পাইকগাছায় খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গাছিরা

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা ( খুলনা )।।
গ্রীষ্মকে বিদায় জানিয়ে শীতের আগমনে শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ তোলার কাজ। সারা দেশের ন্যায় তাই যেন বসে নেই সুন্দরবন উপকূলীয় অ ল দক্ষিণ জনপদের পাইকগাছা এলাকার গাছিরাও, প্রতিটি মুহূর্ত রস সংগ্রহের কাজে এ উপজেলার গ্রামে গ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা । খেজুর গাছের অগোছালো শুকনা পাতাগুলো ফেলে দিয়ে গাছগুলোকে নতুন চেহারায় আনছে গাছিরা। রস বের করার জন্য গাছকে প্রস্তুত করে নলি ও ঠিলে (ভাড়) ঝুলিয়ে দিবেন। তারা এই রস দিয়ে তৈরি করেন সুস্বাদু গুড় এবং পাটালি। এক সময় পাইকগাছা উপজেলার মাঠ-ঘাট এবং রাস্তার দুইধারে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ ছিলো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সব খেজুর গাছ। কিন্তু এখনো যে গাছ গুলো আছে তা থেকেই শীতের রস সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছেন গাছিরা।ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর মধ্যে হেমন্ত একটি উল্লেখযোগ্য ঋতু আর এই ঋতুতেই আসে শীত। সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছগুলোকে নতুন করে সুসজ্জিত করেন গাছিরা এবং রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন তারা। এর ফলে অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছগুলোর কদর বেড়ে গিয়েছে। এখনো তেমন শীতের প্রভাব না পড়লেও খেজুর রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। গাছের সংখ্যা অল্প থাকার কারণে চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে অনেক গাছিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২হাজার রস আহরণ যোগ্য খেঁজুরগাছ আছে। উপজেলার গদাইপুর, গোপালপুর, মঠবাটী, পুরাইকাটী, মালথ, সিলেমানপুর,রাড়ূলি ও চাঁদখালী সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা জানান, অন্য মৌসুমে তারা বিভিন্ন কাজ করেন। কিন্তু শীত এলেই খেঁজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অ লে খেঁজুর রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় করেন তারা। এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেঁজুরের গুড়েরও বেশ চাহিদা। তারা আরো জানান, তাদের নিজের গাছের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন। এ ব্যাপারে গাছিরা আরো বলেন, খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া রস, গুড় ও পাটালির দাম থাকে একটু চড়া। তবু এই রস নিতে ভুল করেন না সকল শ্রেণীর মানুষ।গাছে রস সংগ্রহের জন্য যে মাটির পাত্র পাতা হয়,এলাকায় ভাড় বলে পরিচিত। কাঁচা রস প্রতি ভাড় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আর পাটালী প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী করা হয় আর্কষণীয় ও মজবুত শীতল পাটি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন প্রয়ই বিলুপ্তির পথে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, খেঁজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে খেঁজুর রস আহরণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া গাছির অভাবে অনেক গাছ থেকে রস আহরণ করা যায় না। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেঁজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই কৃষি অফিস থেকে এলাকার খেঁজুরগাছ রোপন করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান,পাইকগাছা উপজেলাতে প্রায় ১২হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। সেখান থেকে কৃষকরা খেজুরের রস সংগ্রহ করবে এবং তা থেকে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি পণ্য তৈরি করে সেটা বাজারে বিক্রি করে তারা ব্যাপক ভাবে লাভবান হবেন।

ইমদাদুল হক,
পাইকগাছা ( খুলনা ) প্রতিনিধি

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *