বুধবার, ১৮ মে ২০২২, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরীর বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থীর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নিরব ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ঘটনার এখনো তদন্ত না হওয়ায় অভিভাবকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। এ ব্যাপারে গত ১১ নভেম্বর ওই শিশুর পিতা রথীন্দ্র চন্দ্র দাশ থানায় লিখিত অভিযোগও করেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন গত ১৭ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর রাতে আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী গোপাল রায় মদ খেয়ে তার সঙ্গীদের নিয়ে আমার ঘরে এসে আমার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পরে গোপাল রায় আমার ঘরে রান্নার কাজে ব্যবহৃত দা নিজ হাতে নিয়ে আমার স্ত্রীকে হত্যা করতে উদ্যেত হলে আমি প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসি। পরে গোপাল রায় দা নিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করে আমাকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল। পরে আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে তাকে ধাওয়া করলে পালিয়ে যায় দপ্তরী গোপাল রায়। একই রাতে দপ্তরী গোপাল রায় মদ খেয়ে নিয়ামতপুর কালী মন্দিরে পূজা দেখতে গিয়ে খারাপ আচরণ করলে সেখানেই তাকে চরথাপ্পর মারা হয়। ওই রাতে দপ্তরী গোপাল রায় আমার হাটির এক কন্যা সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। তার ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টাও করে দপ্তরী গোপাল রায়। পরে গভীর রাতে ঝাড়– নিয়ে দপ্তরী গোপাল রায়কে ধাওয়া করলে দপ্তরীর সঙ্গে থাকা ধর্ষণকারীর দল পালিয়ে যায়। এর আগে গত ১২ অক্টোবর আমার শিশু কন্যা আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে গেলে মাতাল ও চরিত্রহীন দপ্তরী গোপাল রায় আমার কন্যা শিশুকে যৌন নির্যাতন করে। আরো একাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতন করেছে দপ্তরী গোপাল রায়। আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এর বিচার চাইতে গেলে তারা দপ্তরীর পক্ষে অবস্থান নেয়। গোপাল রায় বহু টাকার বিনিময়ে এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। ওই নারীকেও বাহকের মাধ্যমে টাকা দিয়ে তার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল লম্পট দপ্তরী। দপ্তরীর লালসার শিকার এখন স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। এব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সুবিচার না পেয়ে উক্ত ঘটনা সমূহের বিষয়ে গত ৩০-১০-২০১৮খ্রিঃ লিখিত অভিযোগ করেছি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ, জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাল্লা। ঘটনার পর থেকে আমার কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী দপ্তরীর নির্যাতনের ভয়ে আর স্কুলে যেতে চাইছে না। শুধু আমার কন্যা শিক্ষার্থী নয়, এমন আরো বহু শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে না ওই দপ্তরীর নির্যাতনের ভয়ে।
এব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চাননবালার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইনটি কেটে দেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এবিষয়ে উপজেলার নবনিযুক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-মুক্তাদির হোসেন বলেন আমি আগামীকাল (১৩) নভেম্বর শাল্লায় যোগদান করেছি। আমি ঢাকায় যাচ্ছি, ঢাকা থেকে এসেই এবিষয়ে ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯২৫ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুলটি। স্কুলটি যেমন ভোটকেন্দ্র তেমনি সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রও। কিন্তু, স্কুলের অর্ধেক জায়গায় পাকা ল্যাট্রিনসহ স্থায়ী বসতঘর নির্মাণ করে দখলে রেখেছে দপ্তরী গোপাল রায়। ফলে শিক্ষার্থীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন কিংবা খেলাধুলা করতে পারছে না দপ্তরীর স্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে। ##