পহেলা পৌষ থেকে শীতে কাবু তেঁতুলিয়ার জনজীবন

মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া প্রতিনিধিঃ সর্বউত্তরের জেলা প গড়ের তেঁতুলিয়ায় শীতে কাবু জনজীবন। ঘন কুয়াশা আর সূর্যের লূকোচুরিতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। প্রচ- শীতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের প্রকোপে অসহায় হয়ে দিনপাত করছে ছিন্নমূল মানুষেরা। দেশের উত্তর জনপদের সর্বশেষ উপজেলা প গড়ের তেঁতুলিয়া। হিমালয়ের অনেক কাছে হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। কিন্তু এবার যেন শীত একটু বেশি দাপুটে। ডিসেম্বরের শুরুতে শীতের তীব্রতা শুরু হলেও মাসের ১৬ ডিসেম্বর পহেলা পৌষের শুরুতেই অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় হাঁড় কাঁপাতে শুরু করেছে এই উপজেলায়।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯ টায় জেলায় তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড ধরা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।

এদিকের দিনের তাপমাত্রা অনেক কমে এসেছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রেকর্ড হচ্ছে।

কদিন ধরে হাড়কাঁপানো শীত পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবে পেটের তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে এর আগে কয়েকদিন তাপমাত্রা বাড়ার পর মাঘের শুরুতেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দেশের এই সীমান্তঘেষা উপজেলার প্রান্তিক জনপদের মানুষ।

উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী আবুল হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আগে তেমন ঠান্ডা না থাকলেও মাঘ পড়ার পর থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা। গরম কাপড় পড়লেও ঠান্ডা দূর হচ্ছে না।

মহানন্দায় পাথর উত্তোলনকারী রবিউল ইসলাম বলেন, বরফ গলা নদীর পানি এমনিতেই ঠান্ডা। তার মধ্যে হঠাৎ করে তীব্র শীত। যার কারণে কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কাল থেকে ঘরে বসে আছি।

প্রচন্ড শীতের কারণে চা বাগানের গাছের পরিচর্যা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চা শ্রমিকদের। তারা জানান, ভাই কদিন ধরে বরফের মতো ঠান্ডা। বাগানে গাছের ছাটাই করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। তাই কয়েকদিন ধরে কাজে যেতে পারছি না।

এদিকে বেড়েছে শীতজনিত নানা ব্যাধি। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগীর ভিড় জমাতে লক্ষ্য করা গেছে। শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকরা রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিচ্ছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, কদিন ধরেই তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে। জেলায় আজ (১৭ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড হয়েছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সারা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। সেখানে আজ রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *