April 18, 2024, 11:05 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী এখন বিলে পরিনত হয়েছে র‌্যাব-১২’র অভিযানে ভিকটিম উদ্ধার ও প্রধান আসামি গ্রেফতার নড়াইলে চোরাই মোটরসাইকেলসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের দুইজন গ্রেফতার জাহাঙ্গীর আলমের গণসংযোগে জনতার ঢল গোদাগাড়ীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী উদ্বোধন ব্রাকের “প্রবাস বন্ধু ফোরাম ” সদস্যদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়িতে য়াকবাকসা ক্লাবে কৃতি শিক্ষার্থী সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা খাগড়াছড়িতে নদীতে ডুবে সাদিয়া নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু বরিশালের বাবুগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত – ৫ সুন্দরগঞ্জে ওসি মাহবুব অষ্টমী মেলার নামে জুয়াখেলাকে রুখে দিয়ে-২০ জুয়ারি আটক
অনাবৃষ্টিতে বরেন্দ্রঅঞ্চলের ভূমি পুড়ছে, কৃষক কাঁদছে। আল্লাহ পানি দাও।

অনাবৃষ্টিতে বরেন্দ্রঅঞ্চলের ভূমি পুড়ছে, কৃষক কাঁদছে। আল্লাহ পানি দাও।

মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকেঃ খরতাপের দাপট দেখিয়ে আষাঢ় গেল। শ্রাবণ এলেও আসেনি প্রত্যাশিত বৃষ্টি। পুরো আষাঢ়জুড়ে ছিল প্রচন্ড তাপাদহ। সকালের সূর্যটা যেন উদয় হয় ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আগুনের হল্কা নিয়ে। বেলা যত বাড়ে তাপ তত বাড়ে। উঠে যায় ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। চৈত্র বৈশাখের দহন চলেছে আষাঢ়জুড়ে। এমন তাপাদহ দেখে বোঝার উপায় ছিলনা আষাঢ় মাস।

প্রচন্ড খরতাপে গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকের লাগানো ফসল মরে যাচ্ছে, পুড়েছে প্রকৃতি, মানুষ, পশুপাখি, ফসলের ক্ষেত। এক অসহনীয় গুমোট অবস্থা। ফসলের ক্ষেত, অফিস, বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোথাও স্বস্তি নেই। মানুষ দর দর করে ঘামছে। এর সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের আসা যাওয়া পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। প্রচন্ড তাপাদহে কাহিল হয়ে পড়েছে বয়স্ক ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা। হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।

এ অঞ্চলের লাইফ লাইন পদ্মা নদীতে এবার এখনো পানি আসেনি। একদিকে বৃষ্টিহীনতা অন্যদিকে ভারতের ফারাক্কা দিয়ে পানি আটকে রাখার কারনে বিশাল বালিচরের নীচে চাপা পড়া মরা পদ্মা এখনো জেগে ওঠেনি। শুধু পদ্মা নয় তার শাখা নদ নদীগুলো প্রান পায়নি। বৃষ্টি না হওয়ায় খাল বিল ভরেনি। চারিদিকে চলছে পানির জন্য হাহাকার। মানুষ চাতক পাখির মত চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির দিকে।
প্রচন্ড খরতাপের কারনে পদ্মার বিশাল বালিচর মানুষকে বিড়ন্বনায় ফেলেছে। দুপুরের আগে বালিচর তপ্ত কড়াইয়ে পরিনত হচ্ছে। তপ্ত বালি বাতাসে ভেসে এসে চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টে আছে নদী তীরবর্তী মানুষ। নদীর তীরজুড়ে মাইলের পর মাইলজুড়ে দরিদ্র মানুষের বসতি। টিনের এসব বাড়ি ঘর দশ বারো ফুটের বেশী উচ্চ নয়। সেই টিনের চালা চুইয়ে যেন তাপ ঘরের ভেতরে নামছে। উপর দিকে তাপ অন্যদিকে গরম বালি মিশ্রিত বাতাস। জানালা নামক ঝাপও খোলা রাখা যায়না। ঘরের ভেতর এক দম বন্ধকর অবস্থা। সাধারনত চৈত্র বৈশাখে এমন অবস্থা হলে এখন জৈষ্ঠ আষাঢ়জুড়ে এমন অবস্থা চলছে। যেন খরার সময় আরো প্রলম্বিত হয়েছে। প্রবীনরা বলছেন এই পদ্মা ছিল আর্শীবাদের। বাতাসে এ নদীর পানি ছুঁয়ে এসে গায়ে শীতলতার পরশ দিত। আর এখন বাতাসে নদীর তপ্ত বালির ঝাপটা।

এক সময়ে পদ্মা তীরের নির্মল আবহাওয়ার কথা ভেবে নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে বৃটিশ আমলে নদীর তীর ঘেষে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, পুলিশ কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিচারকদের আবাসস্থল গড়ে তোলা হয়। সার্কিট হাউস, জেলখানা, রিভার ভিউ স্কুল নামে পদ্মামূখী স্কুল এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। সব ঠিক আছে শুধু নেই প্রমত্ত পদ্মার সেই রুপ। ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে তিলে তিলে মেরে ফেলা হয়েছে প্রমত্ত পদ্মাকে। এখনো বিহার অঞ্চলে ভারী বর্ষন কিংবা বন্যা না হওয়ায় মরা পদ্মায় বান ডাকেনি। ওপারে বন্যা হলে বরাবরের মত ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়া হবে। ঠেলে দেয়া হবে বিপুল ঘোলা পানি। নাব্যতা হারানো কারনে চারিদিকে সৃষ্টি হবে বন্যা। শুকনো মওসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা আর বর্ষার সময় ডুবিয়ে মারার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে ভারতের পানি জল্লাদরা।

