গোদাগাড়ীতে তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গড়গড়িয়া এলাকার একটি ধান ক্ষেত থেকে এক তরুণীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধাররের ঘটনায় তরুনীর স্বামী তুষার আলীকে আটক করেছে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার রাতে মির্জাপুর নিজ বাসা থেকে আটক করা হয়। সে তানোর উপজেলার সরনজাই মির্জাপুর গ্রামের নজিরউদ্দীন ছেলে। প্রঙ্গগতঃ নিহত তরুণীর নাম সাহেরা খাতুন (২০)। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার চাতরা গ্রামের দানেস আলীর মেয়ে। সাহেরার স্বামীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী তানোর উপজেলার সরনজাই মির্জাপুর গ্রামে।

গত ১৫ অক্টোবর রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানাধীন পাকড়ি ইউনিয়নের গড়গড়ি গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। মৃত নারী তার বাবার বাড়ি হতে গত ১২ অক্টোবর বিকাল ৪ টার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এরপর থেকে তার বাবা মা অনেক খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান পাননি।

পরবর্তীতে গড়গড়ি গ্রামে ধান ক্ষেতে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে লাশটির সন্ধান পায় স্থানীয় জনগণ । পাশের গ্রামে নারীর লাশ উদ্ধারের কথা শুনে সেখানে মৃত তাহেরার পরিবারের লোকজন সেখানে যান। সেখানে গিয়ে তারা মৃত নারীর পরিচয় শনাক্ত করেন। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে গোদাগাড়ী থানাধীন কাঁকনহাট তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। রাজশাহীর সম্মানিত পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সনাতন চক্রবর্তীসহ গোদাগাড়ী থানা পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। অবশেষে এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে এবং হত্যাকারী উক্ত মৃত নারীর স্বামী মোঃ তুষার আলী (২৩), পিতা-মোঃ নজির উদ্দিন, সাং-মির্জাপুর, থানা-গোদাগাড়ী, জেলা-রাজশাহীকে গত ১৮ অক্টোবর গ্রেফতার করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি ১৯ অক্টোবর আসামি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। প্রায় সাত মাস আগে মৃত তাহেরা বেগমের সাথে বিয়ে হয় আসামি মোঃ তুষার আলীর। মৃত তাহেরা বেগম মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীন ছিলেন। ফলে মাঝে মধ্যে সে পাগলামি আচরণ করতো। এ কারণে মোঃ তুষার আলী তার স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো।

মৃত তাহেরা বেগম গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সময় তার বাবার বাড়িতেই থাকতো। ঘটনার দিন ১২/১০/২২ তারিখ বিকাল বেলায় মোঃ তুষার আলী তার স্ত্রীকে কাঁকনহাট বাজারে ডেকে নিয়ে এসে কিছু সময় পর সন্ধ্যা অনুমান ৭.০০ টার দিকে তার স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে রাখতে যাওয়ার নাম করে গোদাগাড়ী থানাধীন গড়গড়িয়া নামক গ্রামের ধান ক্ষেতের রাস্তার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথে এক নির্জন জায়গায় বাটন মোবাইল ফোন দিয়ে স্ত্রীর মাথায় সজোরে আঘাত করে।

এ আঘাতের ফলেই তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে রেখে মোঃ তুষার আলী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য , ঘটনার আট দিন আগে ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে যাচ্ছে বলে আসামি মো: তুষার আলী তার গর্ভবতী স্ত্রী মোসাঃ তাহেরা বেগমকে তার শ্বশুর বাড়িতে রেখে যায়। তুষার আলীর শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার লোকজন জানতো যে সে ঢাকায় রয়েছে। কিন্তু লাশ উদ্ধারের সংবাদ প্রাপ্তির মাত্র ঘন্টা দুয়েক সময়ের মধ্যেই সে শ্বশুর বাড়িতে উপস্থিত হয় ও মায়া কান্না শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে উপস্থিতি হওয়া ও তার অসংলগ্ন কর্থাবার্তার বিষয়গুলো তদন্তের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিয়ে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, মোঃ তুষার আলীই এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে এবং নিজ স্ত্রীকে হত্যার পর থেকে সে রাজশাহীর মধ্যে পার্শ্ববর্তী এলাকায় পলাতক ছিলো। হত্যাকান্ডের দায় থেকে নিজেকে আড়াল করতে ঢাকায় অবস্থান করার মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিল। গ্রেফতারকৃত তুষার আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, নিহতের স্বামীর আলম পেশায় নির্মাণ শ্রমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের ১৬ অক্টোবর রোববার তরুণীর পিতা দানেস আলী গোদাগাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *