January 3, 2025, 1:12 am
হেলাল শেখঃ বর্তমানে প্রতারক চক্র সক্রিয়-ঢাকার আশুলিয়ায় প্রতারক চক্র কর্তৃক জাল জালিয়াতি করে চাকরি দেয়া ও কিস্তির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলার বন্ধু উন্নয়ন সংস্থা’র সন্ধ্যান, র্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে ২ প্রতারককে গ্রেফতার করেছেন।
ঢাকার আশুলিয়ায় “বাংলার বন্ধু উন্নয়ন সংস্থা” নামের একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন আর্থিক সংস্থা এমএলএম ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিম্মি করে প্রতারক চক্র-তাদের কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ আগস্ট ২০২২ইং তারিখ বিকেল ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জিরাবো বাগানবাড়ি এলাকার মোঃ শহিদুল ইসলাম ওরফে মুরগি শহিদের বাড়ির ৩য় তলায় অভিযান পরিচালনা করে “বাংলার বন্ধু উন্নয়ন সংস্থা’র ২৫টি ফরম, বিভিন্ন রেজিস্টার, ৬টি নিয়োগপত্র, ৫৩টি মানি রিসিভ, আইডি কার্ড ও বিভিন্ন কাগজপত্রসহ উক্ত ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোঃ শরিফ মিয়া (৩৬) ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক (৪০) কে গ্রেফতার করেছেন।
র্যাব-৪ জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতরা তাদের প্রতারণার কথা স্বীকার করে এবং বিভিন্ন সাধারণ ও নিরীহ লোকজনের নিকট হতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমানের নগদ অর্থ প্রতারণামূলক ভাবে আত্মসাৎ করে আসছিলো। তাদের প্রতারণার কৌশলঃ আশুলিয়া থানাধীন জিরাবো বাগানবাড়ি এলাকায় “বাংলার বন্ধু উন্নয়ন সংস্থা” একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটি প্রতারণামূলক ভাবে উত্তরা লের গাইবান্ধা জ্বীনের বাদশা এলাকায় এবং আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় তাদের এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। র্যাব জানায়, উক্ত ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি এ্যাডমিন অফিসার ও বিভিন্ন লোভনীয় পদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮০-৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন এবং কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া হলেও তাদের বেতনের টাকা কখনো দেয়া হতো না। এ প্রতারক চক্রের গাইবান্ধা এলাকায় অবাি ত ঘোষণার পর ঢাকা জেলার জনবহুল এলাকা আশুলিয়ায় শহিদুল ইসলামের নিকট তারা আশ্রয় নেয়।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ইউনুছ আলী বলেন, র্যাব-৪ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, উক্ত প্রতারক চক্রের সাথে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয়রা জানান, আশুলিয়ায় ১০-১২ জনের একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হওয়ায় বাড়ছে প্রতারণা। সেই সাথে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। আশুলিয়ায় এই প্রতারক চক্রের ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এর আগে ১০জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪। অনেকেই আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও সেই অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে বলে সূত্র জানায়। আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচট এলাকার মজিবুর রহমানের বাড়ীর ভাড়াটিয়া মোঃ রেজাউল করিম (৪০) গণমাধ্যমকে বলেন, বগুড়ার সাড়িয়াকান্দির রৌহদহ এলাকার মৃত ইজ্জত আলীর ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ ১০-১২ জনের একটি প্রতারক চক্র আশুলিয়া এলাকায় থেকে বিভিন্ন কৌশলে আমার কাছ থেকে ৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক ভাবে সহি স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি এ বিষয়ে মামলা করার জন্য আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করিয়েছি। তিনি বলেন, এই চক্রের সাথে আরও ১০-১২ জন প্রতারক আছে, যারা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে থাকে, তার অনেক প্রমান আছে বলে এই ভুক্তভোগী জানান। এ বিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর মোহাম্মাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, আশুলিয়ায় নারী ও পুরুষসহ প্রতারক চক্র বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে, র্যাব কর্তৃক প্রায়ই দুই চারজন গ্রেফতার হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি অপরাধ দমন করার জন্য। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত আমরা অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের সাথে জড়িতদের আটক করে আইনগত ব্যববস্থা নিবো। র্যাব-১ এর একজন গোয়েন্দা অফিসার জানায়, আশুলিয়ায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমন করতে আমরা কাজ করছি, আমাদের এ ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
র্যাব-৪ এর বিশেষ একটি দল এর আগে আশুলিয়া ও কালিয়াকৈর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০জন প্রতারক ভুয়া ডিবি পুলিশকে গ্রেফতার করে। ঘটনার দিন রবিবার বিকেলে সাভারের নবীনগর সিপিসি-২, র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে ১০জন ভুয়া ডিবি পুলিশকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন কোম্পানি কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খাঁন। এরপর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। র্যাব-৪ এর কোম্পানী কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খাঁন জানান, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় এই চক্রটি ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানসহ গাড়িতে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছিলো। র্যাব-জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার দিন রবিবার ভোর রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আশুলিয়া ও কালিয়াকৈর পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০জনকে আটক করা হয়। এসময় ডাকাতি কাজে ব্যবহত ১টি প্রাইভেটকার, একটি অটোরিক্সা, তিনটি ওয়াকিটকি, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, একটি বেতের লাঠি, ১২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, বগুড়ার আশরাফুল (৩২), শেরপুরের রুবেল (৩০), কিশোরগঞ্জের আরিফুজ্জামান শরিফ (৩৮), নেত্রকোণার রফিকুল ইসলাম (৩০), নড়াইল জেলার রুবেল মুন্সী (৩২), শেরপুর জেলার সাকিব (১৯), জামালপুরের ইউসুফ (২৫), কুষ্টিয়ার আবু তাহের (৩৮), টাঙ্গাইলের সুমন মিয়া (২৩)। জানা গেছে, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ৭-৮টি গ্রুপ রয়েছে এই প্রতারক চক্রের। তারা কখনো ভুয়া ডিবি পুলিশ, কখনো ভুয়া সাংবাদিক, কখনো ভুয়া উকিল, কখনো ভুয়া মানবাধিকার কর্মকর্তা সেজে ফিটিংবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এরূপ ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।