April 18, 2024, 10:41 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী এখন বিলে পরিনত হয়েছে র‌্যাব-১২’র অভিযানে ভিকটিম উদ্ধার ও প্রধান আসামি গ্রেফতার নড়াইলে চোরাই মোটরসাইকেলসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের দুইজন গ্রেফতার জাহাঙ্গীর আলমের গণসংযোগে জনতার ঢল গোদাগাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন ব্রাকের “প্রবাস বন্ধু ফোরাম ” সদস্যদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়িতে য়াকবাকসা ক্লাবে কৃতি শিক্ষার্থী সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা খাগড়াছড়িতে নদীতে ডুবে সাদিয়া নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বরিশালের বাবুগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত – ৫ সুন্দরগঞ্জে ওসি মাহবুব অষ্টমী মেলার নামে জুয়াখেলাকে রুখে দিয়ে-২০ জুয়ারি আটক
নড়াইলে প্লাষ্টিকের হাত পাখার দাপটে বাজার ছাড়া তালপাতার পাখা

নড়াইলে প্লাষ্টিকের হাত পাখার দাপটে বাজার ছাড়া তালপাতার পাখা

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি :
আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিনের পর দিন হারিয়ে যাচ্ছে নানান ধরণের প্রাচীন নিদর্শন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নিদর্শন হলো হাতপাখা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে হাতপাখার ব্যবহার। বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ারকন্ডিশন সহ নানান ধরণের আকর্ষনীয় প্লাষ্টিকের হাত পাখার দাপটে বিলুপ্তির পথে প্রাচীন এই নিদর্শন। বিক্রি না হওয়ায় কারিগরেরা হাতপাখা বানানো বন্ধ করে অন্য কাজে মন দিয়েছেন। আগে হাতপাখা বানিয়ে সংসার চলতো তাদের। বর্তমানে হাতপাখার ব্যবহার না থাকায় পেশাদার কারিগররা হাতপাখা বানানো বন্ধ করে জীবন-জিবীকার জন্য অন্য কাজে মনসংযোগ করেছেন। যাতে করে কারুশিল্পের একটি অংশ হারাতে বসেছে।
আবহমানকাল থেকে যখন বিদ্যুত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিলো না সে সময় থেকেই মানুষের দেহ শীতল করার জন্য ব্যাবহৃত হতো হাতপাখা। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত নানাভাবে পাখার ব্যবহার চলছে। প্রাচীনকালে অতি গরমে বাতাসকে চলমান করে, গরম হাওয়া সরিয়ে অপেক্ষাকৃত শীতল হাওয়া প্রবাহের জন্য হাতপাখার ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে রুপান্তরের ধারাবাহিকতায় হাতপাখা একটি অলঙ্কারিত শিল্পে সৌন্দর্য লাভ করেছে। পাঁচ বছর আগেও উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ হাতপাখার ব্যবহার করতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন আর হাতপাখা চোখে পড়ে না বললেই চলে। হাতপাখার সাহায্যে যতটা হাওয়া বওয়ানো যায়,তার চেয়ে বড় জায়গা ঠান্ডা রাখতে ভিন্ন প্রযুক্তির আবিষ্কারে হাতপাখার অস্তিত্ব বিলীন প্রায়!
গ্রীষ্ম মৌসুমে গ্রামের পুরুষ-মহিলা হাতে একটি করে পাখা নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকতেন কোন গাছের নিচে। কেরাত কেরাত শব্দে পাখা ঘুরিয়ে শীতল করতো দেহ। প্রতিটি বাড়ীর উঠোনে বসে মহিলারা হাতপাখা দিয়ে শীতল করতো নিজের দেহ সাথে স্বামী সন্তানের দেহ। হাতপাখার প্রচলন অধিকাংশ দেখা মিলতো গ্রাম-গঞ্জে। বর্তমান সময়ে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি কোনায় বিদ্যুত পৌঁছে যাওয়ার ফলে আর তেমন ব্যবহার নেই হাতপাখার। গ্রাম্য লের গৃহবধুরা বাঁশের বাতি দিয়ে চাক কেটে নিয়ে বিভিন্ন কালারের বাহারী কাপড় দিয়ে বানাতেন দৃষ্টিনন্দন হাতপাখা। আবার সেই পাখার মধ্যে লিখতেন প্রিয়জনের নাম বা নিজের সন্তানের নাম। কিন্তু কালের পরিক্রমায় বর্তমানে হাতপাখার আর কদর নেই। বর্তমানে উঠতি বয়সের মেয়েদের হাতপাখার কথা জিজ্ঞেস করলে চমকে ওঠে। যেন কোনদিন নাম-ই শোনেনি!
