October 14, 2024, 9:52 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে ড্রাগন বাগানে শিয়াল মারার ফাঁদে   বিদ্যুৎ স্পষ্ট হয়ে ১ কৃষকের মৃত্যু সুজানগরে বজ্রপাতে নিহতের পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান রংপুরে বিএসটিআই’র উদ্যোগে পালিত হয়েছে বিশ্ব মান দিবস শ্লোগানে পালিত হল বিশ্ব দৃষ্টি দিবস ২০২৪ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেতাগী প্রেসক্লাবের ভবন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন যশোরের বাগআঁচড়ায় বিএনপি’র সহযোগিতায় ভি,ডব্লিউবির চাল পেলো ৩০৮ পরিবার নড়াইলে বর্ষা মৌশুমে কয়েক দফা ভারী বর্ষনে মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতি শত কোটি টাকা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদ যেন ঝিনাইদহের জমিদার পুঠিয়ায় ফেস বুকে পোষ্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুরুতর আহত ৩
গোদাগাড়ীতে দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে৪০ গরু নিলামে দেওয়া হলো সিন্ডিকেটের হাতে

গোদাগাড়ীতে দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে৪০ গরু নিলামে দেওয়া হলো সিন্ডিকেটের হাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে রাজাবাড়ীহাট আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সাধারণ ক্রেতা। প্রকাশ্য নিলামে গরু বিক্রির আয়োজন হলেও সিন্ডিকেটের তিনজন ছাড়া ডাকে অংশ নিতে পারেননি কেউ। এমনকি অন্য কেউ নিলামে অংশ নেবেন কিনা সেজন্য অপেক্ষাও করেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে খামার কর্মচারী বাদশা কিনেছেন বেশ কয়েকটি গরু। সরেজমিন এ চিত্র দেখা হয়েছে। মঙ্গলবার এভাবেই ৪০টি গরু নিলামের নামে ওই সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল।

সিন্ডিকেট সব গরু কিনে নেওয়ার পর বিকালে খামারের ভেতরেই আবার নিলাম করা হয়। তখন এ সিন্ডিকেটের কাছ থেকে গরুপ্রতি ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কেনার সুযোগ পান সাধারণ ক্রেতা। অথচ সিন্ডিকেট না হলে বাড়তি এ টাকা পেত সরকার।

স্থানীয়রা জানান, মাঝে মাঝেই সরকারি এ খামার থেকে এভাবে নিলামের মাধ্যমে গরু বিক্রি করা হয়। প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সিন্ডিকেট করে গরু কিনে নেন। সিন্ডিকেটের তদবিরে গরুগুলোর সর্বনিম্ন সরকারি মূল্যও বাজারদর অপেক্ষা কম ধরা হয়। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় সরকার। আর পকেট ভরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর। খামারের কর্মকর্তারাও অবৈধ সুবিধা পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে খামার কর্তৃপক্ষের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গরুর যে মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তার চেয়েও বেশি টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে মঙ্গলবার নিলাম চলাকালে দেখা গেছে, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দরে গরু বিক্রি করা হয়েছে। আর এ সিন্ডিকেটটি এভাবেই গরু কিনেছে। সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ গরু কিনতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছে।

দেখা গেছে, মঙ্গলবার নিলাম শুরুর আগেই শতাধিক ব্যক্তি গরুর খামারে আসেন। বেলা ১১টায় নিলাম কার্যক্রম শুরু করতে চান কর্মকর্তারা। তখন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ফয়সাল বলেন, নিলামের আগে তারা আরেকটু সময় চান। কর্মকর্তারা তাকে সময় দেন। এরপর নিলামে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আলাদা করে কথা বলেন ফয়সাল। তিনি ‘অনুমতি’ দেওয়ার পর নিলাম কার্যক্রম শুরু করেন কর্মকর্তারা। প্রথমে খামারের কর্মচারী রইস উদ্দিন তিনটি বাছুরের সর্বনিম্ন সরকারি মূল্য ৭৬ হাজার টাকা ঘোষণা করেন। কালু নামের এক ব্যক্তি ওই সময় ডাকেন ৭৬ হাজার ২০০ টাকা। এরপর অমিত হাসান নামের এক ব্যক্তি ডাকেন ৭৬ হাজার ৪০০ টাকা। এ সময় খামারেরই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাদশা তাকে তেড়ে যান। নিলামে অংশ নিতে না দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাদশা এবার বাবু নামের আরেকজনের হয়ে দাম বলেন ৭৬ হাজার ৬০০। নিলাম শুরুর ২ মিনিটের মধ্যে এ গরুগুলো বিক্রি হয়ে যায়। এ গরু তিনটির দাম কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা হতো বলে জানিয়েছেন উপস্থিত অনেকেই।

