চোরের পেছনে লগ্নি কাটান চট্টগ্রামের ৩ স্বর্ণ ব্যবসায়ী

মহিউদ্দীন চৌধুরীঃ
চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানাধীন মুনির নগরের আনন্দবাজার মান্নান বিল্ডিংয়ে চুরির পরিকল্পনা হয়েছিল দেওয়ানহাটের মিস্ত্রীপাড়া মনিহার জুয়েলার্স ও রাজ জুয়েলার্সে। গত ১৪ জুলাই আব্দুল মান্নানের বাসা থেকে
চুরি হওয়া স্বর্ণ কিনে নিয়েছিলেনও চট্টগ্রামের পাঁচ স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং সোনা চুরির বড় এ নেটওয়ার্ক চট্টগ্রাম নগর থেকে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এমন এক ঘটনায় চোরাই সোনা কেনার অপরাধে ডবলমুরিং থানা পুলিশ মনিহার জুয়েলার্সের মালিক সুদীপ্ত সেন (২৩) ও রাজ জুয়েলাইসের মালিক অঞ্জন ধরকে (৪০) গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ বলছে, পাঁচ স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা পেলেও, তিন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এ চুরির ঘটনায় লগ্নি খাটিয়েছেন।
এ চুরির ঘটনায় পুলিশ চোরের পেছনে টাকা খাটানো সুদীপ্ত সেনের পিতা চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পেতনশাহ মাজার গেইট এলাকার মোহছেন আউলিয়া জুয়েলার্সের মালিক শিমুল সেন বাসু জড়িত।

পুলিশ জানিয়েছেন, তারা চোরচক্রের কাছ থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও সাড়ে ৫২ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নগরের আনন্দবাজার এলাকার আব্দুল মান্নান গত ১২ জুলাই স্বপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে যান। তিনি গত ১৪ জুলাই কক্সবাজার থেকে ফিরে দেখেন তাঁর বাসা চুরি হয়ে গেছে। চোরের দল তাঁর বাসা থেকে ৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আব্দুল মান্নান বাদি হয়ে বন্দর থানায় মামলা নং-১৬, তারিখ-১৬/৭/২০২২ দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনেক আসামি করা হয় । তদন্তে নেমে বন্দর থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে। এরমধ্যে চোরচক্রের অন্যতম হুতা মাসুদ ও মোহাম্মদ খোকনকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ২৭ জুলাই মনিহার জুয়েলার্সের মালিক সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করে। সে পটিয়া থানার ধলঘাট ইউনিয়নের শিমুল সেনের পুত্র। একই সময় রাজ জুয়েলার্সের মালিক অজ্ঞন ধরকে গ্রেফতার করে।

বন্দর থানা পুলিশের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চুরির ঘটনার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন সুদীপ্ত সেন ও তার বাবা শিমুল সেন। মনিহার জুয়েলার্সে বসে হয় চুরির পরিকল্পনা। সুদীপ্ত ও তার পাশের দোকান রাজ জুয়েলার্সের মালিক আঞ্জনকে পুলিশ ধরার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে চুরির ঘটনা এবং রহস্য বেরিয়ে আসে।

সুদীপ্তের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোতোয়ালী থানার হাজারী লেইনের জুয়েলারি মার্কেট কাঞ্চন শিল্পালয় ও দয়াময় গোল্ড টেস্টিং এ অভিযান চালিয়ে মান্নানের বাসা থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে পুলিশ।
সুদীপ্তের বাবা শিমুল সেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছেলে না জেনে চোরচক্র থেকে স্বর্ণ কিনে ফেঁসে গেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠানে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , চুরি-ছিনতাই কিংবা ডাকাতি করা স্বর্ণালঙ্কার অপরাধীদের কাছ থেকে কিনে নেন সুদীপ্ত ও তার বাবাসহ জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। অপরাধীরা স্বর্ণালঙ্কার ওই সিন্ডিকেটের কাছে কম দামে বিক্রি করে। তারপর নতুন আকৃতিতে আবার বাজারে আসে এসব স্বর্ণালঙ্কার। চোর চক্রের সদস্যরা কেউ কখনো গ্রেফতার হলে তাদের পরিবার চালানো থেকে শুরু করে জেল থেকে বের করার দায়িত্বও নেন সুদীপ্ত,তার বাবা শিমুল সেন বাসু ও অঞ্জনের সমন্বয়ে গড়া চক্রটি।

উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সুদীপ্ত
এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চুরি-ডাকাতি করা স্বর্ণালঙ্কার কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *