা, সাতক্ষীরা ও নরসিংদীর রায়পুরা সার্কেলে দায়িত্ব পালনের পর ২০২০ সালের জুন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান। ২৯ জুন পটিয়া সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন তারিক রহমান।

তারিক রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যশোরে। যশোর জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় মাস্টার্স করেন পুলিশ সায়েন্স নিয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তারিক রহমানের আকাঙ্খা ছিল পুলিশ হওয়ার। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সুযোগ আছে পুলিশের। পুলিশের একজন গর্বিত অংশীদার হয়ে আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চেয়েছিলাম। এ কারণে বিসিএস পরিক্ষায় একমাত্র পছন্দ হিসেবে পুলিশ রেখেছিলাম। যদিও অনেক পছন্দ উল্লেখ করে পরীক্ষায় অংশ করে থাকেন সবাই।’

বেশ কয়েকটি ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে বেশ প্রশংসিত হন এডিশনাল এসপি তারিক । ২০২১ সালে পটিয়ায় চাঞ্চল্যকর নুর আলম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করেছিলেন তিনি। ক্লু-লেস মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও সোর্স নিয়োগ করে খুনি মোমিন ও নেজামকে গ্রেপ্তার করেন তারিক রহমান। এরপর লুন্ঠিত সিএনজি অটোরিকশা, হ্যায় ব্যবহার করা হাতুড়ি ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজনই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এছাড়া পটিয়ার ক্লু-লেস চাঞ্চল্যকর আকিব হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করেন তারিক রহমান। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও সোর্স নিয়োগ করে ক্লু-লেস সোনা ব্যবসায়ী বিমান ধর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারও করেন তিনি। ২০২০ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত পটিয়া সার্কেলে দায়িত্বপালন তার নেতৃত্ব পরিচালিত সফল অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবা, ১৪ হাজার ৩৩৯ লিটার মদ, ১৩৪.৩২০ কেজি গাঁজা, ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩০৫টি কার্তুজ ও ৬৭টি দেশীয় অস্ত্র।

পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার দুইটি পৌর নির্বাচন এবং দুইটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অবাধ -সুষ্ঠু এবং অনুষ্ঠিত পরিচ্ছন্ন নির্বাচনে স্থানীয় সর্বসাধারণের প্রশংসা অর্জন করেন ।

কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ‘আইজিপি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ ২০২২’ পেয়েছেন অ্যাডিশনাল এসপি তারিক। এছাড়া বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছেন। তিনি পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবেই, ‘পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করিনা। মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়ার আশায় কাজ করি। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া সম্মানই মানুষকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখে, অনুপ্রাণিত করে ও দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকার শক্তি জোগায়।’

আজকের অবস্থানে উঠে আসার পেছনে সৃষ্টিকর্তার দয়ার পাশাপাশি বাবা-মা ও শিক্ষকদের অবদানের কথা স্মরণ করেন অতিরিক্ত পুলিশ ‍সুপার তারিক রহমান। তিনি বলেন, ‘যেখানেই চাকরি করেছি সেখানেই ঊর্ধ্বতন স্যারদের ইতিবাচক আনুকূল্য পেয়েছি এবং সাধারণ মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা পেয়েছি, যা প্রতাশা থেকেও অনেক বেশি।’

বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে সবসময় চেষ্টা করেন জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক বলেন, ‘অন্যায়-অবিচারে পুলিশই সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারে। যতদিন চাকরি আছে, মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করবো।’

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *