April 29, 2025, 9:09 am
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে এক ছাগির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১ টার সময় উপজেলা সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে প্রসবজনিত জটিলতার কারনে সিজারিয়ান অপারেশন সফল ভাবে সম্পন্ন করা হয়।
ছাগলটির একটি মৃত. বাচ্চা হয়। ছাগিটি বর্তমানে সুস্হ রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপারেশনটি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডাঃ শায়লা শারমিনের তত্বাবধানে ডাঃ আরিফুল ইসলাম সম্পন্ন করেন। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শত শত মানুষ বিষয়টি দেখেন, প্রাণি সম্পদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা উন্নত হয়েছে তারা নিজে অবলোকন করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট থাকলেও মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। এটা সম্ভব হয়েছে সদ্য যোগদানকারী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিন কারণে। তিনি যোগদান করেই অফিসে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। নিজে সময়মত অফিসে আসেন, অন্যদের সময়মত অফিসে আসা, যাওয়া ও দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন। অফিস পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজটি প্রথমে শুরু করেন।
দীর্ঘ দিন থেকে জমে থাকা ময়লা আর্বাজনা, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেন। অফিসের সামনে ঝোঁপ, জঙ্গল পরিস্কার করেন। অফিসের আঙ্গিনায় নতুন করে বিভিন্ন উন্নতজাতের ঘাস রোপন, যানবাহন রাখার সেড নির্মান, গাভীকে বীজ দেয়ার সেডসহ স্বল্প সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন।
গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষকে যেন দুর্ভোগ ও হয়রানিতে পড়তে না হয় সে দিকে তিনি গভীরভাবে নজর দেন। তিনি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রায় বলেন, জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন ভাতা হয়, জনগনকে আমাদের সঠিক সেবা দিতে হবে। এটা সবাইকে মতে রাখতে হবে।
গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে আসা গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী মহল্লার মোসাঃ জোহরুন নেসা বলেন, উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিনের আচার ব্যবহার খুবই ভাল, সুন্দর করে কথা বলেন, ঔষুধ দেন না থাকলে লিখে বুঝিয়ে দেন। যেটা আগে এরকম পায় নি। বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষনের ক্লাসে ডাঃ শায়লা শারমিন ম্যাডামের সুন্দর উপস্থাপনা, বিভিন্ন প্রশ্নের সুন্দরভাবে গুছিয়ে উত্তর দেয়ার কারনে মাসিক সঞ্চয় এক লাফে ১ শ টাকা ২ শ টাকা, ২ শ টাকা থেকে ৪ শ টাকা স্বেচ্ছায় সদস্যগণ করেছেন বলে সদস্যগণ বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
স্থানীয় সাংবাদিক মানিক বলেন, কালকে আমার চাচার গাভীর চিকিৎসার জন্য অফিসে গিয়েছিলাম আমাকে শায়লা শারমিন ম্যাডাম সুন্দর চিকিৎসা দিয়েছেন। ঔষুধ লিখে দিয়েছেন এবং খাওয়ার পর গাভীটা কিছুটা ভালোর দিকে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে ডাঃ শায়লা শারমিন যোগদান করার পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টিয়ে যেতে শুরু করেছে। স্বল্প সময়ে সাধারন মানুষের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছেন । তিনি মহিলা হয়েও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করে গত ১২ নভেম্বর পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর আমতলায় ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা প্রদান করেন। সে দিন শ শ নারী পুরুষ, কিশোর কিশোরী তাদের গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়ে হাজির হন, ফ্রি চিকিৎসাসেবা পরামার্শ গ্রহন করেন। তিনি অফিসে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি জরুরীভাবে বাড়ীতে, খামারে গিয়েও চিকিৎসা সেবা ও পরামার্শ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে যে সব কর্মকতা কর্মচারিগণ কাজ করেন তাদের তিনি তদারকি করেন, মাঠ থেকে কোন কোন কর্মচারি কিংবা গ্রাম্য চিকিৎসক ম্যাডামকে মোবাইল করলে তিনি মোবাইল ধরেন এবং চিকিৎসা বিষয়ে পরামার্শ দেন বলে জানান, বুলবুল ও নূরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রথম শ্রেনীর একজন কর্মকতা এ প্রতিবেদককে জানান, পাঁচ মাস আগে আমি অফিসে গিয়েছিলাম, অপরিস্কার, গন্ধে, অফিসে অবস্থান করা কষ্টকর ছিল। এখন ওই অফিস এত পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো। সত্যিই প্রশাংসা করতে হয় ডাঃ শায়লা শারমিন ম্যাডামের।
গোদাগাড়ী একটি বৃহত্তর উপজেলা, এখানে গবাদিপশুর সংখাও অনেক বেশী। এখানে গাভীর খামারের সংখ্যা ৬ শ ৩ টি, ছাগলের খামারের সংখ্যা ১ শ ৬০ টি, ভেড়ার খামার ৬৪ টি, হাঁসের খামার ১ শ ৬১ টি, লেয়ার মুরগির খামার ১২ টি, ব্রয়লার মুরগির খামার ২ শ ১৯ টি, কবুতরের খামার ২৯ টি, কোয়েল পাখির খামারের সংখ্যা ২ টি, গরু মোটাতাজাকরন খামার ২ শ ৫০ টি, মহিষের খামার ১ শ ৮০ টি, পশু খাদ্য দোকান ১১ টি।
গরুর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬ শ ২৫ টি, দেশী জাতের ১ লাখ, ৬৯ হাজার ২ শ ৬৬ টি, শংকর জাতের ৬৫ হাজার ৩ শ ৯০ টি, মহিষ ১৩ হাজার৪ শ ৪৪ টি, ছাগল ৩ লাখ
৫ হাজার ৯ শ ৯ টি, দেশী জাতের ১ লাখ ৬১ হাজার ৪ শ ৫০ টি, উন্নত জাতের১ লাখ ৪৪ হাজার ৪ শ ৫৯ টি, ভেড়া ১৭ হাজার ৬ শ ১১ টি, পাতিহাাঁস ৪৮ হাজার ৫২ টি, রাজহাঁস ১২ হাজার ২ শ ২২ টি, মোরগ- মুরগি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১ শ ৫৯ টি, দেশী জাতের ১ লাখ ৫৬ হাজার, ৬ শ ৫৯ টি শংকর জাতের ২ লাখ ৯ হাজার ৫ শ টি, কতুতর ১৪ হাজার ৭ ২০ টি, শূকর ৫ শ ১৫ টি।
এ ব্যপারে ২৯ জানুয়ারী, সোমবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের সময় অফিসে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এত চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশ বিভিন্ন সনদপত্র সত্যায়িত করতে হয়। বাড়তি ঝামেলা মনে হলেও আমি এ কাজটি করে থাকি। বরাদ্ধের জন্য লিখেছি তা পেলো অফিসের সংস্কার কাজটি সুন্দরভাবে করবো। তখন আরও ভাল লাগবে।
সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ওয়াটার গেট কেলেংকারী সংশ্লষ্ট সাংবাদিকতার গভীর তাৎপর্যপূর্ন নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলাদেশের সাংবাদিকগণ তাৎপর্যপূর্ন ইতিবাচক ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই সাংবাদিক ভাই আমি যদি ভাল কাজ করি লিখবেন, খারাপ কাজ, অনিয়ম, দুনীতি করি সেটাও অবশ্যই লিখবেন। আমরা সংশোধন হবো। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, মানুষের উপকার করা, গবাদিপশুর সেবা দেয়ার জন্য এখানে এসেছি, জনসাধারনের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন ভাতা হয়। তাদের সেবা দিব না কেন বলেন?
মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।