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য হাতপাখা গল্প,ছড়া,কবিতা,গান ও উপন্যাসের বহু জায়গা দখল করে আছে।
জেলায় পাখা তৈরি করে জিবীকা নির্বাহ করতো শ’খানেক পরিবার। তালপাখা তৈরির ক্ষেত্রে শৈল্পিকতা ফুটে উঠতো কারিগরদের হাতের ছোঁয়ায়। আগে এই অ লের গ্রামের মানুষ গরম থেকে নিস্তার পেতে তালপাতা, বাঁশের কি , গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্ন রকম কাপড় সংগ্রহ করে পাখা বানাতেন। কিছু কারিগর তালপাতা,বাঁশের কি স্বল্পমূল্যে পাতা কিনেও পাখা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন।
স্থানীয় হাট বারে বা বিভিন্ন মেলায় চোখে পড়তো হাতপাখার পসরা। মেলায় ঘুরতে আসা গৃহবধু,কিশোর-কিশোরীরা পছন্দমতো নকশা দেখে সাগ্রহে কিনতেন হাতপাখা। অনেকে প্রিয়জন বা আত্মীয় স্বজনকে উপহার দেওয়ার জন্যও হাতপাখা কিনতেন। জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হাতপাখা তৈরীর পেশাদার কারিগররা পাখা বানানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন পাখা বানানো বন্ধ করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে একজন কারিগর বলেন, “পাখা বানিয়ে আগে যা রোজগার হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। বর্তমানে হাতপাখা বিক্রি হয় না। যার কারনে অন্য পেশা বেছে নিয়েছি।”
জেলার নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রামের সন্তয মিস্ত্রি
৬৮ বছর বয়সী সন্তষ মিস্ত্রি
সাথে কথা হলে তিনি বলেন ফ্যানের বাতাস ভালো নাগে না। আত্তিরে শুতে খালি গোঁ গোঁ শব্দ করে। বাতাস তেমন গাওত নাগে না। কোন সমে গরম বাতাস বারায়। বিদিকিচ্চি নাগে মোক। আগে মোর পাখা-ই মেলা ভালো আচোলো।
তবে অনেক হাতপাখার প্রধান কারিগর বা কারুশিল্পি মহিলারা নিজে ব্যবহারের জন্য কাপড়ের হাতপাখা তৈরি করছেন। তারা সুতা দিয়ে কাপড়ের পাখা তৈরি করে থাকেন। সুতা দিয়ে ফুল তোলার আগে আউট লাইন ড্রইং করে নিয়ে ফর্মা তৈরির জন্য কারুশিল্পির কাজ করেন।এছাড়া এই পাখাগুলোতে রয়েছে নানান ধরনের ডিজাইন ও নানাবিধ নকশা।
গ্রামের অসংখ্য লোকজন এই প্রতিবেদককে জানান, গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গিয়েছে। ফলে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে ইলেক্ট্রিক পাখা। হাতপাখার গ্রয়োজনীয়তাও কমে যাচ্ছে। অথচ পাঁচ বছর আগেও অনেক পরিবার হাতপাখা ব্যবহার করতেন। আমরা আগের দিনে হাতপাখার হাওয়া খেয়ে যে তৃপ্তি বা শান্তি পেয়েছি তা বিদ্যুতের পাখা, এসি,ফাইবারের পাখাও কোন দিনও দিতে পারবে না।
এভাবেই অবহেলা ও গুরুত্বের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রাচীন হাতপাখা। একদিকে হাতপাখা যেমন দেহ শীতল করে অপরদিকে অনেকটা শরীরচর্চাও হয় বলে জানান অনেকে। তাই এই হাতপাখা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে হাতপাখার ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD