October 5, 2024, 3:23 pm
হেলাল শেখ,
সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে চায়ের দোকান থেকে শুরু মুদির দোকানে ১০টির বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে মানা হচ্ছে না কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি। নিয়ম অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র,বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক থাকলেও প্রশাসন’কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে কান্দাইল রাজা-বাদশা মার্কেটে মালিকের যোগসাজশে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।
সোমবার (১৮সেপ্টেম্বর) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জিরাবো, সরকার মার্কেট, জামগড়া, চিত্রশাইল, ইউসুফ মার্কেট ও কান্দাইল রাজা-বাদশা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
এবছরে জামগড়ার তেতুলতলা ও কাঠগড়া এলাকায় এক বোতল থেকে অন্য বোতলে গ্যাস রিফিল করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন নিহতসহ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এরপরেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে অনেকে মানছে না কোন নিয়ম-নীতি। ফলে যে কোন সময়ে আরও ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।
নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুত স্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ম অনেকেই মানছে না। এরফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যায়। ১০টির বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে আশুলিয়ার কান্দাইলের রাজা-বাদশা মার্কটে মুদি দোকানদার হাফিজুল ইসলাম তার মুদি দোকানের সামনে ১০টি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার সারি করে সাজিয়ে রাখলেও তার পাশের রুমগুলোতে মজুত রেখেছে শতশত গ্যাস সিলিন্ডার। একদিকে রুমগুলো উপরে টিনের ছাওনি অন্যদিকে জায়গার অভাবে সিলিন্ডারের সাথেই রাখা হয়েছে ব্যাটারি চালিত ভ্যান আর সেই ভ্যানের সাথেই যুক্ত হয়ে চার্জকৃত ইলেকট্রিক লাইন। আর এই কারণেই যেকোনো মূহুর্তে ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। সার্বক্ষনিক বন্ধ করে রাখা দোকানটি। বাহির থেকে দেখে বুঝার কোন উপায় নাই যে সে ভিতরে শতশত এলপিজি সিলিন্ডার মজুত রেখে তা মার্কেট মালিক রাজার যোগসাজশে অবাধে বিক্রি করছে। একদিকে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না ঢুকতে পারা অন্যদিকে প্রচন্ড গরমে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এমনটাই আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
কথা হয় দোকান মালিক হাফিজুলের সাথে তিনি এই অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি প্রায় ১বছর ধরে এভাবে সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছি। আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আর অন্য কোন কাগজপত্র নেই। এক্ষেত্রে আমার নিয়ম-কানুন জানা নেই।
প্রথমে রাজা-বাদশা মার্কেটের মালিক রাজা মিয়া এসে সাংবাদিকদের সাথে উগ্র আচরণের কথা বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে তার আপন ভাই বাদশা মিয়ে ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ১০টির অধিক সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে হলে খোলামেলা জায়গা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বিস্ফোরক ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রয়োজন এগুলো আমি জানি না, জানলে আমি তার কাছে রুম ভাড়া দিতাম না। হাফিজুলকে এখান থেকে বোতলগুলো সরিয়ে নিতে বলেছি।
পাশবর্তী এলাকার হারুন-অর-রশিদ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে লাইসেন্স হাতে পাবো। এছাড়া তার কাছে অন্য কোন লাইসেন্স নেই বলে সে স্বীকার করেন।
কান্দাইলের স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কিভাবে কোন নিয়ম না মেনে এভাবে বিক্রি করছে গ্যাস সিলিন্ডার। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। আমরা আশঙ্কার মধ্যে দিন যাপন করছি।
এব্যাপারে ডি-ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজিং ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম বলেন, ইয়ারপুর ইউনিয়ন যেহুতু আমি দেখিনা সেহুতু পরামর্শ দিতে পারি। ঘনবসতিপূর্ন এলাকায় সিলিন্ডার মজুত করা যাবে না। মজুত করতে হলে খোলামেলা জায়গা লাগবে, যাতে পরিবেশটা ঠান্ডা থাকে। আর আমাদের সাময়িকের জন্য ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান।
এব্যাপারেও কথা হয় ঢাকা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরির্শক সানজিদা আক্তারের সাথে তিনি বলেন, কেউ যদি ১২৫ কেজির উপরে গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রাখে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। আমাদের এখানে কেউ যদি ইনফর্ম করে তাহলে আমরা পদক্ষেপ নিবো।