November 6, 2024, 12:27 pm
মোহাম্মদ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় :
চাকুরী দেয়ার নাম করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ আকবর আলী ও মহিলা সদস্য রৌশন আরার বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হিসাব সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমান যুগ্নসচিব সাবিনা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া যোগদান পত্র দিয়ে এই টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
গত ২৫ মে মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের স্নাতক সম্মান ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিতভাবে এই অভিযোগ করেছে।
অভিযোগে জানা যায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি মহিলা সদস্য রৌশন আরা গত মার্চ মাসে গ্রামীণ আত্বিয়তার সূত্র ধরে হাবিবুর রহমানকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরীর ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেয়। এসময় ওই গ্রাম পুলিশকেও ফোনে তার বাড়িতে ডেকে নেয়। পরে গ্রাম পুলিশ আকবর আলী ডিসি অফিসে চাকুরী দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। চাকুরির জন্য তিনি ৯ লক্ষ টাকা দেয়ার কথা বলে। সবকিছু শুনে হাবিবুর রহমান ঘুষ দিতে অস্বিকৃতি জানায়।
পরে মহিলা সদস্য ও গ্রাম পুলিশ মিলে হাবিবুরের বাবা হবিবর রহমান সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা ১ মাসের মধ্যে চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। চাকুরীর লোভ সামলাতে না পেরে ৯ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে সম্মতি প্রদান করে পরিবারের সদস্যরা। এদিকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩ কিস্তিতে মোট ৯ লক্ষ টাকা রৌশন আরা ও আকবর আলীকে প্রদান করেন।
টাকা নেয়ার পর আকবর আলী দু একবার হাবিবুরকে ডিসি অফিসে নিয়ে এলেও উপরতলায় নিয়ে যায়নি। এভাবে এক মাস কেটে গেলেও চাকুরীর কোন ব্যবস্থা নাই দেখে হাবিবুরের সন্দেহ হয়।
পরে সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা চাকুরীর জন্য ওই মহিলা সদস্যকে চাপ দেয়। তিন মাস পর ২০২২ সালের ২ জুন একটি যোগদানপত্র হাবিবুরকে ধরিয়ে দেয়া হয় তারা। ওই যোগদান পত্রে সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর দেখে হাবিবুর রহমান বুঝতে পারে সে প্রতারনার স্বীকার । কারণ এ সময়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত জহুরুল ইসলাম।
সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন সচিবালয়ে যুগ্নসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। যোগদান পত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের স্বাক্ষরও জাল করা হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকীর কাছে বিচার প্রার্থনা করে হাবিবুর রাহমান ও তার পরিবার। বিচার সালিসে গ্রাম পুলিশ আকবর আলী ও রৌশনারা বিষয়টি স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প্যে টাকা ফেরতের অঙ্গিকারনামাও দেয়।
এবছরের গত মার্চ মাসে টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়নি তারা। হাবিবুর রহমান জানায় আমি কৃষকের সন্তান। আমার বাবা গম ভুট্টা বিক্রী করে এসব টাকা দিয়েছি। আমার সম্মতি ছিলনা। কিন্তু বাবা চেয়েছিলেন আমার একটা চাকুরী হোক। কিন্তু এই দুই প্রতারক আমাদের সাথে ভয়ানক প্রতারনা করেছে। আমার কাছে ফোন রেকর্ড থেকে শুরু করে সকল ধরনের তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আমি তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই।
গ্রামপুলিশ আকবর আলী ঘটনা স্বীকার করে জানান, মহিলা সদস্য রৌশন আরা আমাকে ডেকে নিয়ে আমাকে দেখিয়ে হাবিরের কাছে টাকা নেয়। তবে ০৯ লক্ষ টাকার মধ্যে ০৪ লক্ষ টাকা আমি নিয়েছি। বাকি টাকা মহিলা মেম্বারনি নিছে। আমি সব টাকা দিব কেন? আমি যেটা নিয়েছি সেটা ফেরত দিব।
মহিলা সদস্য রৌশন আরা জানান, আকবর আলী (গ্রাম পুলিশ) ও তার কথিত মামা পরিচয়ের আনোয়ারুল হক নামের এক ব্যাক্তি সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে সমস্ত টাকা পরিশোধ করবে বলে অঙ্গিকারও করেছে। আমি কোন টাকা নেইনি।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, তারা দুজনেই ঘটনা স্বীকার করেছে। কিন্তু আকবর আলীকে বার বার বলার পরও সে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজাদ জাহান বলেন আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।