এমন অবস্থা চলছে। যেন খরার সময় আরো প্রলম্বিত হয়েছে। প্রবীনরা বলছেন এই পদ্মা ছিল আর্শীবাদের। বাতাসে এ নদীর পানি ছুঁয়ে এসে গায়ে শীতলতার পরশ দিত। আর এখন বাতাসে নদীর তপ্ত বালির ঝাপটা।

আষাঢ় শ্রাবন মাসে চরে ফুটবল খেলার দৃশ্য বলে দেয় পদ্মা করুন দশা। বৃষ্টিহীনতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ পয্যায়ে গিয়ে দেখা যায় বোরো ধান কাটার পর এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরী করতে পারেনি। আমন আর শাকস্বব্জির বীজতলা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছে। প্রচন্ড খরতাপে সব নেতিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে আবহাওয়া সহনীয় হবার পর তারা চাষাবাদে নামবেন।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে এখানে গত জুন মাসে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর আর বৃষ্টির দেখা নেই। এখানকার সিনিয়র পর্য়বেক্ষক গাউসুজ্জামানের অভিমত রাজশাহীতে বিগত বছর গুলোয় বৃষ্টিপাতের পরিমান অনেক কমেছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে হচ্ছে। গত ১৪ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল প্রায় বিয়াল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এখনো মৃদুতাপদাহ চলছে। তাপমাত্রা ৩৬/৩৯ ডিগ্রী মেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তাছাড়া আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছি। সে তুলনায় গাছ লাগানোর পরিমান কম। পানির আধার বিশেষ করে পুকুরগুলো ভরাট হতে হতে পুকুরশূন্য হতে চলেছে। তাছাড়া নদীর নাব্যতা কমেছে। সব মিলিয়ে জলবায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাবের কারনে আবহাওয়ার খাম খেয়ালিপনা বাড়ছে। বৃষ্টির পানির জন্য মাঠে মাঠে কৃষকের হাহাকার, বিদ্যুতের লুকোচুরির কারণে ডিপটিউল গুলোতে কৃষকদের দিন রাত সব সময় লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল্লাহ মামুন জানান, আমি সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। টানা প্রায় ২০ দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমার ধানের জমিতে পানি শুকিয়ে জমি ফেঁটে চৈচির হয়ে গেছে। ডিপ-টিউবওয়েল থেকে পুরো জমিতে পানি দিয়ে তা কভার করা সম্ভব হচ্ছে না। একদিন পর পর জমিতে পানির প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি ছাড়া ফসল বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে জানান এই কৃষক।

মহিশালবাড়ী এলাকার শামসুল ইসলাম নামের অপর কৃষক জানান, বর্তমান সময়টা কৃষক আকাশের বৃষ্টির নির্ভর করে আবাদ করে থাকে কিন্তু আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেলেও বৃষ্টির কোন দেখা নাই। ফলে বৃষ্টির অভাবে পুরো আবাদ করতে পারিনি। ডিপ-টিউবওয়েলেও পানি সঠিক সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না ফলে আবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে বলে এই কৃষক জানান।
তানোর উপজেলার কৃষক রফিকুল জানান, বর্তমান যে খড়া এমন অবস্থান ধানের জমিতে প্রচার পানির প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। শ্রীঘ্রই বৃষ্টির পানি না হলে ফসল বাঁচানো দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার কৃষক আতাউর রহমান জানান, বৃষ্টির কারণে আমরা আবাদ শুরু করতে পারিনি। আমাদের সব জমি ডিপ-টিউবওয়েলের আওতায় না হওয়ার করনে বেশকিছু জমি আবাদ শুরু করতে পারিনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি কখন বৃষ্টি হবে তখনই আবাদ শুরু করবো।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, এবার উপজেলায় ২৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবার ২৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর ছিলো। বৃষ্টির কারনে অনেক কৃষকের আবাদ বন্ধ আছে আবার যাদের আবাদ করা হয়েছে তাদের পানির সংকট থাকায় জমিতে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
এসব সমস্যা নিয়ে আমরা বিএমডিএর সাথে কথা বলেছি তারা যাতে কৃষকদের সময় মতো পানি দেয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ না দিয়ে পারায় কৃষকরা বিপদে পড়ছে। যেহেতু এটা প্রাকৃতিক বিষয় তাই বৃষ্টি না হলে কৃষকদের পানির সমস্যা সহসা সমাধান করা সম্ভন নয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. তৌফিকুর রহমান জানান, এবার রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। গতবার আবাদ হয়েছিলো ৭৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর ।

রাজশাহী অঞ্চলে টানা ২০ দিন বৃষ্টি নাই ফলে কৃষকরা সময়মত আবাদ শুরু করতে পারেনি। আমরা বিএমডিএর সাথে কথা বলেছি কৃষকদের ঠিক মত যাতে পানি সরবরাহ করে। অনাবৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত ফসলের বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি । আগামী সপ্তাহে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আশাকরা যায় অতিদ্রুত পানির সমস্যা কেটে যাবে । এদিকে গোদাগাড়ীতে বৃষ্টির জন্য ধর্মপ্রান মানুষ আল্লাহর দরবারে ইস্তেকার নামাজ আদায় করছেন।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD