May 13, 2025, 5:54 am
হেলাল শেখঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বিভীষিকায় কালো অধ্যায়ের এক নাম তাজরীন ট্রেজেডির ১০ বছর আজ। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর উক্ত পোশাক কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক। এ ঘটনায় আহত হন আরও প্রায় ৩শতাধিক শ্রমিক। সেই দিনের ভয়ংকর স্মৃতি মনে হলে আজও আতংকে আঁতকে ওঠে অনেকেই। ওই দিনের মানুষ পোড়া গন্ধ এখনো ভুলতে পারেনা হাজারও শ্রমিকসহ ওই এলাকার মানুষ।
ঢাকা জেলার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় স্থাপিত সেই তাজরীন ফ্যাশনের পোড়া অবস্থায় আজও দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। ১১৩জন শ্রমিকের প্রাণখেকো ভবনটি দেখে অনেক মানুষ এখনো ভয় পান। জরাজীর্ণ ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর ২০২২ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাজরীন ট্রাজেডির ১০বছর পর সেখানে ভবনটির সামনে মনে হয় তাজা প্রাণ কান্না করছে, নিরবতা সুনসান শব্দ, পুরো ভবনজুড়ে যেন দগদগ করছে সেই ২৪ নভেম্বরের ক্ষত স্মৃতি। ঘটনার দিন দেখা যায়, আগুনের প্রচ- তাপে বেঁকে যাওয়া জানালার গ্রিলগুলো চোখে ভাসিয়ে তুলছে সেই দিনের ভয়াবহতা। বরাবরই তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে এসে কারখানার ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে ওই ভবনটিতে দেখভাল করার জন্য মালিকপক্ষের একজন লোক সবসময় ভেতরে থাকেন। গণমাধ্যম কর্মী, সাংবাদিক দেখলেই লোকটি দ্রুত ওই ভবনের গেটটি আটকে বন্ধ করে দেন, তিনি কারো সাথে কথা বলেন না।
বিশেষ করে একপাশে ভাঙা সীমানা প্রাচীর দিয়ে ওই ভবনের ভেতরটা কিছু অংশ দেখা যায়, পিলারগুলোর বেশিরভাগের প্লাস্তারা খসে পড়ছে। দেখা যায়, কিছু পিলার মেরামতও করা হয়েছে। সিঁড়িঁ ঘরে আগুনের লেলিহান শিখার সেদিনের ভয়াবহতা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কালচে দাগের দেয়ালগুলো যেন সবকিছুই বলে দিচ্ছে সেই দিনের ভয়ংকর ঘটনার কথা। ভবনের ছাদের বাইরের অংশেরও পলেস্তার খসে পড়েছে।
উক্ত তাজরীন ভবনের পাশের বাড়ির মালিক আকবর মীর ও খোরশেদ সাহেব গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এই ভবনটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৮০ফুট উঁচু এই বিল্ডিং যদি ধইসা পড়ে তাইলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হইবো। দেখা যায়, ওই বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তা দিয়া অনেক মানুষ চলাচল করেন, ভবনটি ভাঙলে রাস্তার উপর আইসা পড়তে পারে। স্থানীয়রা জানান, এই বিল্ডিংয়ের চারদিকে কমপক্ষে শতাধিক বাসা বাড়ি আছে, তারা অনেকেই বলেন, ১০ বছর ধরে আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি। স্থানীয়দের দাবি-এই পোড়া মানুষের আর্তনাদের ভবনটি তারা কেউ আর দেখতে চান না।
বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরেবিন্দু বেপারী বিন্দু গণমাধ্যমকে বলেন, তোবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সুপরিকল্পিত ভাবে কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এ ঘটনায় ১১৩জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত কারো কোনো শাস্তি হয়নি বলে তিনি জানান। ভুক্তভোগীরাসহ এলাকাবাসীদেরকে উক্ত ব্যাপারে অভিযোগ দিতে হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানান। তারা বলেন, অভিযোগ দিলে তখন আমরা পদক্ষেপ নিতে পারবো। উপজেলা প্রশাসনকে বললে ইউএনও মহোদয় মার্ক করে দিলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে টিম পাঠানো হবে।
শ্রমিক নেতা রাকিবুল ইসলাম সোহাগ বলেন, তাজরীন পোশাক কারখানার অনেক শ্রমিক কোথাও চাকরি না পেয়ে চায়ের দোকান দিয়ে কোনো রকম সংসার চালাচ্ছেন। তিনি দাবী করেন, উক্ত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের খবর কেউ রাখেন না, ১০ বছর কিভাবে এই পরিবারগুলো চলছে তা বলে বুঝানো কঠিন। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্টদের অনেকের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলেও তারা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, আমরা সামান্য কিছু শ্রমিকদের সহযোগিতা করলেও অনেকেই অবহেলিত শ্রমিক, সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আহত শ্রমিকদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন আর এই অগ্নিকা-ের যেসকল শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছিলো সেসকল শ্রমিক এবং তাদের পরিবারকে এই মালিকের নতুন কোনো কারখানা অথবা হাসপাতাল বানিয়ে তাদেরকে পূর্ণবাসন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা। তিনি আরও বলেন, মালিক পক্ষ যদি তা না করেন তাহলে এই মালিক পক্ষকে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি গার্মেন্টর্স ওয়ার্কাস লীগের পক্ষ থেকে, আমরা চাই শ্রমিকরা তাদের সুবিচার পাক।