March 18, 2025, 2:54 pm
মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড়।
৬৬ জন উদ্ধার ; নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফিরে যা জানালেন বন্যা এখনো হলুদের গন্ধ শরীর থেকে যায়নি। মুছে যায়নি মেহেদির দাগ। দেড় মাস আগে হিমালয় আর বন্যা সাতপাঁকের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। জীবনের বাকি সময়টা একসাথে কাটাবার স্বপ্ন নিয়ে পূজা উৎসবে মেতেছিলেন দুজনে। রোববার তারা দুজনে মহালয়ার ধর্মসভায় যোগ দেয়ার জন্য বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। করতোয়ার পানিতে স্নান করে পাপমুক্তির আশা ছিল তাদের। কিন্তু সেই করতোয়াই কেড়ে নিলো স্বামীর জীবন। নৌকাডুবিতে সকল স্বপ্নের ঘটল সমাপ্তি।
বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি খালপাড়া গ্রামের নবদম্পতি হিমালয় চন্দ্র ও বন্যা বোদেশ্বরী মন্দির দর্শনের উদ্দেশে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির শিকার হন। বন্যা বেঁচে ফিরলেও নিখোঁজ রয়েছেন স্বামী হিমালয়। উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে নিজের কাপড় খুলে প্রাণে বাঁচেন বন্যা। কিন্তু আঁকড়ে রাখতে পারেননি স্বামীকে। তাদের সঙ্গে থাকা হিমালয়ের মামাতো বোন আঁখিরও খোঁজ মেলেনি।
হিমালয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেড় মাস আগে ওই গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ-সারদা রানি দম্পতির ছেলে হিমালয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বন্যার। ঘটনার দিন খুব আনন্দে সেজে বের হয়েছিলেন বন্যা-হিমালয়। ফিরে এসে পূজার কেনাকাটা করার কথা ছিল তাদের।
দেবীগঞ্জ উপজেলার ছত্র শিকারপুর গ্রামের লিপি রানি (৩০) পরিবারের আরও তিনজনকে নিয়ে উঠে বসেন নৌকায়। ইচ্ছে ছিল বাবা-মায়ের জন্য অর্পণ করবেন মন্দিরে। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছানো তো দূরের কথা নদীই পার হতে পারেননি তারা। নৌকার অন্যান্য যাত্রীদের মতো একসঙ্গে প্রাণ যায় এই ৪ জনেরও।
লিপি রানি রবিন বর্মণের স্ত্রী। লিপি রানির সঙ্গে ছিলেন তার ৪ বছর বয়সি ছেলে বিষ্ণু বর্মণ, রবিনের ছোট ভাই কার্তিক বর্মণের স্ত্রী লক্ষী রানি (২৫) এবং রবিনের ভাতিজা তিন বছর বয়সি শিশু দীপঙ্কর বর্মণ।
রোববার রাতে উদ্ধার হওয়া ৪ জনের মরদেহের সৎকার করতে সোমবার সকালে শশ্মানে নিয়ে গেছেন পরিবারের লোকজন। একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ওই পরিবারে। স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক রবিন। ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন রবিনের ছোট ভাই বাবুল।
বাবুল বলেন, আমার তিনবছর বয়সি একমাত্র ছেলে দীপঙ্করকে আমার বৌদিদের সঙ্গে মন্দিরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো সে লাশ হয়ে ফিরবে। নিহত লিপির স্বামী রবিন বলেন, নৌকাডুবিতে আমার সব শেষ হয়ে গেল।
এর আগে, গতকাল রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সোমবার ভোর থেকে আবার উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ নারী, ১৩ শিশু ও ১২ পুরুষসহ ৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে। তবে বেশিরভাগ মরদেহ স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করছেন।
ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।