আত্মহত্যায় প্ররোচণা’ মামলার আসামী চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জনমনে প্রশ্ন

মোহাম্মদ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
সম্প্রতি পঞ্চগড়ে মেয়ের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে অসহায় এক বাবার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামী হয়েছেন জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানও। অপরদিকে, নিজের দায় এড়াতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। তবে আত্মহত্যায় প্ররোচণা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন কিভাবে করেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারী) আটোয়ারী থানায় মামলাটি করেন মৃত ব্যক্তির বড় ছেলে। মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট ৫ জনকে আসামী করা হয়।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন। অন্য আসামীরা হলেন- ওই ইউনিয়নের লাখেরাজ ঘুমটি এলাকার পলাশ চন্দ্র বর্মন (২৫), তার বাবা শ্যামল চন্দ্র বর্মন (৪৬), একই এলাকার মৃত ধনবর বর্মনের ছেলে ভবেন বর্মন (৫০) এবং অলকান্ত বর্মনের ছেলে কাজল বর্মন (২৩)।
মৃতের বড় ছেলে জানান, গত বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গলায় চাঁদর পেচিয়ে বাড়ির অদুরে আবাদি জমির পাশের একটি পাকুর গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তার বাবা।
তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে আমার কলেজ পড়ুয়া বোনকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে আসামী পলাশ চন্দ্র বর্মন। এঘটনার বিচার দাবি করলে বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে সুরাহার আশ্বাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান বিষয়টির গুরুত্ব না দিয়ে কালক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। মৌখিক অভিযোগে চেয়ারম্যানের অসহযোগিতা দেখে ২৪ জানুয়ারি লিখিত অভিযোগ দেই। পরে চেয়ারম্যান আমাদের নোটিশের মাধ্যমে জানান ১ ফেব্রুয়ারী ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হতে। কিন্তু সেদিন খবর পাই আসামীরা উপস্থিত হবেনা। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তখনও টালবাহানা করেন। বারবার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোন বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আমার বাবা।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কিছু কূচক্রী ব্যক্তির পরামর্শে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার কাছে তাদের অভিযোগ দাখিলের পর ওই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র গাফিলতি বা অসহযোগিতা ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদে যে লিখিত অভিযোগপত্রটি দিয়েছিলেন এবং গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থানায় যে মামলা করেছেন তার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার কাছে দেওয়া অভিযোগে তার বোনকে হাত ধরে টানাটানির কথা উল্লেখ করেছেন এবং মৌখিকভাবে বার বার বলেছিলেন বিষয়টি পারিবারিকভাবেই নিষ্পত্তি করে দিতে। সে কারণে আমরা অভিযোগটি আমলে নিয়েছিলাম। এই ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তারা বিষয়টিকে ধর্ষণ বলে উল্লেখ করেছেন। ধর্ষণের বিষয়টি আগে জানালে আমি কখনই ওই বিষয়ে সালিশ আহবানের নোটিশ করতাম না।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *