October 14, 2024, 11:54 pm
হেলাল শেখ,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে থাকা একটি পোস্টার দেখে আশুলিয়া থানার সামনে ভিডিও বলে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকাল ১০ টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিও’র হুবহু মিল পাওয়া যায়। এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারাদিন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
উক্ত ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজনের হাত ও একজনের পা ধরে লাশ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন।
এর আগে ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন হত্যাকারীরা। সর্বশেষ লাশ তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের।
সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে। ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সাথে মিল পাওয়া যায়। সেই পোস্টারটি এখনো দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেখানে স্থানীয় দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখে সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এসময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে থাকেন।
এরপর আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারীরা থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা কেউ মুখ খোলেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে থানায় হামলার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন, বিকেল ৪টা পর থেকে চলে গোলাগুলির ঘটনা। এসময় আশপাশে আরও শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত থেকে নৃশংস হামলা চালায়, এতে ছাত্রসহ বেশ কিছু ব্যক্তি নিহত হোন।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি। প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ইং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়।
এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এঘটনায় ৫ আগস্ট ২০২৪ইং তারিখেই আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। (তবে ভ্যানে তোলা লাশ ভ্যান থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া লাশের কোন হিসাব পাইনি বলেও জানান অনেকে। উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিছু মামলা রেকর্ড করা হলেও অনেক নিহত ভিকটিমের পরিবার জানান, আমরা বাদী হয়ে মামলা করতে পারিনি। উক্ত বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল।