September 27, 2023, 8:00 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ময়মনসিংহের ১নং ফাঁড়ি থেকে মাদক নির্মুলসহ দুর্গাপূজাকে ঘিরে ইনচার্জ ওয়াজেদ আলীর হুঁশিয়ারি সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান-রাষ্ট্র কেবল ধর্ম বর্ণ,শ্রেণী ও স্থায়ী বা অস্থায়ী দেখে না বাগেরহাটের ফকিরহাটে উদ্যোক্তাদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ বিএসটিআই বিভাগীয় কার্যালয় রংপুর কর্তৃক সার্ভিল্যান্স অভিযান তানোরে যুবলীগের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ শো-ডাউন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত বাগেরহাটের মোল্লাহাটে শেখ হেলাল উদ্দিন ফুটবল টুর্নামেন্ট পাইকগাছায় পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন এর গণশুনানী অনুষ্ঠিত পাইকগাছা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা ও মাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত বাগেরহাটে ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা ও পদোন্নতির দাবি শিক্ষা ক্যাডারদের
আম নিয়ে কিছু কথা

আম নিয়ে কিছু কথা

লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ কি বিষয়ে লিখব, তা চিন্তা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা এসবিএ/ সি.এ উপর শিক্ষকদের বিষয ভিক্তিক প্রশিক্ষণ চলছে আবার নতুন কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষন শেষে ৬ ষ্ঠ ও শ্রেণির ধারাবাহিক মূল্যয়ন শেষে চলছে সামষ্টিক মূল্যয়ন শিক্ষা কর্মকর্তাগণ এ বিষয়ে তদারকি জোরদার করেছেন। নতুন শিক্ষাক্রম যদি বাস্তবায়ন করতে তবে পদ্ধতির এসবিএ / সি.এ উপর প্রশিক্ষণ কেন? এ বিষয়ে লিখবো মনে করলাম তথ্য উপাত্ত নিয়ে ল্যাপটপ ওপেন করলাম এমন সময়, আমার এক পরিচিত লোক আম ব্যবসায়ী মোফাজুল ও শামীম রেজা সাহেব ফোন করে আমার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। শেষে তিনি বললেন, প্রচন্ড গরমে সব জাতের আম একসাথে পেঁকে যাওয়ায় আমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে, গরমে আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এব্যপারে খেলার অনুরোধ জানান, আম বলতে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাটে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগজ্ঞ, ভোলাহাটসহ কয়েকটি এলাকায় ভাল জাতের পাঁকা আম বিক্রি হয়েছিল ৩০/৪০ শুরু টাকা থেকে ১৪/২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন জায়গায় আমের ক্রেতা পাওয়া যায়নি। ওই বন্ধুর কথায়, শিক্ষার বিষয়ে পরে লিখবো ভেবে লেখার থিমটি পরিবর্তন করে আমের ইতিহাস, প্রকারভেদ, বিভিন্ন আমের নামকরণ, বাংলাদেশে আমের রাজধানী সম্পর্কে লিখার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে লিখা শুরু করলাম।

আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা, সংস্কৃতে আম্র, বাংলায় আম, ইংরেজিতে ম্যাংগো, মালয় ও জাভা ভাষায় ম্যাঙ্গা, তামিল ভাষায় ম্যাংকে এবং চীনা ভাষায় ম্যাংকাও। আম অর্থ সাধারণ। সাধারণের ফল আম। রসাল বা মধু ফলও বলা হয় আমকে। রামায়ণ ও মহাভারতে আম্রকানন এবং আম্রকুঞ্জ শব্দের দেখা মেলে।
ধারণা করা হয়।

আম প্রায় সাড়ে ৬০০ বছরের পুরনো। আমের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’ নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এ জনপদেই যে আমের আদিবাস এ সম্পর্কে আম বিজ্ঞানীরা একমত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে।

চীন পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেন। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, উনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।

জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আম বাগান সৃষ্টি করেন। আমের আছে বাহারি নাম বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ। ফজলি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ, মোহনভোগ, জিলাপিভোগ, লক্ষণভোগ, মিছরিভোগ, বোম্বাই ক্ষীরভোগ, বৃন্দাবনী, চন্দনী, হাজিডাঙ্গ, সিঁদুরা, গিরিয়াধারী, বউভুলানী, জামাইপছন্দ, বাদশভোগ, রানীভোগ, দুধসর, মিছরিকান্ত, বাতাসা, মধুচুসকি, রাজভোগ, মেহেরসাগর, কালীভোগ, সুন্দরী, গোলাপবাস, পানবোঁটা, দেলসাদ, কালপাহাড়সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ জাতের আম। তবে অনেকগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।

বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে আম গাছকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে আম গাছকে নির্বাচন করা হয়। সবচেয়ে দামি ও জনপ্রিয় আমের নাম আলফানসো। ভারতে উৎপাদিত এ জাতের এক কেজি আমের দাম প্রায় ৪০০ রুপি। জাপানের মিয়াজাকি আম সব চেয়ে বেশি দাম, প্রতি কেজি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মিয়ানমারের জনপ্রিয় আম রাঙ্গু দেখতে আকর্ষণীয়, খেতে সুস্বাদু। ভারতের আম গবেষকরা ১৯৭৮ সালে দশহরি ও নিলাম এ দুটি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে পৃথিবীর বিস্ময়কর জাতের আম উদ্ভাবন করেন; যার নাম আম্রপালি
আম্রপালি: আম্রপালি আমকে অনেকেই আম রুপালি হিসেবে চিনে। আসলে এই আমটির আসল নাম আম্রপালি। ভারতের গবেষকরা পৃথিবীর বিস্ময়কর এক আম সৃষ্টি করেছেন। এই সেই আম্রপালি। ভারতের শ্রেষ্ঠ নর্তকীর নাম ছিল আম্রপালি।
এই জাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত আমাদের দেশের আবহাওয়ার কারণে উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফলে পরের বছর ফলে না। কিন্তু আম্রপালি প্রতিবছর ফলে।
বাংলাদেশের মানুষ গ্রীষ্মের দুঃসহ গরম, দরদর ঘাম, সব কিছুর পরেও এ ঋতুর জন্য আমজনতার অপেক্ষার অন্যতম কারণ আম। ফজলি থেকে ল্যাংড়া, গোলাপখাস থেকে হিমসাগর- বাংলার এই বিপুল আমসাম্রাজ্য বহু শতক ধরে বয়ে আনছে এর আভিজাত্য। যেমন গন্ধ, তেমনই তার স্বাদ। কিন্তু জানেন কি, প্রত্যেক আমের নামকরণের নেপথ্যে ঠিক কী ইতিহাস লুকিয়ে আছে?

১৮০০ সালে মালড়
দহঢ়জেলার কালেক্টর রাজভেনশ এই আমের নামকরণ করেন ‘ফজলি’। কথিত, ফজলি বিবি নামক এক প্রৌঢ়া বাস করতেন স্বাধীন সুলতানদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের একটি প্রাচীন কুঠিতে। তাঁর বাড়ির উঠোনেই ছিল একটি আমগাছ। ফজলি এই গাছটির খুব যত্ন নিতেন। এলাকার ফকির বা সন্ন্যাসীরা সেই আমের ভাগ পেতেন।
কালেক্টর রাজভেনশ একবার ফজলি বিবির কুঠিরের কাছে শিবির স্থাপন করেন। তাঁর আগমনের খবর পেয়ে ফজলি বিবি সেই আম নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। রাজভেনশ সেই আম খেয়ে খুবই তৃপ্ত হন। জানতে চান, সেই নামের নাম। কিন্তু ইংরেজি না বুঝে শুধু ‘নেম’ শুনেই নিজের নাম বলে দেন ফজলি বিবি। সেই থেকেই এই আমের নাম হয় ‘ফজলি’।

ল্যাংড়া:
মুঘল আমলে দ্বারভাঙায় এই প্রকারের আম চাষ শুরু হয়। কিন্তু তখন কেউ এর নাম নিয়ে মাথা ঘামায়নি। পরে আঠারো শতকে এক ফকির খুব সুস্বাদু এই আমের চাষ করেন। সেই ফকিরের পায়ে কিছু সমস্যা ছিল। সেই থেকেই নাকি ওই আমের নাম হয়ে যায় ‘ল্যাংড়া’।

লক্ষ্মণভোগ ও গোপালভোগঃ ইংরেজ বাজারের চন্ডীপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ একটি আম গাছ রোপণ করেন। স্বাদে-গন্ধে সেই আম ছিল তুলনাহীন। লক্ষ্মণ চাষির নাম থেকেই লক্ষ্মণভোগ আমের উৎপত্তি। ইংরেজ বাজারে নরহাট্টার গোপাল চাষির নামে আবার নাম হয় গোপালভোগের।

গোলাপখাস: এ আম বিখ্যাত তার গন্ধের জন্য। মিষ্টি গোলাপের গন্ধ বহন করে বলে এই আমকে এই নামে ডাকার চল শুরু হয়ে যায়। প্রাচীন বাংলার আমগুলোর মধ্যে গোলাপখাস অন্যতম। এই আমের গায়ে গোলাপের রঙের লালচে আভা থাকে।

গুটি ও আশ্বিনা: চেহারায় ছো়ট এক প্রকারের আম খেয়ে সেই আঁটি নিজের বাগানে পুঁতেছিলেন মালদহের এক দরিদ্র কৃষক। সেই আঁটি থেকেই জন্ম নিয়েছিল আরেক আমগাছ। কাঁচা অবস্থায় টক। কিন্তু পাকলে খুব মিষ্টি। আঁটি বা গুটি থেকে গাছটি জন্মায় বলে আমের নামও হয়ে যায় ‘গুটি’। এ দিকে আশ্বিন মাসে পাকে যে আম তাকে ‘আশ্বিনা’ বলে চেনে বাংলাদেশের মানুষ।

কথিত আছে, স্বয়ং গৌতম বুদ্ধকে একটি আম্রকানন উপহার দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি তার ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারেন। প্রাচীনকালে আমের কদর আর গুরুত্ব বোঝাতে সংস্কৃতে এর নামকরণ করা হয় আম, যার অর্থ মজুদ খাদ্য বা রসদ। বাংলাদেশে আম একটি জনপ্রিয় ফল। বহু বছর ধরে আভিজাত্য বহন করছে আমের এই অদ্ভুত নামগুলো। কিন্তু প্রত্যেকটি আমের নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। আসুন জেনে নেই এমন নামের কারণ।

দশেরি আম: উত্তর প্রদেশের আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাদশাহি খানদানের ইতিহাস৷ যেমন আমের রাজা দশেরির কথাই ধরা যাক৷ উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষৌ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হলে পড়ে মালিহাবাদ নামে একটা জায়গা৷ উন্নত প্রজাতির আম দশেরির জন্য এই এলাকা চিহ্নিত৷ এখানে ৩৫ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে আছে আমের বাগান৷ রাজ্যের মোট আমের ফলনের ১২.৫ শতাংশ আম এই মালিহাবাদেই হয়৷ তাই মালিহাবাদকে বলা হয় ‘‘আমের রাজধানী”৷
স্থানীয় লোকজনদের মতে অবশ্য মালিহাবাদ এবং দশেরি আম নিয়ে নানা গল্পকথা আছে৷ কেউ কেউ বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে ফকির মহম্মদ খান ওরফে গয়া মালিহাবাদির নেতৃত্বে একদল আফ্রিদি পাঠান ভাগ্যান্বেশনে আফগানিস্তানের সীমান্তে খাইবার গিরিপথের এক গ্রাম থেকে পেশাওয়ার হয়ে হিন্দুস্থানে আসে৷ প্রথমে তাঁরা আসে উত্তর প্রদেশের ফারুকাবাদে৷ সেখান থেকে অবধ-লক্ষৌ-এ৷ মহম্মদ খানের বীরত্ব এবং যুদ্ধ বিদ্যার নৈপূণ্য দেখে অবধের নবাব খুশি হন৷ বকশিস হিসেবে মহম্মদ খান ফলের বাগান করার অনুমতি প্রার্থনা করেন নবাব বাহাদুরের কাছে৷ সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয়৷ কথিত আছে, মহম্মদ খান প্রথম মালিহাবাদে আমের চারা রোপণ করেন৷
তবে দশেরি আম বাগান সবই এককালে ছিল নবাবদের৷ পরে অন্যান্যের ইজারা দেয়া হয়৷ বাংলায় আমের খ্যাতি এককালে ছিল মুর্শিদাবাদের নবাব আমলে৷

এদিকে জানা গেছে, আম্রপলি আমের মিষ্টতার পরিমাণ ল্যাংড়া বা হিমসাগরের চেয়ে বেশি। গাছ বামন আকৃতির। ফলনও বেশি। পাঁচ হাত দূরত্বে এক হেক্টর জমিতে এক হাজার ৫০০ আম্রপালির চারা রোপণ করা যায়। আমের আকার লম্বাটে। আষাঢ় মাসে পাকে। গড় মিষ্টতার পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি। আঁটি সরু। সুস্বাদু আঁশবিহীন। ১৯৯০ সালে প্রথম আমাদের দেশে আম্রপালির চারা আসে। বর্তমানে দেশে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় আম্রপালির চারা কিনতে পাওয়া যায়। যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা জেলায় আম্রপালির অনেক বড় বড় বাগান রয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায়ও এখন প্রচুর পরিমাণে আম্রপালি চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১৬ মেট্রিক টন আম্রপালি ফলে। আম্রপালি অনেকটা সবজির মতো। প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ সার দেওয়া প্রয়োজন। ১২-১৪ বছর বয়স হলে গাছ কেটে নতুন চারা লাগালে ভালো হয়। এর কারণ হচ্ছে, বয়সী আম্রপালি গাছের ফল ছোট হয় ও ফলন কমে যায়। আম্রপালি অতুলনীয় মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি আম। এর রং ও গন্ধ অসাধারন। এই আম সাইজে কিছুটা লম্বা ও ছোট। আম রুপালি ওজনে ৭৫ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। কম আঁশ যুক্ত এই আমটির খোসা পাতলা এবং আঁটিও পাতলা। আম্রপালি সাধারনত ফজলি আমের পরে আসে।

হাড়িভাঙ্গা আম: বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়ীর বাগানে প্রজাবাৎসল, উদারমনা ও সৌখিন রাজা তাজ বাহাদুর শিং এর আমলে আমদানিকৃত ও রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল যা ১৯৮৮ সালের বন্যা ও ভাঙ্গনে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১নং খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার, পিতা মৃতঃ তমির উদ্দিন পাইকার আমের ব্যবসা করতেন। তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। জমিদার বাগানের আমদানীকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি উহার একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন। বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা ওই হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন। কালের বিবর্তনে বৃক্ষটি ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয়। মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তাবৃন্দ ওই গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম। গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাড়িভাঙ্গা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে।
হাড়িভাঙ্গা আম গাছের চেহারা লক্ষ্যণীয় ও আকর্ষণীয়। ডগা বা ছায়ন পূষ্ট ও বলিষ্ঠ। উহার ছায়ন দ্বারা গ্রাফটিং করলে বা ডালে জোড়কলম লাগালের গাছ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অল্প দিনের মধ্যে ডালপালা বিস্তৃত হয়ে গাছের পরিধি লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যায়। চারা রোপনের পরবর্তী বছরেই মুকুল আসে, তবে প্রথম বছরে মুকুল ভেঙ্গে দিলে গাছের ডগার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। হাড়িভাঙ্গা আম গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গাছের ডালপালা উর্ধ্বমূখী বা আকাশচুম্বী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশী বিস্তৃত হতে দেখা যায়। ফলে উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়-বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েনা এবং আমও কম ঝড়ে পড়ে। আমটির উপরিভাগ বেশী মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত চিকন। আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা। আমের তুলনায় শ্বাস অনেক ছোট, ভিতরে আঁশ নেই। আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশী, গড়ে ৩টি আমে ১ কেজি হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে। পুষ্ট আম বেশী দিন অটুট থাকে। চামড়া কুচকে যায় তবুও পঁচে না। ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়। তবে আমটি খুব বেশী না পাঁকানোই ভাল। এছাড়াও অনেক নামে আম আছে তাঁর নামকরণের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানা নেই। তবে অনুসন্ধান চলছে এইসব আমের নামের সঠিক ইতহাস জানা থাকলে আমাদের জানাতে পারেন, আমরা তা তুলে ধরবো বিশ্ব দরবারে। যেমনঃ- খিরসা, অরুনা, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি।
আমাদের দেশে যেসব ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আমের নানাবিধ ব্যবহার, স্বাদণ্ডগন্ধ ও পুষ্টিমাণের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল হিসেবে পরিচিত। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবই আমচাষের উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম ফলে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুমচাষ এলাকায়ও উন্নত জাতের আম ফলছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা,সাতক্ষীরা, যশোর আমচাষের শীর্ষে অবস্থান করছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩২ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ৭৮ হাজার ১৯৫ একর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন হচ্ছে আট লাখ দুই হাজার ৭৫০ টন। বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। আর আম চাষের এলাকা তো প্রতিবছরই বাড়ছে। উৎপাদনও বাড়ছে। আর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজির মতো। ভারতে মাথাপিছু ১১ কেজি, পাকিস্তানে ৬ কেজি, মেলঙ্কাতে ৯ কেজি, ফিলিপাইনে ৬ কেজি, তানজানিয়ায় ৭ কেজি, সুদানে সাড়ে ৭ কেজি, জায়ারে ৫ কেজি এবং হাইতিতে ৫৫ কেজি।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD