November 6, 2024, 12:28 pm
সাইফুল ইসলাম জয়-হেলাল শেখঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র (অনুদিত) মুজিবনগর, বাংলাদেশ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১। যেহেতু একটি সাংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সালের ৭ডিসেম্বর হইতে ১৯৭১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯জন প্রতিনিধির মধ্যে আওয়ামীলীগ দলীয় ১৬৭ জনকে নির্বাচিত করেন। বর্তমান-২০২৩ইং চলমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে জাতি সেই অপেক্ষায় রয়েছেন কিন্তু মাত্র ৮০/টাকা প্রতি কেজি আদা এখন ৩০০/টাকা মূল্যে বিক্রি করছে-এ কেমন দুর্ভিক্ষ? সকল জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণ কি জাতি জানতে চায়, অনেকেই সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। বিশেষ করে সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণকে ১৯৭১ সালের ৩মার্চ তারিখে মিলিত হইবার জন্য আহ্বান করেন, যেহেতু এই আহত পরিষদ সভা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ তাহাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সহিত আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক ঘোষণা করে, যেহেতু এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতা মূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এবং যেহেতু একটি বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ, অন্যান্যের মধ্যে, বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের উপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও গণহত্যাসহ অসংখ্য অপরাধ সংগঠন করিয়াছে এবং অববরত করিয়াছে।
পাকিস্তান সরকার একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়া, গণহত্যা করিয়া এবং অন্যান্য দমনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ একত্রিত হইয়া একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের জন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করিয়া তুলিয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব সাহসীকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখন্ডের উপর তাহাদের কার্যকর কর্তৃত্ব করিয়াছে। যেহেতু আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে, নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদরূপে গঠন করিলাম এবং পারস্পরিক আলোচনা করিয়া এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তাঁহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন। গণপরিষদ আহ্বান মুলতবীকরণ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন এবং বাংলাদেশের জনগণকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ সরকার প্রদানের লক্ষে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সকল কার্য করিতে পারিবেন। আমরা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির উপর এতদ্বারা অর্পিত সমুদয় ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপরাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং তিনি উহা প্রয়োগ ও পালন করিবেন। আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে আমাদের উপর যে দায় ও দায়িত্ব বর্তাইবে উহা পালন ও বাস্তবায়ন করার এবং জাতিসংঘের সনদ মানিয়া চলার প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি। আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে কার্যকর হয়েছে বলিয়া গণ্য হইবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, এই দলিল কার্যকর করার লক্ষ্যে এবং রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য আমরা অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে আমাদের যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করিলাম। অধ্যাপক ইউসুফ আলী বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতাবলে যথাযথভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হোন সেই সময়। তথ্যসূত্র: কমপিউটার বিসিএস প্রিলিমিনারী গাইড-ক. বিসিএস প্রিলিমিনারী গাইড (বা,বি.)-১০। (সংবিধান সম্পর্কিত তথ্য) সংবিধান কমিটি: ১৯৭২ সালে ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংবিধান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। এ কমিটির দায়িত্ব ছিলো সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা। কমিটির ৭১টি অধিবেশনে মিলিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে এবং ১৯৭২ সালের ১২অক্টোবর গণপরিষদের খসড়া পেশ করে যা ৪ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি: বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি চারটি। সেগুলো হলোঃ ১. আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস, ২. গণতন্ত্র, ৩. জাতীয়তাকাদ, ৪.সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের অর্থে সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে বর্ণিত হলো: সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাঃ বাংলাদেশের সংবিধান সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতেই প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত। মন্ত্রীগণ জাতীয় সংসদের নিকট ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে দায়ী। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তারিখ: ১৭/০৪/১৯৭১ইং। বর্তমান রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন মহোদয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তারিখ-১৭ এপ্রিল ১৯৭১ হইতে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত। এরপর প্রধানমন্ত্রী হোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ জানুয়ারি ১৯৭২সাল হতে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত, এরপর ক্যাপ্টেন এম. মুনসুর আলী ২৫ জানুয়ারি ৭৫ হতে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চলমান ২০২৩ইং সাল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে তখন ধারণা করা হয় ২০১০ সালে ২০ কোটি লোকসংখ্যা দাঁড়াবে কিন্তু সেই হিসাবটি সঠিক হয়নি, বর্তমানে ২০২৩ সালে প্রায় ১৮ কোটি লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অভিমত প্রকাশ করা হয় ২০২৩ইং সালে (সম্ভাব্য) দেশে এবং বিশ্বব্যাপী দূর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন যে, ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হতে পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। {বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস)ঃ- ১৮২২ সালে মে মাসে বরিশালে প্রবল ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস হয়, সেই সময় আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি হয় তফসিল অফিসের কাগজপত্র ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, এ ঘটনায় প্রায় ৪০ হাজার লোক নিহত হয়েছেন। প্রায় ১ লাখ গবাদি পশু নিখোঁজ হয়েছিলো। ১৯৮৮ সালে ২৯ নভেম্বর খুলনা উপকূলে ১৬০ কি. মি.বেগে প্রবাহিত প্রবল হ্যারিকেন, ঘুর্ণিঝড় মংলার কাছে ১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস হয়। ১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিল চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনায় ৩৯০ কি. মি. বেগে প্রবল হ্যারিকেন ঘুর্ণিঝড় এবং ভয়াবহ জলোচ্ছাস হয়। সেসময় প্রায় ২ লাখ লোক নিহত ও প্রায় ১লাখ লোক নিখোঁজ হয়। ৭০.০০০ গবাদি পশু মারা যায়। সেইসময় উক্ত ঘুণিঝড় ও জলোচ্ছাস হওয়ার ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা আজও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। প্রায় প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে ঘুর্ণিঝড় হলেও আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশের মানুষদেরকে হেফাজত করেন।