July 15, 2025, 3:59 am
আনোয়ার হোসেন,
স্বরূপকাঠি উপজেলা প্রতিনিধি //
স্বরূপকাঠিতে নার্স আফিফার সম্পূর্ণ খামখেয়ালির কারনে নবজাতকের মৃত্যু। বাচ্চা দাফনের সাত ঘন্টা পরে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন প্যারামেডিকেল ডাক্তার মাছুম বিল্লাহ।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) উপজেলার হাসপাতাল সংলগ্ন এ্যাপেক্স হেল্থ ক্লিনিকে বসে ওই ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ বাচ্চার ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন। বিষয়টি ২৮ জুলাই শুক্রবার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে স্বরূপকাঠিতে কাছে চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে,আফিফার তত্ত্বাবধায়নে থাকা
নেছারাবাদ উপজেলার কৌরিখাড়া গ্রামের ওমর ফারুক তার স্ত্রীর প্রসববেদনা নিয়ে গত বুধবার সরকারি হাসপাতালের নার্স আফিফা ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান। ক্লিনিকের রেজিষ্টার খাতায় নেছারাবাদ হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার মো: আসাদুজ্জামানের নাম লেখান নার্স আফিফা।
এসময় ওই প্রসূতি মায়ের কোন আলট্রা বা স্বাস্থ্যগত কোন পরীক্ষা না করিয়ে রোগীর নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আশ্বস্ত করেন ওই নার্স। রাতে ওই রোগীর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে পড়ে। এতে রোগীর স্বজনরা বিচলিত হয়ে নার্স আফিফাকে ডাক্তার আনতে বলেন। এতে আফিফা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বজনদের বকাঝকা করে বলেন, আমার উপর ভরসা করুন সব কিছু ঠিক আছে নর্মাল ডেলিভারি হবে। রাত ৩.৫০ মিনিটের সময় নার্স আফিফা ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে ক্লিনিকে বসে টানাহেচড়া করে ওই প্রসূতির ডেলিভারি করেন। এতে ওই সময়েই বাচ্চা মারা যায়।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকের পরিচালক ডাক্তার মাসুম বিল্লাহর উপর চড়াও হয়ে তার কক্ষে ছুটে যান। এসময় ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মা সহ মৃত নবজাতক বাচ্চার ব্যবস্থাপত্র(ছাড়পত্র) লিখে ক্লিনিক থেকে তাদের বিদায় করেন।
ওই প্রসূতির স্বামী ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, নার্স আফিফা আমাদের ভুলবাল বুজিয়ে নরমাল ডেলিভারির আশায় ২৬ জুলাই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এসময় তিনি আমার স্ত্রীর কোন আল্ট্রা বা কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করিয়ে স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আমাদের জানান। আমার স্ত্রীর রাত দশটা থেকে প্রসববেদনা শুরু হয়। স্ত্রীর চিৎকার করিতে থাকে তখন আমি নার্সকে বলি ডাক্তার ডাকেন প্রয়োজনে সিজারের ব্যাবস্থা করেন। না হয় বলেন রোগীকে আমি বরিশাল নিয়ে যাই। তখনও নার্স আফিফা আমাকে ধমক দিয়ে বলেন সমস্যা নাই নরমাল ডেলিভারি হবে।
রাত ৩.৫০ মিনিটের সময় আমার স্ত্রীকে রুমে নিয়ে ডেলিভারি শুরু করেন। এসময় আমার স্ত্রী খুব ডাক চিৎকার দিচ্ছিল। কিছু সময় পর নার্স আফিফা ওই রুম থেকে বাচ্চা নিয়ে বের হয়ে অক্সিজেন রুমে প্রবেশ করে বলেন বাচ্চাটা হার্টবিট কম। তখন আমার সন্দেহ হলে তাকে বিশ্বাস না করে পাশের সরকারি হাসপাতাল থেকে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার এনে জানতে পারি আমার বাচ্চা মৃত। ওমরফারুক কান্নাভরা কন্ঠে বলেন, নার্স আফিফা অতিলোভে ডাক্তার না ডেকে কালক্ষেপণ করে একক কর্তৃত্ব নিয়ে আমার স্ত্রীকে টানহেচড়া করে ডেলিভারি করান। তার টানা হেচড়ায় আমার বাচ্চা মারা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নার্স আফিফা বলেন, তার স্ত্রীর মৃত বাচ্চা হয়েছে। তাহলে মৃত বাচ্চাকে কেন অক্সিজেন দিলেন এমন প্রশ্ন করে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন অক্সিজেন দেয়নি। তাছাড়া ডেলিভারির সময় কত বাচ্চা মারা যায়। এতে এমন কি সমস্যা হয়েছে। আসলে আমার পিছনে শত্রু লেগেছে।
ওই ক্লিনিকের পরিচালক ও মৃত নবজাতকের জন্য ঔষধ প্রেসক্রাইবড করা ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাচ্চাটি মৃত তা আমি জানতাম। তবে ভুলে বাচ্চার মায়ের সাথে মৃত নবজাতকের জন্য ঔষধ লিখেছিলাম। ছাড়পত্রে ২৭ তারিখের পরিবর্তে ২৮ তারিখ লিখে ছাড়পত্র দেয়ার কারন জানতে চাইলে বলেন,ওটা রেজিস্ট্রার রফিকুল লিখে আমার কাছে দেয় আমি সুধু ঔষধ লিখে দেই।
আপনার ক্লিনিকে বসে টানাহেচড়ায় নরমাল ডেলিভারিতে নবজাতকের মৃত্যু বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অজান্তে হাসপাতালের কিছু কিছু নার্স গর্ভবর্তী রোগী এনে নিজেদের তত্ত্বাবধায়নে ডেলিভারি করিয়ে থাকেন। ক্লিনিকে সামান্য সিটভারা ওটি ভারা দেয় যা খুবই খারাপ।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ হাসপাতালের মা ও শিশু বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার আসাদুজ্জামান জানান, ওই রোগী কোথা থেকে এসেছে, কিজন্য তাকে ভর্তি করানো হয়েছে তা আমাকে ওই নার্স বা রোগীর স্বজনরা কিছুই জানায়নি। আমি ঐ সময় হাসপাতালে ছিলাম আমার কাজ শেষ করে বরিশাল বরিশাল চলে যাই। পরের দিন সকালে এসে আমি এই ঘটনার কথা শুনেছি এছাড়া আর কিছু আমি কিছু জানিনা।