গরু নিলামের শুরুতেই তুমুল হট্টগোল শুরু হওয়ায় এ সময় ফয়সাল অনেককেই নিলাম শেডের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে দেন। এবার আরও তিনটি বাছুরের নিলামে সর্বনিম্ন সরকারি মূল্য ঘোষণা করা হয় ৯৩ হাজার টাকা। বাদশা একাই এগুলোর মূল্য ডাকেন ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নিলাম শেষ করে গরুগুলো তার নামে বিক্রি লেখা হয়। এরপর তিনটি বাছুরের সর্বনিম্ন সরকারি মূল্য ডাকা হয় ৯৯ হাজার ২০০ টাকা। এ সময় বাদশা নিজেই মেহেরাব নামের একজনের নামে ডাকেন ৯৯ হাজার ৪০০ টাকা। পরে তিনি নিজের নামে ডাকেন ৯৯ হাজার ৬০০ টাকা। এরপর মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এ গরুগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া শেষ করে ক্রেতা হিসাবে লেখা হয় খামার কর্মচারী বাদশার নাম।

এবার নিলাম কর্মকর্তারা বাদশাকে বলেন, অন্তত তিনজনের নামে যেন মূল্য বলা হয়। এ সময় বড় দুটি গাভীর সর্বনিম্ন মূল্য ১ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকা ঘোষণা করা হয়। বাদশা নিজের নামে ডাকেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা। এরপর তিনিই মেহেরাবের নামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ এবং কালুর নামে ডাকেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ টাকায়। এভাবে গরুগুলো কালুর নামে কেনা হয়। উপস্থিত অনেকে জানান, গাভী দুটির দাম হতো অন্তত দুই লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, এসব গরুর মধ্যে কয়েকটা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছেও যাবে। তাদের হয়েও গরু কেনা হয়েছে কম মূল্যে। নিলামে যে তিনজন অংশ নিয়েছেন তারা আসলে একই সিন্ডিকেটের সদস্য। খামার কর্মচারী বাদশাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে প্রকাশ্যেই সিন্ডিকেটের হয়ে নিলামে অংশ নিয়েছেন। নিলামের সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তবে অমিত হাসানকে নিলামে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হলেও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেখানে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, এসব দেখা আমাদের কাজ নয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে করতে হবে।

গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, সবাই যেন নিলামে অংশ নিতে পারেন সেজন্যই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিলামে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার সময় পুলিশ চুপ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। এরকম তো হওয়ার কথা নয়।

এভাবে সিন্ডিকেট করে সব গরু কেনা এবং একই স্থানে পরে বিক্রির বিষয়ে কথা বলতে বিকালে ফোন দেওয়া হলে ফয়সাল বলেন, সবার সম্মতিতেই নিলাম হয়েছে। এটি ১০ বছর থেকেই হয়ে আসছে। কেউ ভেটো (অসম্মতি) জানালে তাকে ম্যানেজ করা হয়। মূলত নেতাকর্মীদের জন্যই এভাবে নিলামের ব্যবস্থা করা হয়।

সিন্ডিকেটের কাছে এভাবে গরু বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে খামারের উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, কেউ যদি না ডাকে তাহলে আমার কী করার আছে! খামারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাদশার নিলামে অংশগ্রহণ এবং অন্যদের অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গরু যে কেউ কিনতে পারে। কর্মচারী হলেও তার কেনার অধিকার আছে। তিনি হয়তো কয়েকজনের সঙ্গে গরু কিনেছেন। তিনি কাউকে বাধা দিয়েছেন এটা আমার চোখে পড়েনি। কাউকে বাধা দেওয়া হলে তিনি তো আমার কাছে অভিযোগ করতে পারতেন। সিন্ডিকেটের হাতে গরু তুলে দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলো কিনা এমন প্রশ্নে উপপরিচালক বলেন, ৪০টা গরুর সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। আমরা বিক্রি করেছি, ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকায়। সরকারের তো ক্ষতি হয়নি। তবে আরও অনেকে ডাকে অংশ নিলে হয়তো দাম আরেকটু বেশি হতো।
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD