October 12, 2024, 2:39 am
এস এম সাইফুল ইসলাম কবির :প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ হিসেবে সুখ্যাত সুন্দরবনের উপকূলবর্তী বাগেরহাটের শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দুই বছর ধরে নেই সাপের বিষ প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম। ফলে সাপে কাটা রোগী নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের। অ্যান্টিভেনম চেয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।
শরণখোলা উপজেলাটি উপকূলবর্তী এবং সুন্দরবন লাগোয়া হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ মানুষ বনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে।বিশেষ করে মৎস্যজীবীর সংখ্যাই বেশি। মৌসুমি মৌয়ালের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এসব জেলে-মৌয়ালরা মাছ ও মধু আহরণ করেত যান সুন্দরবনে। সেখানে নানা রকম বিষধর সাপের আক্রমণের শিকার হতে হয় তাদের।দুর্গম বনে কোনো জেলে বা বনজীবীকে সাপে কামড়ালে তাদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাও নেই সেখানে। কাউকে সাপে কাটলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকা বেয়ে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে হয় উপজেলা সদরে। কিন্তু হাপাতালে এসে যথাযথ চিকিৎসা পান না তারা। ফলে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটে এসব অসহায় বনজীবীদের।গত ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে এমনই এক ঘটনা। উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের হতদরিদ্র জেলে মধু ফরাজী গভীর সুন্দরবনে মাছ ধরতে গেলে বিষধর সাপে দংশন করে তাকে। বনের মধ্যে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সঙ্গী জেলেরা প্রায় চার ঘণ্টা নৌকা চালিয়ে তাকে শরণখোলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না থাকায় চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলে মধু ফরাজীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
জেলে মধু ফরাজী বাবা মো. কালাম ফরাজী বলেন, ‘আমার ছেলে জঙ্গলে (সুন্দরবনে) মাছ ধরতে যাইয়া বিষধর সাপের মুখে পড়ে।সাপে কাটার পর প্রায় চাইর ঘণ্টা নৌকা চালাইয়া তারে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে এর কোনো চিকিৎসা নাই। আমরা হতদরিদ্র। জঙ্গলে মাছ না ধরলে আমাগো সংসার চলে না। পরে ১০-১২ হাজার টাকা ধারদেনা কইরা খুলনায় নিয়া ছেলের চিকিৎসা করাইছি। আমাগো হাসপাতালে (শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) চিকিৎসা পাইলে আর এত খরচ হইত না।’
ওয়াইল্ড টিমের ফিল্ড ফেসিলিটেটর হিসেবে প্রায় ১৫ বছর ধরে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছেন মো. আলম হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘শরণখোলা উপজেলাটি সুন্দরবনের খুব কাছে হওয়ায় প্রায়ই বন থেকে অজগরসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ লোকালয়ে চলে আসে। ঝুঁকি নিয়ে এসব সাপ উদ্ধার করে আমরা বনে ফিরিয়ে দিই। এ বছরও ৩০টির মতো সাপ উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে অর্ধেকই কোবরা ও বিষধর অন্যান্য সাপ রয়েছে। এসব বিষধর সাপ উদ্ধার করতে গিয়ে যদি আমরা আক্রান্ত হই তাহলে আমাদের হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিষেধকের কোনো চিকিৎসা নেই। এমন পরিস্থতিতে বিনা চিকিৎসায় মরা যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না আমাদের।’
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম নেই। এ কারণে সাপে কাটা রোগী এলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাগেরহাট বা খুলনায় পাঠানো ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এলাকাটি সুন্দরবনের কাছে এবং বেশির ভাগ মানুষ বনের পেশাজীবী হওয়ায় এখানকার মানুষ প্রায়ই সাপের কামড়ের শিকার হয়।’
ডা. প্রিয় গোপাল বলেন, ‘দুই বছর আগে ২০২২ সালে আমি যখন শরণখোলা হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন মাত্র ছয় ডজন অ্যান্টিভেনম পেয়েছিলাম। তাও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। পরে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অ্যান্টিভেনম চেয়ে একটি চাহিদাপত্র দিয়েছি; কিন্তু এখন পর্যন্ত তা পাইনি।’
(এস এম সাইফুল ইসলাম কবির)
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি