শুক্রবার, ২০ মে ২০২২, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
অবশেষে পাইকগাছা-কয়রার সীমান-বর্তী আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী উন্মুক্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥
অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পাইকগাছা-কয়রার সীমান-বর্তী আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান- বহাল রাখা হয়েছে। গত ৪ জুলাই সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৪৮তম সভায় এ সিদ্ধান- নেওয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ তাজুল ইসলাম মিয়া স্বাক্ষরিত স্বারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের অবমুক্ত বহাল রাখার সিদ্ধান-কে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, মৎস্য মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, পাইকগাছার গড়ইখালী ও কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সীমান-বর্তী ৬০ একর আয়তনের ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ গাংরখী-শালুকখালী নদী স’ানীয় গড়ইখালী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি ও গড়ইখালী ইউনিয়ন কৃষকলীগের আহবায়ক কামরুল ইসলাম গাইন ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন মৎস্য চাষ করে আসছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদীর বিভিন্ন স’ানে নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিস্কাষন ব্যবস’া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। ফলে যার বিরুপ প্রভাব পড়ে এলাকার কৃষি উৎপাদনের উপর। পাশাপাশি যেসব পরিবার নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো অসহায় হয়ে পড়েন এমন অসংখ্য পরিবার। ফলে এলাকাবাসী নদীটি অবমুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন দাবী জানিয়ে আসছিল। এ নিয়ে এলাকার লোকজন মানববন্ধন ও একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশও করে। ২০১৪ সালে আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকাবাসীর দাবীর সাথে একমতপোষণ করে নদীটি অবমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি এলাকার ৬টি নদী অবমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৯তম সভায় এলাকার পোল্ডার অভ্যান-রে স্লুইচ গেইট যুক্ত মরা কুচিয়া নদী, নড়া নদী, গাছুয়া নদী, উলুবুনিয়া নদী, ঘোষখালী নদী ও শালিকখালী (গাংরখী) নদী উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান- গৃহিত হয়। সংসদ সদস্যের সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান-গৃহিত জলমহলগুলো লীজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান- মোতাবেক ১৪২৪ সনের ৩০ চৈত্র ইজারার মেয়াদ শেষ হলে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে নিজেই নদীতে নেমে নদীর সকল অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ করে আলোচিত গাংরখী-শালুকখালী নদী অবমুক্ত ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিনপর নদীটি অবমুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী এ দিন এলাকায় আনন্দ মিছিল করে সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। এদিকে অবমুক্ত করার আড়াই মাস যেতে না যেতেই পুনরায় নদীটি ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে নদীটি পুনরায় ইজারা দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেন। যা নিয়ে গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে। যদিও উপদেষ্টার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কালীন ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর ইজারা প্রদান সংক্রান- অনুরূপ আরেকটি ডিও লেটার প্রদান করেন। উন্মুক্ত নদীটি পুনরায় ইজারা চেষ্টার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ন্যায় এলাকায়ও ব্যাপক তোড়পাড় সৃষ্টি হয়। এদিকে ইজারা সংক্রান- পূর্বের দেওয়া ডিও পত্র কার্যকার না করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১০ জুলাই সর্বশেষ আরেকটি ডিও পত্র দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি। ডিও পত্রে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, দুই উপজেলার সীমান-বর্তী গাংরখী-শালুকখালী বদ্ধ নদীর দুই পারে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। নদী সংলগ্ন এলাকায় ১০ হাজার বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। এছাড়াও স’ানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৯তম সভায় জলমহলটি উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান- গৃহিত হয়। তাছাড়া দুই উপজেলার সীমান-বর্তী জনগোষ্ঠীর বসবাস ও ফসল উৎপাদন এবং পানি নিষ্কাসনের স্বার্থে জলমহলের স্লুইচ গেইটটি উন্মুক্ত রাখা বিশেষ প্রয়োজন। এমতবস’ায় জলমহলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী বিশেষ অনুরোধ করেন।