নীলফামারীর সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জে থাই লটারির নামে চলছে প্রবাসী ঠকানোর প্রতিযোগিতা

খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

প্রবাসীদের নিঃস্ব করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে নীলফামারী জেলা সদরসহ কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলার ২নং কাশিরাম বেলপুকুর ইউপি, ৩নং নিতাই ইউপি, ৪নং বাহাগিলী ইউপি, ৫নং খাতামধুপুর ইউপি‘র অনেক দুষ্কৃতিকারীরা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে প্রচলিত অনলাইন ভিত্তিক লটারী প্রতিযোগীতায় বিজয়ী নম্বর প্রদানের নামে সুকৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর পর প্রবাসীদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে অর্থ আত্মসাধের হাজারো অভিযোগ উঠছে । প্রতারকদের চলাফেরার পরিবর্তন দীর্ঘদিন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা প্রতারিত অর্থ দিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে মোটরবাইক ক্রয় ও পরিবর্তনের মাধ্যমে দামী দামী মোটরসাইকেল ব্যবহার, উন্নত বিল্ডিং বাড়ি নির্মাণ, নেশা দ্রব্য সেবন, অশ্লীল নারীদের নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরহামেষাই ।

ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সোস্যাল মাধ্যমে বিভিন্ন আকর্ষিত বিজ্ঞাপন বুষ্টিং এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনলাইন লটারির বিজয়ী নম্বর নিশ্চিতের নামে প্রতিশ্রুতিমুলক বক্তব্য দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক এসব জুয়ায় জেতার নির্ভুল ও সঠিক নাম্বার দিতে চেয়ে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এই ডিজিটাল প্রতারকরা। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে চক্রটি বিভিন্ন ইমো, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকে যার প্রমাণও মিলেছে। টাকা গ্রহণে তারা ভিন্ন নামীয় বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে থাকে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নে ছলিমুদ্দির বাজারের অনলাইন ভিত্তিক লটারী- থাই ও টোট খেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে মজনু ইসলাম। এমন নিকৃষ্ট কাজে পিছিয়ে নেই কিশোর কিশোরীরাও। অভাবের সংসারে যেন আলাদিনের চেরাগ জ্বলছে। অবৈধ পথে এভাবে অর্থ আসাতে, পরিবার গুলোর পিতা-মাতারাও সমানতালে উৎসাহ দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায় , মজনু নামের এই ব্যক্তি বিকাশের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে প্রতারিত করছে এবং বিকাশের মাধ্যমে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুষ্টিং দিয়ে আকর্ষিত বিজ্ঞাপন ছাড়ছে আর ফাঁদে ফেলেছে বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে থাকা, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনকারী হাজারও প্রবাসীদের ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মজনু আরও জানান, প্রবাসীরা নাকি তাকে খুশি হয়ে টাকা দেয়। অন্যরা সবাই বুষ্টিং করে, তাই সেও করে। তাদের অনেকেই এখন এই অবৈধ পেশায় যুক্ত হয়ে উপার্জন করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। তার বোন এখন আর শ্বশুর বাড়িতে থেকে না, থাকে তাদের বাড়িতেই এবং প্রতারণার খেলায় তাকে সাহায্য করে। তার বাবা টাকা পেলে মহা খুশি হয়, এজন্য আর পড়াশোনাও করতে হচ্ছে না তাকে।

মজনু আরও জানায়, আমাদের এলাকায় কেউ প্রশাসনকে ভয় করে না। সবাই সিস্টেম করে চলে। মামলা হওয়ার আগে আমাদের আগাম জামিন হয় হাইকোর্টে। কেউ আমাদের আটকিয়ে রাখতে পারে না। সে জোড় গলায় বলে, তারাগঞ্জ থানায় এজাহারভুক্ত আসামি থাইয়ের রাজা মতিয়ার ভাই, এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত পরশুদিনও মতিয়ারের দেখা হয়েছিল মজনুর সাথে।

তারাগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারাগঞ্জ থানায় গত ২৯শে ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখে থাইল্যান্ডের মুদ্রা (বাথ) জাল করে, সেই নোট দিয়ে প্রতারণায় জড়িতদের নামে একটি মামলা হয়। মূলত এসব জাল নোট দিয়ে চমকপ্রদ ও লোভনীয় ভিডিও তৈরি করত। তৈরিকৃত ভিডিও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় বুস্টিং করে বোকা বানিয়ে নিঃস্ব করে দেয় প্রবাসীদের। প্রতারকদের ধরতে অভিযানও চলছে নিয়মিত ।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ গ্রহণের বিস্তারিত বর্ণনা খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্বের সংবাদে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে……

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *