মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দেশজুড়ে পুলিশ-র্যাবের মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা আসছে রাজধানীতে। টাকার লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের অবৈধ এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে তারা পেটে (পাকস্থলীতে) ইয়াবা বহন করছে।
গত ২৭ মে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে ১২ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু, তার চাচা সেলিম মোল্যাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবি জানায়, রোহিঙ্গা চাচা-ভাতিজার পেটে সাড়ে পাঁচ হাজার ইয়াবা বড়ি ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম মোল্যা ও শিশুটি ডিবিকে বলেছে, তারা উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। রেজোয়ান নামের এক ব্যক্তি ইয়াবা বহনের জন্য তাদের প্রস্তাব দেন। এর আগেও কয়েকবার ইয়াবা নিয়ে টেকনাফ থেকে তারা ঢাকায় এসেছিল। রেজোয়ান ৫০টি ইয়াবা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ক্যাপসুলের মতো একটি পোঁটলা বানিয়ে দিতেন তাদের। সেই পোঁটলা পানি দিয়ে গিলে ফেলত তারা। সেলিম এ রকম ৭০টি পোঁটলা এবং শিশুটি ৩০টি পোঁটলা গিলে ফেলে একধরনের ওষুধ খেত। এরপর বাসে বা ট্রেনে ঢাকায় চলে আসত। তাদের পথ দেখিয়ে দিতেন রেজোয়ানের তিন সহযোগী।
ডিবি জানায়, ইয়াবার পোঁটলা পেটের ভেতর থাকা অবস্থায় যাত্রাপথে কোনো খাবার বা পানি পান করতেন না সেলিম ও তাঁর ভাতিজা। প্রতি চালানের জন্য সেলিম পেতেন ১৫ হাজার টাকা। শিশুটি পেত ১০ হাজার টাকা। ইয়াবা পাচারকারী এই চক্রটির অন্যতম সমন্বয়ক মামুন শেখ। তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুন শেখ ডিবিকে জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর সহযোগী রেজোয়ান দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। রেজোয়ান কক্সবাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে স্থানীয় লোকজন এবং রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবা ঢাকায় পাঠান। মামুন ঢাকায় ইয়াবার চালান বুঝে নিতেন।
ডিবি জানায়, টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসার পর ইয়াবার বাহকদের নিজের বাসায় নিয়ে চালানগুলো বুঝে নিতেন মামুন। তাঁদের মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া বা কোষ্ঠ পরিষ্কারক ওষুধ খাওয়ানো হতো। এরপর পেট থেকে মলের সঙ্গে ইয়াবার পোঁটলা বের করা হতো।
ঢাকা মহানগর ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান সাংবাদিককে বলেন, এ রকম আরও রোহিঙ্গা শিশু ও নারী ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। পাকস্থলীতে বা শরীরের অন্য কোনো জায়গায় লুকিয়ে তারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পরিবহন করছে। রেজোয়ানের মতো কিছু লোক কক্সবাজারের হ্নীলা, উখিয়া, টেকনাফ—এসব এলাকায় ঘর ভাড়া করে ইয়াবা পরিবহনের লোক সংগ্রহ করেন। রেজোয়ানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।