May 13, 2025, 9:54 am
হেলাল শেখ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়ায় বহুল আলোচিত ইলিম সরকার হত্যা মামলা ও বাড়ি ঘর ব্যবসা দখল করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি আশুলিয়া থানায় জিডি ও অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং) সকালে আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া সরকার পাড়ার নিহত ইলিম সরকারের পিতা হাজী মোঃ ফজল সরকার (৭০) নিহতের স্ত্রী কেমেলী ও তার বাবা কালু’র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে সুলতানা আক্তার কেমেলি কিছুদিন পূর্বে জেল খেটে আদালত থেকে জামিনে এসে নিজের অপরাধ আড়াল করতে নিহতের বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৭/০৩/২০২১ইং তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাবার খাওয়া শেষে ইলিম সরকার (৩৬), তাহার স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলিসহ তাদের পূর্ব ভিটার ঘরের দক্ষিনের বেড-রুমে শুইয়া থাকেন, উত্তরের রুমে তাহাদের পুত্র মোঃ কাইফ সরকার (১০), ও মেয়ে মোছাঃ কাসফিয়া সরকার (০৬) শুইয়া ঘুমাইয়া পড়ে। এরপর সুলতানা আক্তার কেমেলি ২৮/০৩/ ২০২১ইং তারিখ সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে জেগে জরুরী প্রয়োজনে বাহিরে আসেন। এসময় ইলিম সরকারসহ তাহার ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে ছিলো। পরিবারের সদস্যদের দাবি- অদ্য ২৮ মার্চ ২০২১ইং তারিখ সকাল ১০টার দিকে তাহাদের বাড়িতে ফিরিয়া ইলিম সরকারের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায় তার স্ত্রী। তার গলার নিচে ১টি, পেটে ১১টি ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হইয়া মৃত্যু বরন করিয়াছে মর্মে দেখিতে পাইয়া তখন ডাক চিৎকার করিয়া কান্নাকাটি করিতে থাকায় লোকজন ইলিম সরকারের বাড়িতে গিয়া খাটের উপরে তাহার মৃতদেহ দেখা যায়। এরপর আশুলিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেন বলে পুলিশ জানায়।
নিহত ইলিম সরকারের বাবা ফজল সরকার বলেন, আমার ছেলে ইলিম সরকারের হত্যার বিচার চেয়ে আমি বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি। মামলা নং ৬৮/ ধারা ৩০২/৩৮০/৩৪। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ মামলার আসামী কেমেলি জামিনে এসে ইলিমের ব্যবসা, বাড়ি ঘর দখল করছে এবং আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তার বাবা ও ভাইদেরকে দিয়ে আমাদের হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে। এখনও তারা বিভিন্ন ভাবে আমাদের পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। আমার পরিবারের ছোট বড় সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমার ছেলে ইলিম হত্যার আসামীদের ফাঁসি চাই।
নিহতের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলি বলেছেন যে, আমার স্বামী হত্যার সাথে আমি জড়িত না, তবুও আমি জেল খাটছি, আমার স্বামী অনেক দিন ধরে অসুস্থ্য ছিলেন, আমার বিয়ের পর থেকে কোনো সুখ শান্তি পাইনি তবুও কোনো অভিযোগ করিনি। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর বাড়ি ঘর ব্যবসা বাণিজ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে যারা তাদের কঠিনতম শাস্তি চাই, আমার স্বামী মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া দুই সন্তানকে নিয়ে আমি অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমাকে ও আমার পরিবারকে ফজল সরকার ও তার ছেলে সেলিম সরকারসহ তার লোকজন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে,আমার স্বামীর বাড়িতে আমি থাকতে পারছি না, ভয় লাগে আমার। আমাদের দোকানপাট ব্যবসা সব সেলিম সরকার দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নিহতের একমাত্র বড় ভাই সেলিম সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ইলিম সরকার নেশাখোর ছিলো, তবে তার সাথে আমার কোনো বিবাদ ছিলো না। সে কোথাও গেলে তার ব্যবসা দেখতাম আমি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রী সুলতানা আক্তার কেমেলি আমার ভাইকে হত্যা করে এই মামলায় আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের অসুস্থতার সুযোগে তার স্ত্রী পরকীয়া করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমার ভাই বৌ এর বাবা কালু’র বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা থাকলেও তার কিছুই হচ্ছে না, কারণ, তিনি একজন মামলাবাজ বটে। তার পরিবারের লোকজন মোটেই ভালো না বলে তিনি জানান।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ইলিম হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও বিবাদ চলছে। উক্ত ইলিম সরকার একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন কিন্তু তিনি মাদকের সাথে জড়িত ছিলো বলে সূত্র জানায়, এ ঘটনার দিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা, মাত্র দুই ঘন্টা সময়ের মধ্যে ইলিম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে এবং ওই বাড়িতে সিসি টিভি ক্যামেরা ছিলো, ৬ মাসের বেশি সময় লেগেছে আসামীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে। এরপর স্বামী হত্যা মামলায় জেল খেটে জামিনে এসে আরও শক্তিশালী ভুমিকায় রয়েছে নিহতের স্ত্রী কেমেলি, পুরো বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল। উক্ত বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।