আশুলিয়ায় ব্যবসায়ী তাজিবুলকে মদ্যপান করিয়ে হত্যা-থানায় মামলা:নেট ব্যবসা দখলের চেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুরিয়ার জামগড়া উত্তর মীর বাড়ির বাসিন্দা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ তাজিবুল মীর (৩১) মদ্যপান করানোর কারণে তার মৃত্যু। ৬-৭ জনের পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানোর অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, উক্ত মামলার ১নং আসামী আশুলিয়ার জামগড়ার মীর বাড়ির মোঃ তমিজ উদ্দিন মীরের ছেলে মোঃ সুমন মীর (৩০), ২নং আসামী মোঃ হিরা মিয়া (৩০), ৩নং আসামী মোঃ শামীম (৩০), ৪নং আসামী মোঃ সুমন মিয়া (২৮)। ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত (৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং) সন্ধ্যায় উল্লেখ্য ব্যক্তিদের যোগসাজসে ৬-৭জন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, এসময় তাজিবুল মীর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, এরপর ভিকটিম তাজিবুল মীরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ২১দিন।
ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর মীর বাড়ির মৃত সফুর উদ্দিন মীরের ছেলে মোঃ ওয়াহিদ মীর (৬০), ভিকটিম তাজিবুল মীরের বাবা বাদী হয়ে উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল সাকিনস্থ ৪নং বিবাদীর অফিসের ভিতর, ভাদাইল, ধামসোনা, আশুলিয়া, ঢাকা। এ ঘটনা ও সময় ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, সন্ধ্যা অনুমান ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে। সূত্র জানায়, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাই বন্ধু ব্যবসায়ীদের সাথে তাজিবুল মীরের মিটিং হয়েছে, মিটিং শেষে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন ৬-৭জন, অন্য কারো সমস্যা না হলেও তাজিবুল মীরের মরণ যাত্রা হয়েছে।
উক্ত ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে সুমন মিয়াকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি, সুমন মিয়ার বাবা মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, এই ঘটনার পর থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি অনেকবার ছেলের সাথে কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিনা। এদিকে ভিকটিম তাজিবুল মীরের খালাতো ভাই মোঃ রনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি রনি’র অফিসে গিয়ে সুমন মীর, হিরা মিয়া, শামীম, সুমন মিয়াসহ ৬-৭জনকে পেয়েছি, সেখানে দুইটি বিদেশী মদের বোতল দেখতে পেয়েছি, সেই দুই বোতলের মধ্যে এক বোতল পুরো খালি ছিলো আর এক বোতলের অর্ধেকটা ছিলো, তাজিবুল মীর ভাইয়ের চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছিলো না এমন কথা বলছিলো, অনেকেই বলছেন বিষয়টি রহস্যজনক।
এ মামলার বাদী মোঃ ওয়াহিদ মীর বলেন, আমার বড় ছেলে তাজিবুল মীরকে যারা মদ্যপান করিয়েছে তাদের কাউকেই আমি দেখিনি কিন্তু আমার ছেলের খালাতো ভাই রনি যাদেরকে চিনতে পেরেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি, এদিকে আমার ছেলে মৃত্যুর মুখে আর আমার ছেলের ইন্টারনেট ব্যবসা দখলের চেষ্টা করে প্রায় ৪০টি সংযোগ কেটেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মোর্শেদ ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ মারুফ আলী ভুঁইয়া (২৬)। তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে কারো কোনো বিবাদ নেই, শুধু ছেলেটা নেটের ব্যবসা করে, আমার জীবনে অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদেরকে বড় করেছি, আমার তাজিবুল মীরের ১১ বছরের একটি মেয়ে ও এক বছরের একটি অবুঝ ছেলে রয়েছে, আমার ছেলের মৃত্যুর কারণ কি? এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবের কাছে আবেদন, এ ব্যাপারে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আটক করাসহ তাদের কঠিন শাস্তিসহ সঠিক বিচার চাই।
আশুলিয়া থানার (এসআই) নোমান ছিদ্দিক বলেন, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল (মধ্যপাড়া) এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া’র অফিসে গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে তাজিবুল মীর নামের এক যুবককে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানোর অপরাধে আশুলিয়া থানায় ভিকটিমের বাবা ওয়াহিদ মীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন, এই মামলা তদন্ত চলমান এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে এই পুলিশ অফিসার জানান। উক্ত ঘটনার ২২দিন পর শনিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাজিবুল মীরকে মৃত ঘোষণা করেছেন। পর্ব-১।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *