April 22, 2025, 6:42 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
পাথরঘাটা যুবদলের আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নিয়ে আনন্দ মিছিল বরিশালে মা-দকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় কালে গু-লিবিদ্ধ হয়ে একজনার মৃ-ত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে আওয়ামীলীগের ৫ নেতাকে আ-টক করেছে পুলিশ বিএনপি নেতা পরিচয়ে জমি দ-খলের অ-ভিযোগ সুন্দরবনে অভয়ারণ্যে নিষেধাজ্ঞার মাঝেই বি-ষ প্রয়োগে মাছ শি-কার জীববৈচিত্র্য হু-মকির মুখে সুন্দরবনের উপকূলে বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন কুমিল্লায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলমকে গন সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে “স্বপ্ন”র প্রতিষ্ঠাতা সাহদীন সাবুর ৪৫ তম জন্মদিন পালিত পুঠিয়ায় অ-গ্নিকান্ডে বসতবাড়ি সহ গোয়ালঘর পু-ড়ে ছাই; ৫ লক্ষধিক টাকার ক্ষ-য়ক্ষতি নলডাঙ্গায় অটো উল্টে এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃ-ত্যু
গোদাগাড়ীর পিরিজপুর এগ্রো ফর্মের ড্রাগন চাষে ৬ মাসে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা লাভ করেছেন

গোদাগাড়ীর পিরিজপুর এগ্রো ফর্মের ড্রাগন চাষে ৬ মাসে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা লাভ করেছেন

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ড্রাগন চাষে কৃষকেরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, আগামীতে এ বরেন্দ্রের পোড়া মাটিতে ড্রাগণ চাষ আরো বেশী পরিমান জমিতে চাষ করা হবে, বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগি, দীর্ঘ সময় ফল দেয়, উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের পিরিজপুর এলাকায় ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছে পিরিজপুর এগ্রো ফার্ম, বসন্তপুর এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন হেদায়েতুল ইসলাম। প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ড্রাগণ চাষ হয়েছে বলে জানান, গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোসাঃ মরিয়ম আহম্মেদ। তিনি আরও বলেন, ড্রাগন একটি উচ্চ মূল্যের সুস্বাদু বিদেশি ফল। এই ফল ঔষধি গুণসম্পন্ন । এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা মানুষের শরীরের জন্য ভালো। একবার লাগানো হলো প্রায় ১৫-২০ বছর ফল দেয়। পানি কম লাগে। বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষের উপযোগী। বরেন্দ্র অঞ্চলে যেহেতু পানির সংকট রয়েছে তাই ড্রাগন ফলের চাষ এই এলাকার জন্য একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে চাষ করা যেতে পারে। কৃষি বিভাগ বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন ফলের সম্প্রসারনে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

রাজশাহী চাঁপাই নবাবগজ্ঞ মহানগরী সড়কে দিয়ে আসা যাওয়ার পথে প্রাণ কম্পোনীর পার্শ্বদিয়ে পিরিজপুরের দিকে ২ কিলোমিটার আসলে বামপার্শ্বে পড়ে পিরিজপুর এগ্রো কম্পানীর ড্রাগন বাগান। বাগানটি এক সুন্দর মনোরম পরিবেশে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান গড়ে তুলেছেন। এগ্রো ফর্মের মালিক প্রকৌশলী রাজুর স্ত্রী আমেনা সিদ্দিকা। তিনি বাগানটি সম্প্রসারণ করার জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তার অপর দুই মালিকানা ব্যক্তিত্ব শরিফুল ইসলাম মাষ্টার ও শীষ মোহাম্মদ রুবেল। জমি লীজ, সার্চ টাওয়ারসসহ অফিস অফিস নির্মানের কাজ শেষ করেছেন। পুরো বাগানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্ররণ করা হয়েছে। বাগানটি গোদাগাড়ীর সবচেয়ে বড় ড্রাগন বাগানে পরিনত হয়েছে।
বাগানটি দেখে মনে যেন তপ্ত বরেন্দ্রভূমির বুকে মন ভালো করে দেয়া দৃষ্টি সুখকর একখন্ড আশাজাগানিয়া সবুজ গালিচা” যে কারই মন কেড়ে নিতে পারে। অত্যান্ত প্রিয় ও অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যাক্তিত্ব স্বপ্নবাজ গুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম এ বাগানটির মালিকানার অংশিদার তিনি বাগানটির সার্বিক দেখা শুনা করেন, তার স্বপ্নের ড্রাগণ বাগানটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরিচর্যা ও হার্দিক ভালোবাসায় এবং প্রকৃতির বদন্যতায় তর তর করে বেড়ে উঠছে ড্রাগন ফলের গাছগুলো। কৈশর ও তারুণ্য পেরিয়ে ড্রাগন গাছগুলো এখন যৌবনে পদার্পণ করায় ফুল এসেছে ফলও ধরেছে। ফল পাঁকায় কয়েক চালান বাজারজাত করা হয়েছে।
আর মাত্র কয়েক দিন পরেই আরও পাঁকা ড্রাগন ফল উঠবে। সৃষ্টি সুখের তৃপ্তিময় হাসি আরও ছড়িয়ে দেবে এগ্রো ফার্মের সদস্যদের মুখে। এ বাগানের বিশেষত্ব হলো এখানে কর্মরত প্রতিটি কর্মীই তাদের দায়িত্ব ও কর্মের প্রতি ভীষণ আন্তরিক, যেন প্রতেক্যেই মনের আনন্দে কাজ করে চলেছে ক্লান্তিহীনভাবে!এর অন্তর্নিহিত কারণ হল তারা প্রত্যেকে শ্রমিক না ভেবে নিজেদের কে স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রজেক্টের এক একজন অংশীদারভাবেন।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম জানান, আমি বাগানটিতে কয়েকবার গিয়ে ছিলাম আমার খুব ভাল লেগেছে, যে যাবে তারই ভাল লাগবে। যতক্ষণ ছিলাম আশ্চর্য মুগ্ধতায় শুনছিলাম এগ্রো ফার্মের মালিকানা সদস্য প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম সাহেবের সৃজনশীল সুন্দর স্বপ্ন, সম্ভাবোনা, অসম্ভব কে সম্ভব করার দারুন সব পরিকল্পনা, নতুন কিছু করার উদগ্র বাসনা আর সর্বোপরি সমাজের পরিশ্রম প্রিয় মানুষগুলোর জন্য এক সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্রের দরজা খুলে দেয়ার ইচ্ছের গল্পটা। মাষ্টার মশায় খুব ভাল মনের মানুষ। উনার ভালবাসার টানে সেখানে বার বার যাওয়ার ইচ্ছে হয়।

মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ প্রতিবেদককে
বলেন, গোদাগাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগণ ফল চাষের জন্য উপযোগী, ১ জুলাই থেকে ৩১ জানুয়ারী ৬ মাসে ড্রাগন উত্তোলন করা হয়েছে ৬০ টন, ২৫০ টাকা কেজি দরে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সবসমেত খরচ হয়েছে ৫০ লাখ টাকা, লাভ হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ এলাকায় এটা নতুন, সেচ কম লাগে, রোগ বালাই, পোঁকার আক্রমন কম হয়, দীর্ঘসময় প্রায় ২৫ বছর ফল পাওয়া, অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশী লাভবান হওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের অনুসরণ করে বরেন্দ্র এলাকায় ড্রাগণ ফল চাষে বিপ্লব ঘটবে ইনসাল্লাহ। যা যোগ হবে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে। সংস্থাপনের সাবেক সচিব হারুন অর রশিদ, কৃষি অধিদফতের মহাপরিচালক, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আলী আক্তারসহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন পর্যারের কর্মকর্তা বাগান পরিদর্শনে আসেন বলে তিনি জানান।

শীষ মোহম্মদ রুবেল এ প্রতিবেদকে বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাতে দেখাতে বলেন, আমরা অন লাইনে ড্রাগন ফল বিক্রি করচ্ছি, বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি। ঢাকা, রাজশাহী, চিটাগাংসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন কোরিয়ার সার্ভিসের মধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে, আমাদের নিজস্ব যানবাহনেও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গত ২ জানুয়ারী থেকে ২৯ জানুয়ারী পর্যন্ত ২ হাজার ২শ কেজি পাঁকা ড্রাগন ফল উত্তোলন করে বাজারজাত করা হয়েছে। ২।৩ দিন পর পর পাঁকা ড্রাগন তোলা যাবে। সাইজভেদে ৩টা তে ১ কেজি ৪৫০ টাকা কেজি, ৪ টা তে ১ কেজি ৩৫০ টাকা, ছোট গুলি ২৫০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশে আমাদের ২ ত্বিনফল বাগান রয়েছে ফল ভালই ধরেছে আশা করচ্ছি বাম্পার ফলন হবে। এছাড়া বেশ কিছু কেরেলার খেজুর গাছ লাহানো হয়েছে। কাঁচা খেজুর খেতে বেশ সুস্বাদু। ড্রাগন চাষ করে স্বল্প সময়ে কৃষকগণ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন বলে সচেতন কৃষক ও কৃষিবিদগণ মনে করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা বাগানে ১৫/২০ ষাঁড় গরু লালন পালন করি কুরবানি নিজেরা দি এবং কিছু বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়া যায়। আমাদের শ্রমিক খরচ হয়ে যায়। বাগানে চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, নারী পুরুষ সহ বিভিন্ন মানুষ আসেন ছবি তুলেন, আমরা তাদের ড্রাগন আপ্যায়ন করে আনন্দ পাই।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি অধিপ্তর বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ২১৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল ড্রাগন। আর এর উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ৩২৫ মেট্রিক টন। নওগাঁ জেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ৩৬০ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ১৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ১ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন।

এরে আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ৫৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে ড্রাগন ফল উৎপাদন হয় ৬৮৮ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ২৩৪ মেট্রিক টন। নওগাঁ জেলায় ২৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ২২০ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ৫৫২ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে ড্রাগন ফল উৎপাদন হয় ৩২৪ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ২ মেট্রিক টন। নওগাঁ জেলায় ২২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ১০৮ মেট্রিক টন। নাটোর জেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে উৎপাদন হয় ৬৪০ মেট্রিক টন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির ধরন ড্রাগন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উৎপাদন বেশি ও চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় এর চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ উৎসাহিত করার ফলে ড্রাগান চাষ আজকের অবস্থানে এসেছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, বরেন্দ্রভূমিতে ড্রাগন চাষ বেশ লাভজনক। ড্রাগন হচ্ছে মরুভূমি এলাকার ফল। এদিক থেকে রাজশাহী অঞ্চলের মাটি অধিকাংশ সময় খরায় শুষ্ক থাকে। ড্রাগন চাষ সহজসাধ্য ও চাষে খরচও কম হয়। এর ফলে পোকামাকড় কম আক্রমণ করে আবার অতি বৃষ্টিতেও এর ক্ষতি হয় না। একারণে আগের চেয়ে বর্তমানে এর চাষ বেড়েছে। কাজেই এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষ লাভজনক।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD