মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
কেএম শহীদুল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে লাউড় রাজ্যের দুর্গের খননকাজের কবলে শঙ্কিত প্রায় ৭০টি পরিবারের ৫ শতাধিক মানুষ। গ্রামের বাসিন্ধাদের পুনর্বাসন না করে খননকাজ বন্ধ রাখার দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচী অব্যাহত রেখেছে ভ্ক্তুভোগীমহল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় গ্রামবাসীর ব্যানারে খননকাজ বন্ধ রেখে পুনর্বাসনের দাবীতে মানববন্ধন করেছে শঙ্কিত হলহলিয়া গ্রামের ভুমিহীন ৭০টি পরিবারের সদস্যবৃন্দ। মানববন্ধনের প্রায় ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ঠ সমাজসেবক জুনাব আলী, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান শিক্ষক মোশররফ, মাওলানা সৈয়দ আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাসুদ, সাবেক মেম্বার আব্দুল আহাদ, ডাঃ হাবিবুর রহমান, আমির উদ্দিন, হাজী সিদ্দিকুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইফুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শিক্ষক মোঃ বুরহান উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেহেরবানু, রহিমা আক্তার প্রমুখ। বক্তরা বলেন, গত ১০ দিন ধরে আমাদের গ্রামে দুর্গ খননের কাজ করছে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননের পুর্বে আমাদের কোন নোটিশ ছাড়াই ঘর-বাড়ি, বাথরুম, বারান্দা,বাঁশঝাড়, গাছপালা গুড়িয়ে ফেলছে। আমরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে গৃহহীন হওয়ার শঙ্কায় আছি। যেভাবে খনন চলছে নিশ্চিত হুমকি’র মুখে পড়তে পারে বাড়ি-ঘর। আমরা সভ্যতার আবিস্কার হোক চাই তবে আমাদের পুনর্বাসন করে করতে হবে। এবং খননকাজ বন্ধ রাখার দাবী জানান বক্তারা।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্নেন্দু দেব বলেন, হলহলিয়ায় খননকাজ চলছে। আমি গত মঙ্গলবার গিয়েছিলাম। গ্রামবাসীকে হতাশ না হওয়ার জন্য বলেছি। পুনর্বাসনের কোন প্রয়োজন নেই কারন আমরা তো তাদের উচ্ছেদ করবনা।
এ ব্যাপারে প্রতœতত্ব অধিদপ্তর চট্রগ্রামও সিলেট বিভাগ আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, প্রাচীন লাউর রাজ্যের হলহলিয়া গ্রামে ৪ যুগের সভ্যতার সন্ধান মিলেছে। এক সভ্যতার সাথে আরেক সভ্যতার সংযোগ মিলেছে। এটি হবে প্রতœত্ত্ব পর্যটন কেন্দ্র। খননকাজ চলমান রয়েছে। আমরা কারো বসতভিটা উচ্ছেদ করবনা। বসত- ভিটা ঠিক রেখেই খনন চলবে। এবং কোন কারনে বাড়ী-ঘর ক্ষতির সম্মুখিন হলে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবো।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ বলেছেন এই হলহলিয়া গ্রামে বসতকারী ৭০টি পরিবারের মাঝে যারা সরকারের খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়েয়েন এবং যারা নেননি তাদের সকলকেই পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন এই জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। ##
উল্লেখ্য সম্প্রতি প্রতœতত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় গত ১৩ নভেম্বর ১ হাজার বছর পুর্বের বৌদ্ধ, পাল, সেন ও সুলতানী আমলের হাবেলীর স্থাপত্য ও লাওড় রাজ্যের দুর্গ খনন শুরু করে প্রতœতত্ব অধিদপ্তর। খননকাজ শুরু করার ফলে কোন নোটিশ ছাড়া হলহলিয়া গ্রামের যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বাড়ীর রান্নাঘর, বাথরুম, বারান্দা গাছপালা, বাঁশঝাড় কেটে রাস্তায় ফেলে রেখেছে খননকাজে অংশ নেয়া লোকজন। বাড়ি-ঘর হারানো আতঙ্কে পুনর্বাসনের দাবী গ্রামবাসীর। ##