January 15, 2025, 8:29 am
মো; বাবুল হোসেন পঞ্চগড় :
আমনের ভরা মৌসুমে সার সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের কৃষকেরা। খুচরা বাজারে সার পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দাম হওয়ায় ডিলারের দারস্ত হচ্ছেন তারা। কিন্তু সেখানেও প্রত্যাশিত সার বরাদ্দ না থাকায় চাহিদামত না পাওয়ার অভিযোগ। অনেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। প্রয়োজন মতো সার না পেলে এবার আমন আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে সার বিতরণ করছেন ডিলার। সার পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। যেখানে সারের বরাদ্দ পটাশ ৮৪ বস্তা, টিএসপি ১১০ বস্তা এবং ইউরিয়া ১১০ বস্তা। প্রতিজনকে দেয়া হবে এক বস্তা করে পটাশ, টিএসপি ও ইউরিয়া সার। সে হিসেবে ৮৪ জন কৃষক পাবে পটাশ, টিএসপি ও ইউরিয়া সার এবং ২৬ জন পাবে শুধু টিএসপি ও ইউরিয়া সার। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে থাকা অনেককেই সার ছাড়াই ফিরতে হবে। এদিকে, সার নিতে আসা চাষিদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে করা হয়েছে পুলিশ মোতায়েন। একই অবস্থা অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও।
পঞ্চগড়ে ৫০ কেজির এক বস্তা ইউরিয়া সার ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায় এক হাজার ১০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকা। একইভাবে এমওপি সারের বস্তা সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা হলেও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা। টিএসপি সার ডিলার বিক্রি করছে এক হাজার ১০০ টাকা, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা। ডিএপি সার ডিলারের কাছে পাওয়া যায় ৮০০ টাকায়, খোলাবাজারে যা এক হাজার ১০০ টাকা।
খোলাবাজারে সার কিনতে চড়া দাম দিতে হয় বলে কৃষকরা ভিড় জমিয়েছেন ডিলারের কাছে। কিন্তু ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত সার না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নিরুপায় কৃষকের খোলাবাজার থেকে সার সংগ্রহ করতে বস্তাপ্রতি বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
সার নিতে আসা খবিরুল ইসলাম বলেন, আমন ধান রোপণের পরে এখনো জমিতে সার দেইনি। সারের এমন সংকট হবে কল্পনা করিনি। লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট করে সার নিতে হচ্ছে। তাও আবার এক বস্তার বেশি দেয় না।
ময়নুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাইনি। সার নিতে এসে কাড়াকাড়ি অবস্থা। ধাক্কাধাক্কিও হচ্ছে। এভাবে আমাদের পক্ষে আমন আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ জেলায় আগস্ট মাসে আট হাজার ৬৯০ টনের বিপরীতে চার হাজার ৯৯৭ টন ইউরিয়া, চার হাজার ৩১৩ টনের বিপরীতে ৮৯৩ টন এমওপি, দুই হাজার ৫৬২ টনের বিপরীতে ৭৬৫ টন টিএসপি এবং দুই হাজার ২৩০ টনের বিপরীতে ৬৭৯ টন ডিএসপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে চাহিদার তুলনায় সার বরাদ্দ নেই বললেই চলে।
পঞ্চগড় বিএডিসির সার ডিলার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে হিমশিম খেততে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের এখানে এমওপি সারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুতই সার সংকট কেটে যাবে।