নড়াইলে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর ও মন্দির পরিদর্শন করলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী

জান্নাতুল বিশ্বাস.নড়াইল!!
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
তারা স্থানীয় দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ বোরহান উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা বনিরুল ইসলাম বনি, সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম নয়নসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া গোবিন্দ সাহার পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা সহযোগিতাও করেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এ সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কোনো স্বজ্জন মুসলমান, সঠিক মুসলমান কারো বাড়িতে আগুন দিতে পারেন না। মুসলমান নাম থাকলেই তিনি মুসলমান হয় না। মুসলমান নাম থাকলেই আল্লাহর বান্দা হয় না। মুসলমান যদি স্বজ্জন মুসলমান না হয়, তবে সে মানুষের অধম। আজকে শুধু সংখ্যালঘু নামের কারণে দরিদ্র মানুষের উপর অত্যাচার চলছে। আমাদের সবাইকে মিলে দরিদ্রতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের স্বপ্নই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এ হামলা ও ভাংচুরের নিন্দা জানাই।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা, বাড়িঘর-দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। যারা এ ঘৃণিত ঘটনার সাথে জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানাই। আর এ ধরণের হামলা ঘটার পরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়। তাই এসব ঘটনা দুর্বৃত্তকারীদের উৎসাহ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে বিচারটা দ্রæত হওয়া জরুরি। তা না হলে দিন দিন উগ্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ওইদিন জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। ওইদিন বিকেল থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে।

বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহার বাড়িসহ ৫-৬টি বাড়িঘর ভাংচুর করেন। এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘরটি পুড়ে গেছে। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাংচুরসহ ইট ছুঁড়েছে বিক্ষুদ্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে।
এদিকে, মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে কলেজছাত্র আকাশ সাহার (২০) বিরুদ্ধে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুুল আলমের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তিনদিনের মঞ্জুর করেন। এর আগে শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে খুলনা থেকে আকাশ সাহাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে ওইদিন (১৬ জুলাই) রাত ৯টা ১৫ মিনিটে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দিন কচি সরদার বাদি হয়ে লোহাগড়া থানায় আকাশের নামে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দাঙ্গা সৃষ্টির অপরাধ’ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে, সাহাপাড়ার বাড়িঘর ও দোকান ভাংচুর এবং দু’টি মন্দিরে হামলার ঘটনায় রোববার রাতে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন এসআই মাকফুর রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লোহাগড়া থানার ওসি শেখ আবু হেনা মিলন।
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

মো জান্নাতুল বিশ্বাস
নড়াইল প্রতিনিধি।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *